Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বপ্ন লাশ হয়ে ফিরলো বাড়ি

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০১ এএম | আপডেট : ৮:৩৪ এএম, ২৯ অক্টোবর, ২০২১

নিখোঁজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর লাশ মিলল রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে। গত বুধবার রাত দেড়টার দিকে কর্ণফুলী আবাসিক হোটেলের দরজা ভেঙে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশের পাশে পড়ে ছিল সুইসাইডাল নোট। ওই ছাত্রের নাম আদনান সাকিব। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। মাস্টার্স করছিলেন অন্য একটি বিভাগে। থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলে। তার গ্রামের বাড়ি নীলফামারীর ডিমলার সোনাখুলিতে। বাবার নাম আবদুল মালেক।

গত মঙ্গলবার থেকে সাকিবকে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে বুধবার তার স্ত্রী শাহবাগ থানায় জিডি করেন। পরে পুলিশ মোবাইল ট্র্যাকিং করে হোটেল কর্নফুলীর ১০৭ নম্বর কক্ষ থেকে বুধবার রাত দেড়টায় লাশ উদ্ধার করে। পুলিশ ধারণা করছে সাকিব আত্মহত্যা করেছেন। মৃত্যুর আগে তিনি সুইসাইডাল নোট রেখে যান। সেখানে তিনি লেখেন— তার আত্মহত্যার জন্য কেউ দায়ী নন। পুলিশ কর্ণফুলী হোটেরের রেজিস্ট্রার খাতা ঘেঁটে দেখেন, গত মঙ্গলবার ওই রুম ভাড়া নেন সাকিব।

শাহবাগ থানার এসআই পলাশ সাহা বলেন, গত বুধবার রাত ৯টায় সাকিবের স্ত্রী নুসরাত আফরিন থানায় এসে জানান তার স্বামীকে দুদিন ধরে পাওয়া যাচ্ছে না। পরশু দিন দুপুরে শেষ কথা হয়, এর পর আর পাওয়া যায়নি। তিনি শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং- ১৯৫৪) করেন। আমরা সাকিবের মোবাইলের লোকেশন ট্র্যাকিং করি। সেখানে দেখা যায়, সেগুনবাগিচা এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে তার অবস্থান দেখাচ্ছে। পাশের কর্ণফুলী আবাসিক হোটেলে খোঁজ নিলে তার সন্ধান মেলে। আমরা ১০৭ নম্বর কক্ষে গিয়ে তাকে ডাকাডাকি করলেও তিনি দরজা খোলেননি। পরে দরজা ভেঙে দেখি তিনি ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছেন।

পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, সাকিব একটি সুইসাইড নোট লিখে গেছে। সেখানে লিখেছেন— তার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নন। তিনি স্ত্রীকে ভালো বলে গেছেন। তার স্ত্রীকে দোষারোপ না করার কথা লিখেছেন। সুইসাইড নোটে ১২ বছরের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তার কাছে ১ সেকেন্ড ১ বছরের মতো মনে হয় বলেও লেখা আছে। চাকরি না পাওয়ার হতাশা থেকে সাকিব আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন বলে ধারণা তার সহপাঠী ও পুলিশের।

এদিকে, গতকাল বিকালে আদনান সাকিবের ময়নাতদন্ত শেষ হয়। পরে লাশ নীলফামারীর ডিমলা থানার নিজ গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আজিজুর রহমান বলেন, আমাদের শিক্ষার্থী আদনান সাকিবের ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। এখানে তার বড় ভাই মাহে আলম লাশ গ্রহণ করেছেন। পরে লাশ একটি ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্স নীলফামারীতে পাঠানো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী ইনকিলাবকে বলেন, আদনানের বিষয়টি বুধবার রাত দুটার দিকে আমাদেরকে অবহিত করেন ডিএমপি থানার কমিশনার। এই বেদনাদায়ক ঘটনাটি শুনার পর তাৎক্ষণিক আমরা দুজন হাউজ টিউটরসহ আমাদের প্রক্টরিয়াল টিমের দুজন সদস্যকে ঘটনাস্থলে পাঠাই। পরে পুলিশ সূত্রে আমরা জানতে পারি যে, তার স্ত্রীর অভিযোগের সূত্র ধরে পুলিশ আদনানের মোবাইল ট্র্যাকিং করে একটি হোটেলে তাকে খুঁজে পায় এবং বর্ণনার সাথে সবকিছু মিল পায় পুলিশ। সে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র এবং শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ৩০০৫ নম্বর রুমের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিল। ঘটনার পরে আমরা জানতে পারি সে বিবাহিত ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এরকম বেদনাদায়ক ঘটনার খবরগুলো আমাদের কাছে সংঘটিত হওয়ার আগে পৌঁছায় না, ঘটনা ঘটে গেলে আমরা তথ্য পাই। তিনি বলেন, আমরা বরাবরই চেষ্টা করি এ ধরনের ঘটনা ঘটার আগেই যেন জানতে পারি। তাতে অন্তত আমরা তাকে কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে পারতাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এ ধরনের কিছু ঘটার আগে আমরা জানতে পারি না। শিক্ষার্থীদের পরিবার আমাদের তা জানায় না।

বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রুহুল আমিন ইনকিলাবকে বলেন, আদনানের এমন হঠাৎ প্রস্থানে আমরা গভীর শোকাহত। তিনি বলেন, দেড় মাস আগেও আমরা তার সাথে কথা বলেছি এবং তাকে আরো উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার কথাও আমরা ভেবে রেখেছি। কিন্তু হঠাৎ করেই এসব হয়ে গেল। আমরা কন্টিনিউয়াসলি তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ রেখেছিলাম। তার অর্থনৈতিক একটু সমস্যা ছিল। এবং মানসিক দিক থেকেও তাকে অনেকটা অস্বাভাবিক মনে হতো। তাই আমরা ডিপার্টমেন্ট থেকে তাকে কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করার কথাও ভেবেছিলাম। কিন্তু হল খোলার পর থেকে আমরা তাকে ওরকমভাবে পাইনি। বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে সহপাঠী পুস্প রহমান বলেন, একই সেশন,একই বয়সী একটা ছেলে নাই ভাবতেই কেমন জানি লাগে! আশার বোঝা,ব্যর্থতার বোঝা চাপাতে পারে সবাই,কিন্তু সেই চাপ দেয়ার সাথে একটু সহযোগিতা দেয়ার মানুষ একটাও পাশে নাই। শাহনাজ জুমা নামে অপর সহপাঠী বলেন, এত হাসিখুশী একটা ছেলের আত্মহত্যা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। পুলিশ সূত্র থেকে জানানো হয়, প্রাথমিকভাবে এটা আত্মহত্যা মনে হলেও বিস্তারিত তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে

 



 

Show all comments
  • Johirul Islam Kamal ২৯ অক্টোবর, ২০২১, ১:১৯ এএম says : 0
    কেউ নিরাপদ নয়,কোথাও নয় যদি কেউ মেরে থাকে, তাহলে তদন্তপূর্বক সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হোক
    Total Reply(0) Reply
  • Bijoy Mojumder ২৯ অক্টোবর, ২০২১, ১:২০ এএম says : 0
    কি শুরু হয়েছে। ভার্সিটির শিক্ষার্থীগুলো মরতেছে কেন?
    Total Reply(0) Reply
  • Tomal Roy ২৯ অক্টোবর, ২০২১, ১:২০ এএম says : 0
    কি শুরু হলো দেশে দিন দিন মানুষ অমানুষ হয়ে যাচ্ছে মানুষের জীবনের কোন মুল্য নেই কারোর কাছে ।
    Total Reply(0) Reply
  • Apon Ahmed ২৯ অক্টোবর, ২০২১, ১:২০ এএম says : 0
    চারদিকে শুধুই নৃশংসতা, নিরাপত্তা হীনতা
    Total Reply(0) Reply
  • এস এম মহসিন ২৯ অক্টোবর, ২০২১, ১:২০ এএম says : 0
    সামান্য হতাশা থেকে আত্মঘাতী!!! এ জাতিকে নের্তৃত্ব দিবে কারা???
    Total Reply(0) Reply
  • Afroja Chowdhury ২৯ অক্টোবর, ২০২১, ১:২১ এএম says : 0
    এভাবে জীবন শেষ করে দিয়ে কতজন যে শেষ হয়ে যাচ্ছে খুব ই দুঃখ জনক ঢাকা বিশব্বিদ্যালয়ের ছাএ হয়ে এভাবে নিজেকে কেন শেষ করে দিচ্ছে নিশ্চিত কোন কারণ তো আছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Azad mullah ২৯ অক্টোবর, ২০২১, ৭:৩৭ এএম says : 0
    বড়ই দুঃখজনক পুলিশ যেন ভালো করে তদন্ত করে দেশের আইনের শাসন নেই তাই যে কোনো একটা হতে পারে আললাহ যেন মাফ করে দেন আমিন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাড়ি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ