নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
এ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা কে কে? সবাই বাবর আজমের নাম বলবেন। কেউবা বলবেন শাহিন শাহ আফ্রিদির কথাও। শোয়েব মালিক কিংবা মোহাম্মদ হাফিজের অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গও আসবে। পাকিস্তানের ক্রিকেট যাঁরা নিয়মিত অনুসরণ করেন, তারা মোহাম্মদ রিজওয়ান, আসিফ আলি কিংবা ইমাদ ওয়াসিমের কথাও বলবেন। তবে রিজওয়ান প্রথম ম্যাচ থেকেই যেমন ফর্মে আছেন, তাতে শুধু পাকিস্তানের ক্রিকেট অনুসরণকারীই নন, যে কেউই পাকিস্তানের অন্যতম শক্তির জায়গা হিসেবে বাবর-শাহিনদের পাশাপাশি রিজওয়ানের নামটাও তুলবেন।
ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম আনুষ্ঠানিক সংস্করণ হিসেবে ২০০৫ সালে যখন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সূচনা হয়, তখন থেকেই এই ফরম্যাটের অপ্রতিরোধ্য দলগুলোর মধ্যে অন্যতম পাকিস্তান। ২০০৭ সাল থেকে শুরু হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম চার সংস্করণের নকআউট পর্ব খেলেছে দলটা, ২০০৯ সালে ইউনিস খানের নেতৃত্বে তো বিশ্বকাপই জিতে নিল। এবারও ফেবারিটের তকমা তাদের গায়ে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপাপ্রত্যাশী দলগুলোর একটি পাকিস্তান।
সব সময় পাকিস্তানকে তাদের বিশ্বসেরা বোলিং লাইনআপের জন্য শিরোপাপ্রত্যাশী বলে ধরে নেওয়া হতো। তাদের বোলিং লাইনআপ এবারও সেরাদের কাতারেই থাকবে, কিন্তু এবার ব্যাটিং শক্তিও হেলাফেলা করার মতো নয় তাঁদের। আর ওই শক্তির জায়গাতেই বাবর-মালিকদের পাশাপাশি পাকিস্তানিদের আশা দিচ্ছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান।
রিজওয়ানের উত্থানের কথা তরুণ প্রজন্মের কাছে একটি অনুপ্রেরণাদায়ক গল্পই বলা যায়। টি-টোয়েন্টিতে ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানের অভিষেক হয় বাংলাদেশের বিপক্ষে, ২০১৫ সালে। খাইবার পাখতুনখাওয়া থেকে উঠে আসা এই খেলোয়াড় পরবর্তী দশটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ১০০ স্ট্রাইক রেটে করেন মাত্র ১০৬ রান, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের খেলার জন্য মোটেও যথেষ্ট নয়। অনেকেই রিজওয়ানের ক্যারিয়ারের শেষ দেখে নিয়েছিলেন তখন।
যেহেতু ওই সময় পাকিস্তান দলের অধিনায়ক ছিলেন উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান সরফরাজ খান, ফলে ক্যারিয়ারের প্রথম চার বছর তেমন ম্যাচ খেলা হয়নি রিজওয়ানের। ২০১৯ সালে পাকিস্তান যখন ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শোচনীয়ভাবে হেরে গেল, পিসিবি তখন সরফরাজকে দল থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে দরজা খুলে যায় রিজওয়ানের। দলে সুযোগ পাওয়া নিয়ে আর কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি তাঁকে। কিন্তু সুদিন বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি রিজওয়ানের। অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে ব্যাটিং-বিরুদ্ধ কন্ডিশনে তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে মাত্র ৪৫ রান করেন। স্ট্রাইক রেট ছিল ভয়াবহ, ১০০ থেকেও কম। সিরিজ হারে পাকিস্তান।
সেই মৌসুমে রিজওয়ান পাকিস্তান সুপার লিগেও (পিএসএল) তেমন সুযোগ পাননি। করাচি কিংসের ম‚ল উইকেটকিপার না হওয়ায় মাত্র অল্প কয়েকটি ম্যাচ খেলা হয় রিজওয়ানের। টি-টোয়েন্টিতে রিজওয়ান বড় শট খেলতে পারেন না, এমন ধারণা হয়ে গিয়েছিল করাচির মধ্যে। এমন ধারণার জন্য তখন সংবাদ সম্মেলনে নিজের অসন্তুষ্টির কথাও জানিয়েছিলেন রিজওয়ান। এরপর আসে জাতীয় লিগ টি-টোয়েন্টি। এই টুর্নামেন্টে রিজওয়ান ছিলেন খাইবার পাখতুনখাওয়ার অধিনায়ক। এবার দলীয় কোচ আবদুল রাজ্জাক লিগের শুরুতে তার ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন আনেন, তাঁকে টপ অর্ডারে ব্যাট করতে পাঠিয়ে দেন। টুর্নামেন্টে ১২৯ স্ট্রাইক রেটে রান করার পাশাপাশি তিনটি ফিফটি করেন তিনি।
জাতীয় লিগের পরপরই নিউজিল্যান্ড সফরে যায় পাকিস্তান। এই সিরিজই ম‚লত রিজওয়ানের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। আঙুলে চোট পাওয়ার কারণে টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে ছিটকে যান নিয়মিত অধিনায়ক বাবর আজম এবং অধিনায়কের দায়িত্ব রিজওয়ানের ঘাড়ে এসে বর্তায়।
সিরিজের কয়েক দিন আগেই প্রধান কোচ মিকি আর্থার এবং অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পান। স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তান এই পরিবর্তনের সঙ্গে তখনো পুরোপুরি মানিয়ে নিতে পারেনি। এই অবস্থায় হুট করে নিউজিল্যান্ডের মতো কঠিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া রিজওয়ানের জন্য বিশাল এক চ্যালেঞ্জের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু রিজওয়ান এই সুযোগ লুফে নেন, নিজেকে ওপেনিংয়ে নিয়ে আসেন। প্রথম দুই ম্যাচে খুব ভালো শুরু করেন। আলো ছড়ান তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে, ৫৯ বলে ৮৯ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হন। রিজওয়ানের অবিশ্বাস্য যাত্রার শুরুটা এখানেই।
ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে নিজের দুর্দান্ত ফর্ম ধরে রাখেন রিজওয়ান। প্রথম পাকিস্তানি উইকেটকিপার হিসেবে কোনো টি-টোয়েন্টি ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন তিনি। সে ম্যাচে সাতটি ছক্কা হাঁকান, কিন্তু এসব ছাড়িয়ে সবার মুখে তার স্পিন বল সামলানোর দক্ষতার কথা ছড়িয়ে পড়ে। রিজওয়ানের খেলা দেখে সেই মৌসুমের পিএসএলে তাঁকে দলে ভেড়ায় মুলতান সুলতানস ফ্র্যাঞ্চাইজি। সেখানে তাঁকে অধিনায়কত্বের দায়িত্বও দেওয়া হয়। ব্যাট হাতে রিজওয়ান এবার চোখধাঁধানো পারফরম্যান্স করে সংগ্রহ করেন ৫০০ রান, টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন। মুলতানও তার অধিনায়কত্বে প্রথমবারের মতো পিএসএলের শিরোপা ঘরে তোলে। এভাবেই পাকিস্তান ক্রিকেট পেয়ে যায় তাদের নতুন পোস্টার বয়- মোহাম্মদ রিজওয়ান।
রিজওয়ানের মধ্যে পাকিস্তান এমন একজন ওপেনার খুঁজে পায়, যিনি ইনিংসের শুরুতে ধীরগতিতে রান তুললেও শেষ দিকে খুব দ্রæত রান তুলতে পারেন। পাকিস্তানের পরবর্তী চারটি সফরে তিনি অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স দেখান, চারটি টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১৩৭ স্ট্রাইক রেটে করেন ৫৫৫ রান। যার মাধ্যমে তিনি টি-টোয়েন্টিতে এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ভেঙে দেন।
রিজওয়ানের ব্যাটিংয়ের ধরনটা একটু আলাদা, তিনি মোটেও ক্রিস গেইল বা এবি ডি ভিলিয়ার্সের মতো মারকাটারি ব্যাটিং করেন না। কিন্তু যেহেতু তিনি খুব বেশি ডট বল দেন না এবং সব সময় প্রান্ত বদল করতেই থাকেন, তাই খুব সহজেই রান তুলতে পারেন। স্পিন বলে তার গড় রান ৬০, যা দেখলেই বোঝা যায় যে তিনি কতটা দক্ষ হাতে স্পিন সামলাতে পারেন। প্রতিনিয়ত সুইপ শট খেলে বা লেগ সাইডে বল ঠেলে দিয়ে সহজেই তিনি প্রান্ত বদল করে ফেলতে পারেন।
এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে উড়ন্ত সূচনা পেয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট দল। প্রথম ম্যাচে বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারতকে লজ্জার ব্যাট হাতে এবারও উজ্জ্বল রিজওয়ান, ৫৫ বলে খেলেছেন ৭৯ রানের দারুণ একটি ইনিংস। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের ম্যাচেও খেলেন ৩৩ রানের ইনিংস। পাকিস্তানের এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় শুধুমাত্র বাবর আজম বা শাহিন শাহ আফ্রিদি নয়, নির্ভর করবে মোহাম্মদ রিজওয়ানের ওপরেও। নতুন এক ম্যাচ উইনারই পেল ইমরান খানের উত্তরসূরীরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।