পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে ভাটা। অনিয়ম, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনায় আর্থিকখাতের যখন নাজুক অবস্থা তখন একমাত্র আশার আলো শেয়ারবাজার। বর্তমান কমিশন, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভলপমেন্ট অথরিটিসহ (বিডা) সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিনিয়োগ আকর্ষণে যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের সম্ভাবনা তুলে ধরছে। এ সব কার্যক্রমের ফলে করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও দেশের শেয়ারবাজারে মানুষের আস্থা ফিরেছে। বিনিয়োগ বাড়ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ৪ নভেম্বর লন্ডনে বিনিয়োগ আকর্ষণে সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এই বিনিয়োগ সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘদিনের অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা কাটিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আইনের শাসন এবং জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করায় শেয়ারাবাজারের প্রতি ক্রমান্বয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। যা করোনার অভিঘাত কাটিয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। যদিও আইনের শাসন এবং জবাবদিহিতার অভাবে গত ১০ প্রায় বছর বাংলাদেশের শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। অথচ মাত্র ১ বছরের বর্তমান কমিশনের যুগান্তকারী পদক্ষেপে শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক উত্থান হয়। গত মে মাসে বিশ্বে শীর্ষ অবস্থানে ছিল দেশের শেয়ারবাজার। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ডিএসই’র ইতিহাসে সাড়ে ১১ বছরের মধ্যে প্রথম ৭ হাজার পয়েন্ট অতিক্রম করে। এরই ধারাবাহিকতায় অন্যান্য বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে ফিরতে শুরু করছিলেন। বিদেশী বিনিয়োগ যখন দরজায় কড়া নাড়ছে, দীর্ঘদিন পর শেয়ারবাজার নিয়ে যখন সবাই খুশি। তখনই দৃশ্যমান সাফল্যকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং সরকারকে বিব্রত করতে একটি গ্রুপ দেশের পুঁজিবাজারকে আবারও আগের মতো বিপর্যস্ত করতে উঠে পড়ে লেগেছে। আর এক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
করোনার প্রভাব কাটিয়ে যখন প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসায় ফিরতে শুরু করেছে এবং এর প্রেক্ষিতে পুঁজিবাজারের সূচক আরও উঠবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। আর তখনই নিজেদের কাজ সঠিকভাবে না করে বিএসইসি’র কাজে হস্তক্ষেপ করছে ব্যাংক ও আর্থিকখাতের তদারকি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংক। কিছু পলিসিগত বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অযাচিত হস্তক্ষেপে ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি’র মতবিরোধের কারণে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। যা পুঁজিবাজারের চলমান প্রবৃদ্ধি থমকে দেয়ার একটি প্রচেষ্টা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আব্দুর রহিম নামে এক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী বলেন, দীর্ঘদিন পর বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে ফিরেছে। আর এই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেদের অক্ষমতা দূর করতে পুঁজিবাজারে অযাচিত হস্তক্ষেপ করছে। তিনি দেশের অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি শেয়ারবাজারকে বাঁচাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, শেয়ারবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি অস্বাভাবিক। এর অন্যতম কারণ হতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসি’র মতপার্থক্য।
জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আবু আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিন পর সবাই উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে শেয়ার কিনছে। নতুন অনেক বিনিয়োগকারী আসছে। তাই পুঁজিবাজারকে গতিশীল করতে সম্মিলিত সিদ্ধান্তে আসতে হবে।
সূত্র মতে, পুঁজিবাজারে ব্যাংক খাতের বিনিয়োগ নিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। এ কারণে গত সপ্তাহে চার কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে তিন হাজার ১১৫ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন কমেছে। এরমধ্যে ডিএসইতে তিন হাজার ১৯ কোটি এবং সিএসইতে ৯৬ কোটি টাকার লেনদেন কমেছে। এর আগের সপ্তাহেও পুঁজিবাজারে লেনদেন কমেছিল। এতে করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা অস্বস্তি দেখা দিয়েছে।
শেয়ারবাজারে চলমান নিম্নমুখীতার পেছনে এ মতপার্থক্য অনেকাংশেই ভ‚মিকা রেখেছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। আর ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজার ও অর্থনীতির উন্নয়নের স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংকের অযাচিত হস্তক্ষেপ রোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এছাড়া পুঁজিবাজারের অন্যান্য স্টেকহোল্ডাররাও দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে মতপার্থক্য দূর করে সমন্বয়ের বিষয়ে জোর দিয়েছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, দেশের অর্থনীতির অগ্রযাত্রা রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মধ্যেই কার্যকর সমন্বয় থাকা প্রয়োজন।
অথচ ব্যাংকগুলোকেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না আর্থিকখাতের তদারকি সংস্থাটি। আবার শেয়ারাবাজারে ছড়ি ঘোড়ানের চেষ্টা করছে। ঋণ জালিয়াতি, অর্থ পাচার ও নানা অনিয়মে জর্জরিত দেশের ব্যাংকিং খাতের এসব অনিয়ম রোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভ‚মিকা খুব একটা নেই বললেই চলে। এমনকি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তদারকির দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অভিযোগ। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের কাজে ক্ষোভ জানিয়েছেন উচ্চ আদালত। ব্যাংক ও আর্থিকথাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি নিজেরাই নিজেদের সামাল দিতে ব্যর্থ। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের হিসাব নিয়েও প্রশ্ন করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার পর ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান পদত্যাগ করেন। এরপর ফজলে কবিরকে গভর্নর নিয়োগ করা হয়। ফজলে কবির দায়িত্ব নেয়ার পর সাড়ে ৫ বছর অতিবাহিত হয়েছে। সর্বশেষ আইন সংশোধন করেও তাকে এই পদে রাখা হয়। এই সময়ে রিজার্ভ চুরির অর্থ ফিরিয়ে আনা দূরের কথা ব্যাংকিংখাতে সুশাসন-জবাবদিহিতা ফেরাতেও কোন ধরণের কার্যক্রম চোখে পড়েনি। বরং ঋণ জালিয়াতি, অর্থ পাচার ও নানা অনিয়মে জর্জরিত দেশের ব্যাংকিং খাতের দৈন্য দশা চলছে। গত সাড়ে ৫ বছরে আর্থিকখাতের উন্নতি না হলেও বড় বড় জালিয়াতি রোধে কোন পদক্ষেপও চোখে পড়েনি। বরং এই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে যেন চালু হয়েছে সচিবালয় প্রথা। ফাইল স্বাক্ষরের আগেই সংশ্লিষ্টদের কাছে ফোন করে বলা হয় অগ্রগতি ও উৎকোচের কথা। গভর্নর সচিবালয়ে একটি সিন্ডিকেট সচিবালয় প্রথা চালু করেছে। এমনকি দীর্ঘদিন থেকেই গভর্নরের অফিস সময় শুরু হয় দুপুর ১২টায়। আর রাত ৯টা পর্যন্ত তিনি অফিস করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সকালে কোন ফাইল স্বাক্ষরের প্রয়োজন হলেও অপেক্ষা করতে হয় গভর্নর কখন অফিসে আসবেন তার ওপরে। আর তাই অনেক জরুরি ফাইলও আটকে যায়। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি কর্মকর্তাদের অনেককেই রাত ৯টা পর্যন্ত ব্যাংকে থাকতে হয়। সাধারণত সরকারি কর্মকর্তাদের অফিস কার্যক্রমের সময় সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। গভর্নরের নিজস্ব অফিস সময়ের কারণে কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ধরণের অসন্তোষ বিরাজ করছে। আর এভাবে স্বাভাবিক কাজ বাদ দিয়ে বর্তমানে দীর্ঘদিন পর উড়তে থাকা শেয়ারবাজারে নজর পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের।
সূত্র মতে, ব্যাংকগুলোর পুঁজিবাজার বিনিয়োগ নিয়ে গত কয়েক মাস থেকেই অযাচিত হস্তক্ষেপ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পোর্টফোলিওর শেয়ারের দর বেড়ে বিনিয়োগের নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করলে জরিমানা গুনতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। এছাড়াও পুঁজিবাজার বিশেষ তহবিলের অর্থ অন্য শেয়ারে বিনিয়োগ এবং অদাবিকৃত লভ্যাংশের অর্থ পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলে স্থানান্তর করা নিয়েও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিএসইসি’র মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ মতপার্থক্যের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ প্রভাবে পুঁজিবাজারের সূচক নিম্নমুখী হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এর আগেও ব্যাংক খাতের বিনিয়োগ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিএসইসির মধ্যে মতপার্থক্য দেখা গিয়েছে। ২০১০ সালের শেয়ারবাজারে ধসের পর বিভিন্ন সময়ে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা, একক গ্রাহক ঋণসীমা ও বিনিয়োগ গণনা পদ্ধতি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জারিকৃত বিভিন্ন নির্দেশনার প্রভাব পড়তে দেখা গেছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার ঘাটতি ও মহামারীর প্রভাবে গত বছরের মার্চ পর্যন্ত রীতিমতো ধুঁকছিল পুঁজিবাজার। সূচক নেমে এসেছিল ৩ হাজার ৬০০ পয়েন্টে। করোনার সংক্রমণ রুখতে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিতে বন্ধ হয়ে পড়েছিল পুঁজিবাজারে লেনদেনও।
আর তখনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএসইসির শীর্ষ নেতৃত্বে পরিবর্তন আনেন। গত বছর মে মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে চেয়ারম্যান করে নতুন কমিশন নিয়োগ করে সরকার। নতুন কমিশনের উদ্যোগে সাধারণ ছুটি শেষে ৩১ মে থেকে চালু হয় পুঁজিবাজারের লেনদেন। নতুন কমিশন দায়িত্ব নিয়ে আইনের শাসন, সংস্কারমূলক পদক্ষেপ এবং জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করায় পুঁজিবাজারে ক্রমান্বয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরতে শুরু করে। গত বছরের জুলাই থেকেই ছন্দ ফিরে পেতে শুরু করে পুঁজিবাজার। সক্রিয় হতে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিশ্রেণির বড় বিনিয়োগকারীরাও।
এরপর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও মুদ্রাবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে চলতি বছরের মার্চে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বেশকিছু বিষয়ে দুই সংস্থার মধ্যে সমন্বিত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর মধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ প্রদানের সর্বোচ্চ সীমা শিথিল করা, বিশেষ তহবিল গঠনের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উৎসাহিত করা, বিশেষ তহবিলের অর্থ সুকুক, করপোরেট বন্ড, গ্রিন বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা, সরকারের ট্রেজারি বিল ও বন্ড স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের ব্যবস্থা করা, ব্যাংকের ইস্যু করা পারপেচুয়াল বা বেমেয়াদি বন্ডকে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে দ্রুত লেনদেনের উদ্যোগ গ্রহণ করার বিষয়ে দুই সংস্থার কর্মকর্তারা নীতিগতভাবে একমত পোষণ করেন। পাশাপাশি মিউচুয়াল ফান্ডে উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যাংকের বিনিয়োগ এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পুঁজিবাজার বিনিয়োগ সীমা গণনার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকৃত সিকিউরিটিজের বাজার মূল্যের পরিবর্তে ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে গণনা করার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সে সময় কমিশনের কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও এখনো এ সম্পর্কিত কোনো নির্দেশনা দেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কিন্তু সেপ্টেম্বরে হঠাৎ করে আর্থিক খাতের দৈন্যদশার মধ্যে উড়তে থাকা পুঁজিবাজারে আঘাত হানে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর পুঁজিবাজার বিনিয়োগ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ শুরু করে। নির্ধারিত সীমার বেশি বিনিয়োগ করায় ৮টি ব্যাংককে জরিমানা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি নির্দেশনা লঙ্ঘন করে পুঁজিবাজার বিশেষ তহবিলের অর্থ অন্য শেয়ারে বিনিয়োগ করার কারণে আরো ১২ ব্যাংককে এ সময় সতর্ক করা হয়। সবমিলিয়ে ২২টি ব্যাংককের ওপর হস্তক্ষেপ করার ঘোষণা দেয়।
এদিকে বাংলাদেশের ব্যাংকের অযাচিত হস্তক্ষেপে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগসীমা নিয়ে উভয় সঙ্কটে পড়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আইনের বাধ্যবাধকতায় একটি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান তার মোট মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করতে পারবে না। আর শেয়ারের ধারণকৃত মূল্য নির্ধারণ করা হয় বাজার মূল্যের ভিত্তিতে। ব্যাংকগুলোর ধারণকৃত শেয়ারের মূল্য বাজারে বেড়ে গেলে আইনের বাধ্যবাধকতা অমান্য হয়ে যায়। আর রাতারাতি শেয়ার বিক্রি করে নির্ধারিত সীমার মধ্যে নামিয়ে আনা যায় না। আবার নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করলেই ব্যাংকগুলোকে জরিমানা গুনতে হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। এভাবে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের শেয়ার ধারণের সর্বশেষ সীমা নিয়ে উভয় সঙ্কটে পড়েছে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হয়রানি এড়াতে ব্যাংকগুলো তাদের পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগ সীমা কিছুটা সমন্বয়ও করেছে, যার প্রভাবে সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারে দরপতন হতে দেখা গেছে। ব্যাংকের বিনিয়োগ ছাড়াও সম্প্রতি অদাবিকৃত লভ্যাংশের অর্থ পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলে স্থানান্তর করা নিয়েও বিএসইসি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, এই অর্থ স্থানান্তরের সুযোগ নেই। অন্যদিকে বিএসইসি’র মত হচ্ছে, বিনিয়োগকারী ও আমানতকারীর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। বিনিয়োগকারীর টাকা আর আমানতকারীর টাকা এক জিনিস নয়। আর দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ মতপার্থক্যের প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে।
একটি শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউজের প্রধান নির্বাহী নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বলেন, আর্থিকখাতের যখন নাজুক অবস্থা তখন একমাত্র আশার আলো পুঁজিবাজার। বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিকখাতের উন্নয়ন ঘটাতে না পেরে নিজেদের অক্ষমতা ঢাকতে ক্ষোভের বশবর্তি হয়ে পুঁজিবাজারে অযাচিত হস্তক্ষেপ করছে। যা দেশের অর্থনীতিকে আরও বিপর্যস্ত করবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, বর্তমান বিএসইসি’র সুযোগ্য নেতৃত্ব ও সব অংশীজনের সহযোগীতায় দীর্ঘ দিনের মন্দাভাব কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে পুঁজিবাজার। তাই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে পুঁজিবাজার বিষয়ক যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে বিএসইসি বা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পরামর্শ নেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জোর দাবি জানান তিনি।
পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক খারাপ পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির কমিশনার প্রফেসর ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজার নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। মুনাফা তুলে নিতে কেউ কেউ শেয়ার বিক্রি করছেন। এজন্য সূচক কিছুটা নিম্নমুখীতা দেখা যাচ্ছে। একই সঙ্গে পুঁজিবাজার নিয়ে কোন ধরণের ষড়যন্ত্রই কাজে আসবে না। দ্রুতই পুঁজিবাজার পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সার্বিক বিষয়ে ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাজার পরিস্থিতি নিয়ে সা¤প্রতিক সময়ে এই দুই সংস্থার কিছুটা মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমতে পারে। বাজারে এর প্রভাব পড়া অস্বাভাবিক নয়। এছাড়া বেশ কিছু কোম্পানির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছিল। এসব কোম্পানির মূল্য সংশোধন হয়েছে। সামগ্রিকভাবে এর প্রভাব পড়েছে। ড. এবি মির্জ্জা আজিজ বলেন, বাজারের এই পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে সতর্কভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোরকে সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। না হলে এসব বিক্ষিপ্ত সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করবে, বিপাকে ফেলবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।