বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় বসবাসকারী পাহাড়ি অধিবাসীরা বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীতে বিভক্ত। তাদের খাদ্য, পোশাক ও জীবন যাপন প্রণালীতেও রয়েছে ভিন্নতা। তবে সব পাহাড়ির একটি জিনিসে মিল খুব বেশি, তা হলো তাদের তৈরি ঘর। যেগুলোকে তারা মাচাং ঘর বলে। আর এ ঘরগুলো তৈরি হয় ছন (এক ধরনের খড়) দিয়ে। ছনের মাচাংগুলো দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি শীতল, আকর্ষণীয় ও আরামদায়ক। যদিও আধুনিকতার ছোঁয়ায় ছণের তৈরি ঘরের প্রবণতা একটু কমে গেছে। তবে খাগড়াছড়ি পার্বত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলো পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে ছন দিয়ে মাচাং তৈরি করে এখনো বসবাস করছে।
জানা গেছে, আদিকাল থেকে পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলো বন্য পশু ও জীবজন্তুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে মাচাং ঘরে বসবাস করত। মাচাংগুলো সাধারণত মাটি থেকে ৫-৬ ফুট উঁচু করে তৈরি হতো। আর মাচাং তৈরির একমাত্র উপকরণ ছিল পাহাড়ি ছন ও বাঁশ। তাই একসময় তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে ব্যাপক ছনের কদর ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তন ও জুম চাষের কারণে ছনের উৎপাদন কমে যাবার কারনে হুমকিতে পড়েছে পাহাড়ি ছনের ঘর।
জেলার পানছড়ির ছনটিলার বাসিন্দা চাইথং মারমা এর সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, আজকাল জঙ্গলে বাঁশ-গাছ পাওয়া যায় না। বাজারে কিনতে পাওয়া বাঁশের দাম অনেক বেশি, তাই এখন আর মাচাং ঘরের দেখা মেলেনা।
সম্পূর্ণ বাঁশ, গাছ আর ছন দিয়েই তৈরি হতো মাচাং ঘর। ঘরের মূল খুঁটিগুলো হয় গাছ দিয়ে। আবার অনেক ক্ষেত্রে বড় বড় বাঁশের খুঁটি দিয়েও তৈরি হয়ে থাকে। মাচাংয়ের সাথে খুঁটির যে সন্ধি বা সংযোগ রয়েছে, সেগুলো বাঁধাই করা হতো বাঁশের বেত দিয়ে। অল্প বয়সী কঁচি বাঁশ হতে তৈরি করা হয় এই বেত। বাড়ির মাচাংকে ধরে রাখতে মাচাংয়ের সমান্তরাল বাঁশের সাথে খুঁটির প্রত্যেকটি সন্ধিতে মাটি থেকে দেওয়া হতো ঠেঁস। কাঠ, বাঁশ আর ছন দিয়ে তৈরি মাচাং ঘরের তেমন দেখা মেলে না। বাঁশ, বেত আর খুঁটির দাম বেশি হওয়ায় মাচাং ঘরের প্রতি তেমন আগ্রহ নেই আদিবাসীদের। যার কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী এই ঘর ।
স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, কিছু অসাধু বন খেকোদের কারণের পাহাড়ে এখন আর আগের মত ছন, বাঁশ, গাছ পাওয়া যায় না। কারণ বন খেকোরা বড় বড় গাছ কাটার কারণে পরিবেশ একদিকে দূষিত হচ্ছে আরেক দিকে হুমকিতে মোকাবিলা করতে হচ্ছে সহজসরল বসবাসকারী পাহাড়ী সম্প্রদায় গুলোকে। ঐতিহ্যবাহী মাচাং ঘরকে টিকে রাখতে হলে সরকারী-বেসরকারীভাবে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
প্রতিবেদক প্রশ্ন করে বলেন, পাহাড়ে জুম পুড়িয়ে দিলে ছন,বাশ,গাছ হারিয়ে যাচ্ছে কি? এমন প্রশ্নের তারা উত্তরে জানান, পাহাড়ের বেঁচে থাকার প্রধান উৎস জুম চাষ। আপনি দেখুন ছনের বাগানগুলো বয়ষ্কর হয়ে ঠিকিই কিন্তু মরে যায়। ছনের বাগান গুলোকে আগুনের পুড়িয়ে দিলে তারা আবার সপ্তাহ দু’য়েক মধ্যে আরো বেশি সতেজ হয়ে গজিয়ে ওঠে। ঠিক তেমনি পাহাড়িরা জুমের জন্যে জঙ্গল কর্তন করলেও বড় বড় গাছ কিংবা প্রয়োজনীয় গাছ কর্তন করি না। সাথে যে বাশগুলো আমরা জুমের জন্য কর্তন করি সেগুলো মাচাং ঘরের প্রয়োজনে সুন্দর করে বেঁধে সন্ধ্যায় বাড়িতে নিয়ে আসি। তবুও পাহাড়ে জুম চাষকে কেন্দ্র করে অনেকে দুষছে।
এদিকে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা জানান, আদিকাল থেকে পাহাড়িরা মাচাং ঘরে বসবাস করে আসছে। আগে আমরা পাহাড়ে যেতে ভয় পেতাম কারণ যেদিকে দেখি সেদিকে বড় বড় বন। কিছু স্থানীয় ব্যক্তিদের কর্তৃক অসাধু বন খেকোদের কারণে পাহাড়ে বৈচিত্র্যময় বনগুলিই উজার হয়ে গেছে। কিছু সেগুন গাছের বাগান আর কয়েকটা গামারি গাছের বাগানের যোট পারমিট দেখিয়ে বনগুলোকে উজার করে দিচ্ছে। এতে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ,ছন,গাছ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।