Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

গারো পাহাড়ের সীমান্তে ভারতীয় বন্যহাতি আতঙ্কে জনসাধারণ দিশেহারা

ঝিনাইগাতী (শেরপুর) সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০২১, ৬:০৪ পিএম

ভারতীয় বন্যহাতির তান্ডবে শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় সংলগ্ন গ্রামগুলোর লোকজন আতংকগ্রস্ত ও দিশেহারা হয়ে পড়েছে। মাঠে ফসল না থাকায় কিছু দিন বন্যহাতির তান্ডব কম থাকলেও আবারো বেড়ে গিয়েছে। প্রতি বছরই আমন ধান পাকার সময়ে শুরু হয় বন্যহাতির তান্ডব। অব্যাহত তান্ডবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে শ্রীবরদীর সীমান্তবর্তী এলাকার হাজার হাজার বণি আদম সন্তান।

বন্যহাতি সারাদিন পাহাড়ের গহিন জঙ্গলে থাকে। সন্ধ্যায় পাহাড় থেকে বন্যহাতির পাল ধান ক্ষেতে নেমে তান্ডব চালায়। এছাড়া বন্যহাতির তান্ডবে সীমাšতবর্তী এলাকায় ফি-বছর ঘটছে হতাহতের ঘটনা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শত শত একর জমির পাকা ধান, সবজি ক্ষেত ও মৌসুমি ফসল। লনডভন্ড করা হচ্ছে বসতবাড়ি। তছনছ করছে বনাঞ্চলের বিপুল পরিমাণে গাছপালা। পা দিয়ে মাড়িয়ে নষ্ট করছে বিস্তীর্ণ আবাদি জমির ফসল। সীমান্ত এলাকার লোকজন রাত জেগে নিজেদের ফসল বাঁচানোর জন্য পাহারা দিচ্ছে এবং বিভিন্ন উপায়ে বন্যহাতিকে তাড়ানোর চেষ্টা করছে। প্রতিনিয়ত হাতির আক্রমণে সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামগুলোর মানুষের জীবন এখন মারত্মক হুমকির মুখে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, প্রায় ১৫ দিন ধরে বন্যহাতির দল শ্রীবরদী উপজেলার গহীণ পাহাড়ে অবস্থান করছে। নেয়াবাড়ির টিলা ও পার্শ্ববর্তী মালাকোচা গ্রামের কৃষক লাল চান, রহুল আমীন, মজনু মিয়া, আলাল মিয়া, আব্দুর বারিক, সাদা মিয়া, মনিরুল ইসলামসহ গারো পাহাড়ের অনেকের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, বন্যহাতির আক্রমণে আমাদের ধান ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। পরে বাধ্য হয়ে কাঁচা ধান কেটে বাড়ি নিয়ে গেছি। এছাড়াও অসংখ্য কৃষকের সবজি ক্ষেত নষ্ট করে ভারত থেকে নেমে আসা বন্য হাতির পাল।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, বন্যহাতির আক্রমণে বালিজুরি গ্রামের হামির উদ্দিন বাবুল মিয়া, খ্রিস্টানপাড়া গ্রামের স্টারসন, ঝুলগাঁও গ্রামের মজিবর, সিরাজ, হাতিবর গ্রামের বৃন্দাবন দাস, মাখনেরচর গ্রামের হাসান হাবিব বাঘারচর গ্রামের আবু তালেবসহ প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। কয়েকশ’ মানুষ আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজন পঙ্গুত্ব বরণ করে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। ঝুলগাঁও গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক, শাহজাহান, বালিজুড়ি গ্রামের আমিনুল, খাড়ামোড়া গ্রামের রফিকুল মিয়াসহ অনেকে জানান, বন্যহাতি ঢাকঢোল ফটকা ও আগুনকে ভয় করে। তাই এলাকাবাসী মশাল ও বন থেকে কুড়িয়ে আনা আবর্জনা জ্বালিয়ে, হৈ-হুলোড় করে বাঁশ দিয়ে ফটকা বানিয়ে ঢাকঢোল পিঠিয়ে হাতি তাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেন। কিন্তু অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে ওইসব কৌশলও করতে পারছে না সীমান্ত বাসি। ফলে বন্যহাতির পাল প্রায়ই বিনা প্রতিরোধে লোকালয়ে ঢুকে ক্ষেতের ফসলসহ জানমালের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে চলেছে।

আদিবাসী নেতা শ্রীবরদী উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান প্রাঞ্জল এম সাংমা বলেন, গ্রামবাসী বন্যহাতির উপদ্রপ থেকে বাঁচতে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে। এখনো স্থায়ী কোনো সমাধান হয়নি। এজন্য দিন দিন বন্যহাতির তাণ্ডবে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে।
বালিজুড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা সার্বক্ষণিক পাহারা দিচ্ছি যেন বন্যহাতি কোনো ক্ষতি করতে না পারে। বন্যহাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে নিয়ম অনুযায়ী সহায়তা প্রদান করা হবে। অপরদিকে কেউ যেন বন্যহাতির কোনো ক্ষতি করতে না পারে সেদিকেও খেয়াল রাখছি।
শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা আক্তার বলেন, আমরা বন্যহাতির হামলায় নিহত, আহত ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছি। এছাড়া স্থায়ীভাবে বন্যহাতির কবল থেকে রক্ষা পেতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ