Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

হাল যমানার মানব শ্রেণি

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ১ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

আমরা খৃস্টীয় একবিংশ শতাব্দীর এক উত্তপ্ত পৈঠায় বা সিড়িতে দাঁড়িয়ে আছি। এখানে অবস্থানরত অবস্থায় আমরা যা পর্যবেক্ষণ করছি, তা হলো এক আজব বা বিস্ময়কর অবস্থায় দুনিয়ার মানুষ গা ভাসিয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে মানুষ বাহ্যিক বিষয়ে উন্নয়ন করা, শহর-বন্দর, বাড়ী-ঘর, সুন্দর ও সুসজ্জিত করা এবং রাস্তাঘাট, প্রমোদ উদ্যান ও বিলাস-ব্যসনের ব্যাপক আয়োজন করাতে এত অধিক যত্নবান ও মনোযোগী হয়ে পড়েছে যে, এছাড়া আর কিছুই তাদের নজরে পড়ছে না।

তারা দৃশ্যত বিষয়াবলীকে বিভিন্ন প্রকার রূপসজ্জা ও অলঙ্করণ সামগ্রী দ্বারা সজ্জিত ও সৌন্দর্যবর্ধনে এতখানি আগ্রহী যে, এর জন্য তারা বেমালুম মরিয়া হয়ে কাজ করতেও কুণ্ঠাবোধ করছে না। শুধু তা-ই নয়, পৃথিবীর বহিরাবরণকে সুন্দর ও মনোহর করার জন্য তারা কত যে সময়, কত যে চেষ্টা, কত যে শক্তি ব্যয় করে চলছে তার ইয়াত্তা নেই। এমন অনেক মানুষ আছে যারা বাহ্যিক সৌন্দর্য এবং তার শোভা প্রকাশ করা ছাড়া তাদের মধ্যে অন্য কোনো আগ্রহই দেখা যায় না।

তাদের হাতে এমন সব অস্ত্র-শস্ত্র, সাজ-সরঞ্জাম, গোলা-বারূদ ও নভোযান আছে, যার সাহায্যে গোটা পৃথিবীকে পাল্টে দেয়া কোনো ব্যাপারই নয়। এজন্য হম্বি-তম্বিরও কমতি নেই। কমতি নেই মিথ্যাচার ও জালিয়াতির। আসল প্রতারণার সংজ্ঞা তাদের মাঝেই খুঁজে পাওয়া যায়। এই শ্রেণির লোকদের মুখোশ খুলে দেয়া হয়েছে আল কোরআনে।

পরম করুণাময় আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত তাদের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে তাদের সম্পর্কে অবহিত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে : হে রাসূল! ‘তুমি যখন (উল্লিখিত শ্রেণির) লোকদের দিকে তাকাও, তখন তাদের দেহাকৃতি তোমার নিকট প্রীতিকর মনে হয়, এবং তারা যখন কথা বলে, তখন তুমি সাগ্রহে তাদের কথা শ্রবণ কর, যেন তারা দেয়ালে ঠেকানো কাঠের স্তম্ভ সদৃশ। তারা যে কোনো শোরগোলকে মনে করে তাদের বিরুদ্ধে। তারাই প্রকৃত শত্রু। অতএব তাদের সম্পর্কে সতর্ক হও। আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করুণ। বিভ্রান্ত হয়ে তারা কোথায় চলছে? (সূরা মুনাফিকুন : আয়াত-৪)।

সুতরাং এ হলো সে সকল জাতি-গোষ্ঠি যারা দৃশ্যত : সুন্দর ও মনোহর। তাদের কথায় প্রতারণার খই ফুটে। আচার আচরণে চিত্ত বিমোহিত হয়। তাদের আবিষ্কার ও উদ্ভাবনী শক্তির কাছে সকলেই হার মানে। আসলে তারা দেয়ালে ঠেকানো কাঠের স্তম্ভ সদৃশ। যার মধ্যে কোনো উপকারিতা নেই। তাদের যাবতীয় চিত্তাকর্ষক রূপ রং, দৃশ্য ও কর্মকাণ্ডের কোনোই মূল্য নেই। এতে কোনোই উপকারিতা নেই। তাদের থেকে এমন সব অপরাধ ও অন্যায় বিস্তার লাভ করে যার আসল, রূপ সহজে অনুভব করা যায় না বা বুঝেও আসে না।

দীর্ঘকাল অতিবাহিত হওয়ার পর তাদের পূর্ব কৃত অপরাধের কথা নিজেরাই জোর গলায় প্রচার করতে থাকে। কালের খাতায় ইতিহাসের পাতায় এর ভুরি ভুরি প্রমাণ পাওয়া যায়। কারণ তাদের মন মানসিকতা ও অন্তর নষ্ট, কুৎসিত ও নোংরা। এমতাবস্থায় তাদের বাহ্যিক সৌন্দর্য, চাকচিক্য, জৌলুশ ও উন্নয়ন পৃথিবীবাসীর কোনোই উপকারে আসবে না। কারণ এর মধ্যে পবিত্রতার কোনো পরশ নেই। যা কিছু আছে তা’ নাপাকীর দুর্গন্ধে ভরপুর। এমনটি কোনো মুমিনের পছন্দনীয় হতে পারে না।

মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত সে সকল কাওম বা জাতির পরিণামের কথা খোলাসাভাবেই উচ্চারণ করেছেন, যাদেরকে তাদের বাহ্যিক সৌন্দর্য, শক্তি ও অবস্থার উন্নয়ন প্রতারিত করেছিল এবং তারা তাদের এই অবস্থাকে পৃথিবীতে টিকে থাকার হাতিয়ার বলে গণ্য করেছিল। এতদ সম্পর্কে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘তাদের পূর্বে আমি বহু মানব গোষ্ঠিকে ধ্বংস করেছি, যারা তাদের অপেক্ষা সম্পদ, শক্তি ও বাহ্যিক দৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠ ছিল।’ (সূরা মারয়াম : আয়াত-৭৪)।

এই আয়াতে কারীমায় আল্লাহ তায়ালা খোলাখুলিভাবে অবহিত করেছেন যে, তিনি এমন অনেক জাতিকে পূর্বে ধ্বংস করেছেন, যারা আকৃতিতে উত্তম এবং অর্থ-বিত্তে অধিক সমৃদ্ধ, বাহ্যিক গঠনে ছিল সুন্দর ও মনোহর। তারা যে সকল সম্পদ ও সমৃদ্ধি দ্বারা ঐশ্চর্য মণ্ডিত ছিল, তা তাদের কোনোই উপকারে আসেনি। তাদের স্থায়ীত্বকে দীর্ঘায়িত করতে পারেনি এবং তাদের ধ্বংসকেও রোধ করতে পারেনি। ঠিক এমনটিই হাল যামানার আল্লাহ ও তাঁর রাসূলদ্রোহী পরাশক্তির অধিকারীদের ভাগ্যে জুটবে।

আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ-করেনি ও দেখেনি তাদের পূর্ববর্তীদের কি পরিণাম হয়েছিল? পৃথিবীতে তারা ছিল এদের অপেক্ষা সংখ্যায় অধিক এবং শক্তিতে ও কীর্তিতে অধিক প্রবল। তারা যা করত তা তাদের কোনো কাজে আসেনি। (সূরা গাফির (মোমিন) আয়াত-৮২)।

তাই একথা সহজেই অনুমাণ করা যায় যে, আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় রাসূল (সা.)-এর প্রতি অবিশ্বাসী পরা শক্তির অধিকারীদের ভরাডুবী হওয়ার সময় একান্তই ঘনিয়ে এসেছে। আল্লাহু আকবার।



 

Show all comments
  • Jahidul Islam ১ নভেম্বর, ২০২১, ৩:৪৫ এএম says : 0
    দ্বীন মানা-না মানার বিচারে বর্তমানে মুসলমানদেরকে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। অল্প কিছু মানুষ এমন আছেন, যাদের যিন্দেগী প্রকৃতপক্ষে মুসলমানের যিন্দেগী। অর্থাৎ তাঁদের অন্তরে ঈমান আছে। ঈমানের কারণে আখিরাতের ফিকির আছে। আর এ কারণে তারা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ নিষেধ যথাযথভাবে মেনে চলেন। কখনো কোনো নাফরমানী হয়ে গেলে আল্লাহর কাছে তাওবা-ইস্তিগফার করেন। তাঁদের জীবন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে ওফাদারির জীবন।
    Total Reply(0) Reply
  • Md.Rashadujaman ১ নভেম্বর, ২০২১, ৩:৪৬ এএম says : 0
    বিপরীতে বিপুল সংখ্যক মুসলমান এমন আছেন, যারা কেবল বংশগত মুসলমান। ইসলামের সাথে না তাদের জ্ঞানগত সম্পর্ক আছে, না কর্মগত। না তাদের এই চিন্তা আছে যে, আমার কাছে ইসলামের দাবি কী, আর না বাস্তব জীবনে ইসলামের বিধান মোতাবেক চলার সংকল্প আছে।
    Total Reply(0) Reply
  • নিজাম ১ নভেম্বর, ২০২১, ৩:৪৭ এএম says : 0
    আমি আপনাদেরকে আরো কয়েকটি পরামর্শ দিব। তাওবার সাথে সাথে এমন কিছু কাজ নিয়মিত করুন, যা আপনাকে তাওবার উপর অটল থাকতে সহায়তা করবে এবং আল্লাহর সাথে আপনার তাআল্লুক দিন দিন বাড়তে থাকবে।
    Total Reply(0) Reply
  • তায়েফুর রহমান ১ নভেম্বর, ২০২১, ৩:৪৭ এএম says : 0
    খুবই জ্ঞানগর্ভ আলোচনা।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Sirajullah, M.D. ১ নভেম্বর, ২০২১, ৬:৫১ এএম says : 0
    We face this question everyday and can not answer with our very limited knowledge of Islam. Question is what will happen to millions of people who did not hear about Prophet Muhammad (SA) and his prophethood. Even in Bangladesh people did not hear about the prophethood of Muhammad (SA) until 600 years after his death. What would happen to these fore fathers of ours. They lived in the period of Muhammad (SA) ‘s Nobuyat but did not hear his name even. Same is true for the millions of people who lived in American Continents. Next question comes the Bush men in Andaman, Australia, New zealand and Amazon (They stay naked) who were not visited by any body from Tabligee Jamat. Will they go to heaven ? or get burnt in Hell. Also What will happen to Hijras. Will any body with better religious knowledge please write an article on this subject for our education. Islam says education is mandatory for all the Muslims and Muslimas.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন