নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
সরাসরি খেলার যোগ্যতার প্রমাণ রেখেই সুপার টুয়েলভ যাত্রা শুরু করলো আফগানিস্তান। বাংলাদেশকে হারের লজ্জা দেওয়া স্কটল্যান্ডকে গুড়িয়ে দিয়েছে মুজিব-উল-হক, রশিদ খান, মোহাম্মদ নবীর দল। গতকাল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে দিনের একমাত্র ম্যাচে ১৩০ রানে জিতেছে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটি। টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় জয় এটিই। ২০১৩ সালে এই শারজাতেই কেনিয়ার বিপক্ষে ১০৬ রানে জয় ছিল তাদের আগের রেকর্ড। শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে মাত্র ৪ উইকেট হারিয়ে ১৯০ রান তোলে আফগানরা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১০.২ ওভারে মাত্র ৬০ রানেই গুটিয়ে যায় স্কটিশ শিবির। অথচ, ম্যাচ শুরুর আগে আগুণে এক লড়াইয়ের আভাসই দিয়েছিল দু’দলের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান!
২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরেই খেলেছিলো স্কটিশরা। এরপর ২০০৯ সালে খেললেও, পরের তিন আসরে জায়গা পায়নি তারা। ২০১৬ সালে আবারো বিশ্বকাপের মঞ্চে দেখা যায় স্কটিশদের। তিন বিশ্বকাপেই প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নেয় দলটি। তবে প্রথমবারের মতো এবার সুপার টুয়েলভে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে স্কটল্যান্ড। সেটিও বাংলাদেশের গ্রæপ ‘বি’ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়েই। যেখানে ফেভারিট বাংলাদেশকে ৬ রানে হারিয়ে শুরু থেকেই আলোচনায় স্কটিশরা। পরের দুই ম্যাচে পাপুয়া নিউ গিনিকে ১৭ রানে এবং ওমানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে গ্রæপের সেরা দল হিসেবে আসে ‘আসল’ বিশ^কাপে। তবে সত্যিকারের টি-টোয়েন্টি কি, তা তারা শিখলো লড়াকু আফগানদের কাছ থেকেই।
যদিও টস হেরে ফিল্ডিংয়ে নামার সময় তাদের শরীরি ভাষায় ছিলনা তার ছিঁটেফোঁটাও। তবে ম্যাচ এগোনোর সাথে সাথেই নিজেদের খামতি গুলো কঙ্কালসার হয়ে বেরুতে লাগলো। স্কটিশ বোলারদের কচুকাটা করে শারজার মন্থর উইকেটকে রানপ্রসবা করতে এতটুকু সময় নেয়নি আফগান ব্যাটাররা। ইনিংসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একই ফ্লোতে খেলেছেন। যার গোড়াপত্তন হয় দুই ওপেনার হজরতউল্লাহ জাজাই ও মোহাম্মদ শাহজাদের হাত ধরে। ৫৪ রানের জুটি গড়ে শাহজাদ (২২) আউট হবার আগে তারা সময় নেন মাত্র ৫.৫ ওভার। সঙ্গী হারিয়েও দমে যাননি জাজাই, দশম ওভারে সাজঘরে ফেরার আগে ৩০ বলে করেন ৪৪ রান। দলীয় রান ছিল ৮২। এর পর যেন আরো ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে আফগানিস্তান। শেষ ১০ ওভারে তারা তোলে ১০৮ রান! যার এর পুরো কৃতিত্বটা যাবে রহমতউল্লাহ গুরবাজ ও নাজিবুল্লাহ জারদানের ঝুলিতে। দুজনের ৫২ বলে ৮৭ রানের জুটি আফগানিস্তানকে বড় সংগ্রহ এনে দেয়। ৩৭ বলে ১ চার ও ৪ ছক্কায় ৪৬ রান করেন রহমতউল্লাহ। ইনিংসের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে নাজিবুল্লাহ ৩৪ বলে করেন ৫৯ রান। তার ইনিংসে ছিল ৫টি চার ও ৩টি ছক্কা। অধিনায়ক মোহাম্মদ নবী ৪ বলে ২ চারের ছোট্ট ক্যামিওতে তোলেন ১১ রান। আফগানিস্তান পায় ১৯০ রানের বিশাল সংগ্রহ।
এবারের আসরে যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ দলীয়। প্রথম পর্বে ওমানের বিপক্ষে ৭ উইকেটে বাংলাদেশের ১৮১ ছিল আগের সেরা। তবে সেরার তালিকায় নিজেদের ছাড়িয়ে গেছে আফগানিস্তান। এর আগে ২০১৬ আসরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৬ উইকেটে ১৮৬ রান তাদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ। যদিও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলীয় সর্বোচ্চ রানের মালিক শ্রীলংকা। ২০০৭ সালের প্রথম আসরে কেনিয়ার বিপক্ষে ৬ উইকেটে ২৬০ রানের পাহাড় গড়েছিল মাহেলা জয়াবর্ধনের নেতৃত্বাধীন দলটি।
সেই রান পাহাড় তাড়ায় শুরু থেকেই স্কটল্যান্ড ছিল অস্বস্তিতে। যদিও জর্জ মানজি আভাস দিয়েছিলেন ঝড়ের। প্রথম ওভারেই চার-ছয়ে দেখিয়েছিলেন ইন্টেন্ট। অধিনায়ক কাইল কোয়েৎজারও তার দুই বাউন্ডারিতে সে পথেই ছিলেন। চতুর্থ ওভারে বল হাতে নিয়ে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেন মুজিব-উর-রহমান। এই রহস্য স্পিনার ৫ বলের মধ্যেই তুলেন ৩ উইকেট। নাবিন উল আলমের পরের ওভারে পড়ে আরেক উইকেট। বিনা উইকেটে ২৮ থেকে ৩০ রানেই ৪ উইকেট খুইয়ে বসে স্কটিশরা। স্রোতের বিপরীতে খেলতে থাকা মানজিও মুজিবের শিকার হলে ৩৬ রানে ৫ উইকেট হারায় স্কটল্যান্ড। ১৮ বলে ২৫ করে বিদায় নেন মানজি।
প্রথম ওভারে এসে উইকেট নেন রশিদও। তার গুগলি বুঝতে না পেরে বিদায় নেন মাইকেল লিস্ক। নিজের শেষ ওভারে মার্ক ওয়াটকে বোল্ড করে পঞ্চম শিকার ধরেন মুজিব। ৫০ স্পর্শ করার আগেই ৭ উইকেট হারিয়ে বসে স্কটল্যান্ড। এরপর খেলার আসলে বাকি ছিল কেবল আনুষ্ঠানিকতা। রশিদ তা সারতে একদম সময় নেননি। তার একের পর এক গুগলিতে স্কটিশ টেল গুটিয়ে যায় দ্রুতই। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ২০ রানে ৫ উইকেট নেন অফ স্পিনার মুজিব। লেগ স্পিনার রশিদ স্রফে ৯ রানে নেন ৪টি। বড় জয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করে আফগানরা।
অথচ এই বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের খেলা নিয়েই ছিল চরম সংশয়। কারণ গত ১৫ আগস্ট দেশটির শাসনভার তুলে নেয় তালেবান সরকার। এর পর থেকে বিভিন্ন বিধি-নিষেধের মুখে পড়ে আফগানিস্তানের ক্রীড়াঙ্গন। শুরুতে নারীদের ক্রিকেটও নিষিদ্ধ করে দেয় তালেবানরা। তবে শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ মঞ্চে নেমেছে আফগানিস্তানের পুরুষ ক্রিকেট দল। এবং দুর্দান্ত এক জয়ে বিশ্ব ক্রিকেট নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিল রশিদ-মুজিবরা। বাংলাদেশকে আরেকবার শেখালো, কিভাবে টি-টোয়েন্টি খেলতে হয়!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।