Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রিয়নবী (সা.)-এর প্রিয়দর্শন দাড়ি মোবারক

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

হযরত ইবনে আবি হালা (রা.) বর্ণনা করেন, হুযুর আকরাম (সা.)-এর দাড়ি মোবারকের চুল খুব অধিক ছিল। কাযী আয়ায রহ. তার শিফা নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন, হুযুর (সা.)-এর দাড়ি মোবারক এত ঘন ছিল যে, তাঁর পবিত্র বক্ষ আচ্ছাদিত হয়ে যেত। দাড়ির দৈর্ঘ্য সম্পর্কে নির্দিষ্ট পরিমাপ কোনো কিতাবে পাওয়া যায় না। অবশ্য ওয়াযায়েবুন নবী নামক কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, হুযুর (সা.)-এর পবিত্র দাড়ি স্বাভাবিকভাবে চার আঙুল ছিল, তার কম নয়। তবে এ বর্ণনার সপক্ষে কোনো সনদ পাওয়া যায় না। তবে এটা ঠিক যে, দীর্ঘ দাড়ি সৌন্দর্যের প্রতীক; বিশেষ করে দাড়ি যখন ঘন হয়।

ওয়াযায়েবুন নবীর উদ্ধৃতি শিফা কিতাবের উদ্ধৃতির খেলাফ মনে হয়। আবার এটা তিরমিযী শরীফের বর্ণনারও পরিপন্থী। তিরমিযী শরীফে এসেছে, হুযুর আকরাম (সা.) দাড়ি মোবারকের চুল মুঠি দিয়ে ধরতেন এবং গোঁফ কর্তন করতেন আর বলতেন, যে ব্যক্তি গোঁফ কর্তন করে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।

বুখারী ও মুসলিম শরীফে এ মর্মে উক্ত হয়েছে যে, তোমরা মুশরিকদের আকৃতির সাথে বৈপরীত্য আনয়ন করো। অন্য এক বর্ণনায় আছে, মাজুসি- অর্থাৎ অগ্নিপূজকদের বিরুদ্ধাচরণ করো এবং খুব বেশি বিরুদ্ধাচরণ করো। দাড়ি লম্বা করো আর গোঁফ খাটো করো এবং এই কর্তন আচ্ছারকম করো। গোঁফ কর্তন করার ব্যাপারে ইমামগণের মাযহাব ভিন্ন ভিন্ন।

তবে কর্তনের ব্যাপারে কমপক্ষে এতটুকু করতে হবে, যেন ঠোঁটের কিনারা দেখা যায়। কারও মতে গোঁফ সম্পূর্ণ কামিয়ে ফেলা বেদআত; আবার কারও মতে সুন্নাত। হাদীস শরীফে এসেছে, হুযুর পাক (সা.) স্বীয় গোঁফ মোবারক মেসওয়াক দিয়ে উঠিয়ে ধরতেন- এটা সম্ভবত বিশেষ সময়ের জন্য। হানাফী আলেমগণের মত হচ্ছে, চোখের ভুরু-পরিমাণ রেখে দেওয়া।

তবে মুজাহিদগণের বেলায় এর বিধান স্বতন্ত্র। তাদের জন্য মোস্তাহাব হচ্ছে, গোঁফ দু’পাশে লম্বা করে রাখা, যা দেখে দুশমনদের মনে ভীতির সঞ্চার হয়। তবে গোঁফ লম্বা করতে যেয়ে এতটুকু করা যাবে না, যাতে ঠোঁটের প্রান্ত আচ্ছাদিত হয়ে যায়। এরূপ বর্ণনা করা হয়েছে মাতালেবুল মুমিনীন কিতাবে। গোঁফের দু’পাশের চুলকে লম্বা করে রাখতেন। এরূপ লম্বা করার কারণে গোঁফ দিয়ে মুখ ঢেকে যেত না এবং আহারের সময় আহার্য বস্তুও তা স্পর্শ করত না।

দাড়ি লম্বা রাখার পরিসীমা সম্পর্কেও মতানৈক্য রয়েছে। হানাফী মাযহাব অনুসারে চার আঙুল লম্বা রাখতে হবে। তবে তার অর্থ হচ্ছে, এর চেয়ে কম যেন না হয়, এর চেয়ে বড় হলে ক্ষতি নেই। কিন্তু অন্য এক বর্ণনা অনুসারে চার আঙুলের অধিক হলে তা কর্তন করা ওয়াজিব। ওলামায়ে কেরাম বলেন, ওলামা ও মাশায়েখগণ এর চেয়ে বেশি লম্বা রাখা বা কর্তন করা সম্পর্কে নিম্নোক্ত দু’খানি হাদীস দলিলস্বরূপ উল্লেখ করেন, যা বুখারী শরীফের কিতাবুল লিবাসের শেষের দিকে উল্লিখিত হয়েছে- যেমন, হযরত ইবনে ওমর (রা.) তার দাড়িকে মুষ্টি দিয়ে ধরতেন এবং মুষ্টির বাইরের অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন।

হযরত ইবনে ওমর (রা.) যখন হজ বা ওমরা করতেন, তখন তার দাড়িকে মুষ্টিবদ্ধ করতেন এবং তার অতিরিক্ত যা থাকত, তা কর্তন করে ফেলতেন। আবার হযরত নাফে (রা.) হযরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, মোচ অতিমাত্রায় কর্তন করা এবং দাড়ি স্বাভাবিক অবস্থায় ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তা হলে প্রশ্ন জাগে, হযরত ইবনে ওমর (রা.) মুষ্টির অতিরিক্তটুকু কর্তন করতেন কেন? অথচ তিনিই উক্ত হাদীসের বর্ণনাকারী! হাদীস ব্যাখ্যাকারগণ তার জবাব দেন এভাবে- হযরত ইবনে ওমর (রা.) যে দাড়ি কর্তন করতেন, তা হজ ও ওমরার সময়ের জন্য খাস ছিল। অন্য সময় দাড়ি লম্বা রাখতেন। এ ব্যাপারে অনারবদের ন্যায় (দাড়ি কর্তন করা) আমল করতে নিষেধ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সালফে সালেহীনদের বিভিন্ন আমল ছিল।



 

Show all comments
  • সবুজ ৩ নভেম্বর, ২০২১, ১২:২৪ এএম says : 0
    খুবই প্রয়োজনীয় কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন। লেখককে ধন্যবাদ জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply
  • গিয়াস উদ্দীন ফোরকান ৩ নভেম্বর, ২০২১, ৬:১৭ এএম says : 0
    হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে পৃথিবীতে আসা সব নবী ও রাসুলের মুখে দাড়ি ছিল। মানবতার নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মুখেও ছিল দাড়ির সৌন্দর্য। বিখ্যাত হাদিসগ্রন্থ শামায়েলে তিরমিজিসহ হাদিসের কিতাবে এসেছে, রাসুল (সা.)-এর দাড়ি মোবারক ছিল কালো। গভীর, ঘন ও প্রশস্ত। নবীজির বুকের উপরের অংশ দাড়িতে ভরে যেত।
    Total Reply(0) Reply
  • টুটুল ৩ নভেম্বর, ২০২১, ৬:১৮ এএম says : 0
    ইসলামী সভ্যতার অন্যতম নিদর্শন দাড়ি। পুরুষের বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্যের প্রতীক। দাড়ি রাখার মাধ্যমে পুরুষের মুখের প্রকৃত সৌন্দর্য ফুটে ওঠে।
    Total Reply(0) Reply
  • রায়হান ইসলাম ৩ নভেম্বর, ২০২১, ৬:১৮ এএম says : 0
    দাড়ি শুধু পুরুষের বীরত্বের পরিচয়ই বহন করে না বরং ইহা আল্লাহর ভয়ের অন্যতম নিদর্শনও বটে। দাড়ি রাখা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি বিশেষ সুন্নাত।
    Total Reply(0) Reply
  • এনায়েতুল্লাহ ৩ নভেম্বর, ২০২১, ৬:১৯ এএম says : 0
    এটি ইসলামের বিশেষ চিহ্ন, অন্যতম নিদর্শন, নবি-রাসুলগণের তরিকা ও ইসলামী চিন্তা-চেতনার দিক থেকে দাড়ি রাখার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন