Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানবী (সা.) এর অনুপম রূপ-সৌন্দর্য

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২৬ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:১২ এএম, ২৬ অক্টোবর, ২০২১

প্রিয়নবী (সা.)-এর পবিত্র কথামালার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তিনি স্বয়ং এরশাদ ফরমান, আমাকে জামে কালামের বৈশিষ্ট্য প্রদান করা হয়েছে এবং আমার জন্য কালামকে সংক্ষিপ্ত করে দেওয়া হয়েছে। ‘জামে কালাম’-এর অর্থ হচ্ছে, এমন শব্দসম্বলিত বাক্য, যা সর্বাধিক সংক্ষিপ্ত অথচ অধিক অর্থবহ।

হুযুর আকরাম (সা.)-এর পবিত্র মস্তক প্রসঙ্গে হযরত হিন্দ ইবনে আবি হালা রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, হুযুর (সা.)-এর মাথা মোবারক বড় ছিল। এক্ষেত্রে মাথাকে বড় বলার উদ্দেশ্য এ কথা বোঝানো যে, হযরতের মাথা ক্ষুদ্রাকৃতির ছিল না। তাঁর দেহের অন্যান্য অঙ্গের মতো মাথা পরম নান্দনিক ও নিরুপম ছিল, যেমন অন্যান্য অঙ্গ সম্পর্কে অনুপম সৌষ্ঠবের কথা বলা হয়েছে। মাথা বড় হওয়া ধীশক্তির প্রাচুর্য, মর্যাদাবান প্রধান অঙ্গের শ্রেষ্ঠত্ব এবং মনন ও মেধার পরিপূর্ণতার পরিচায়ক।

হযরত কাতাদা রহ. বলেন, আমি হযরত আনাস (রা.) কে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র কেশ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বললেন, হুযুর পাক (সা.)-এর মাথার চুল নরম বা মোলায়েম ছিল। চুল মোবারক সম্পর্কে অন্যান্য বর্ণনায় ‘সাবত’ শব্দ এসেছে, যার অর্থ নরম ও ঝুলন্ত চুল।

অন্য বর্ণনায় এসেছে, হুযুরের চুল কোঁকড়ানো ও শক্ত ছিল না।
তাঁর মাথার চুল কানের মধ্যখান পর্যন্ত লম্বা ছিল। অন্য বর্ণনা পাওয়া যায় কান পর্যন্ত; অন্য আরেক বর্ণনানুসারে দু’ কানের লতি পর্যন্ত লম্বা ছিল; তা ছাড়া কাঁধ পর্যন্ত বা প্রায়-কাঁধ পর্যন্ত, এরূপ বর্ণনাও আছে। এরূপ বিভিন্ন বর্ণনার মধ্যে সামঞ্জস্যবিধান হয়েছে এভাবে, হুযুর পাক (সা.) কখনো কখনো চুলে তেল ব্যবহার করতেন বা চিরুনি দিয়ে মাথা আঁচড়াতেন, তখন চুল লম্বা হয়ে যেত; আর অন্য সময় তার বিপরীত থাকত। অথবা চুল যখন লম্বা হয়ে যেত, তখন কাঁধ পর্যন্ত থাকত; আবার যখন চুল ছোট করে ফেলতেন, তখন খাটো হয়ে উপরোক্ত দুটো পর্যায়ে চলে যেত।

মাওজমাউল বিহার কিতাবেও অনুরূপ বর্ণনা পাওয়া যায়। এই বর্ণনা দ্বারা আরেকটি ব্যাপারে জানা গেল যে, হুযুর (সা.) স্বীয় চুল কর্তন করতেন, মস্তক মুণ্ডন করতেন না। আর মস্তক মুণ্ডন করার ব্যাপারে তিনি স্বয়ং এরশাদ করেছেন যে, তিনি হজ ও ওমরা ব্যতীত মস্তক মুণ্ডন করতেন না। আল্লাহ তাআলা এ ব্যাপারে সর্বাধিক জ্ঞাত।
হযরত উম্মে হানী রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, হুযুর আকরাম (সা.) যখন মদীনা মুনাওওয়ারা থেকে মক্কা মুয়াযযামায় তাশরিফ আনলেন, তখন তাঁর মাথা মোবারকের চুল চার ভাগে বিভক্ত হয়ে ঝুলে ছিল। মাথার চুল লম্বা রাখা সুন্নত। উপরোক্ত প্রচলন বহু প্রাচীন কাল থেকেই আরবদের মধ্যে বিদ্যমান ছিল। তবে এক্ষেত্রে চুলের প্রতি লক্ষ্য রাখা, তেল ও চিরুনি ব্যবহারের মাধ্যমে চুলের যত্ন নেওয়া অপরিহার্য। হুযুর আকরাম (সা.) স্বীয় কেশরাজিতে যথেষ্ট পরিমাণে চিরুনি করতেন।

কারও মাথার চুল আলুথালু ও অবিন্যস্ত থাকা তিনি পছন্দ করতেন না। কারও চুল এমন থাকলে তাকে লক্ষ করে এরূপ বলতেন, তুমি কি কখনো তাকে (শয়তানকে) দেখেছ? তিনি অতিমাত্রায় পরিপাটি করা লম্বা চুলও অপছন্দ করতেন। সুবিন্যস্ত মধ্যম প্রকারের চুলই বেশি পছন্দ করতেন। চুলে তেল ও চিরুনি ব্যবহারে অক্ষম ব্যক্তির জন্য খাটো করে চুল রাখাই উত্তম।

আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (রা.) বলতেন, আমি মাথার চুল ওই সময় থেকে দুশমন মনে করতাম, যখন থেকে রাসূল পাক (সা.)-কে এ কথা বলতে শুনেছি, প্রত্যেক চুলের ফাঁকেই নাপাকি থাকে। পরবর্তী সময়ের বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিগণ বিশেষ করে মাশায়েখ, দরবেশ ও আবেদ বান্দাগণের ভেতর চুল খাটো করে রাখার যে রীতি, তার কারণ সম্ভবত এটাই। তারা অনেকেই চুলে তেল-চিরুনি ব্যবহার করতে অক্ষম ছিলেন; এ কাজের জন্য তাদের ফুরসতই মিলত না অথবা তারা নাপাকি থেকে পবিত্রতা অর্জনে সতর্কতার পথ বেছে নিতেই সচেষ্ট ছিলেন।



 

Show all comments
  • কাওসার ২৬ অক্টোবর, ২০২১, ২:৫৮ এএম says : 0
    সুবহান আল্লাহ
    Total Reply(0) Reply
  • নুরজাহান ২৬ অক্টোবর, ২০২১, ৩:০০ এএম says : 0
    বোখারি ও মুসলিম শরীফে হজরত বারা ইবনে আযিব (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, মহানবী (সা:) এর চেহারা মোবারক মানবকুলের মধ্যে সর্বাধিক সুন্দর
    Total Reply(0) Reply
  • জাফর ২৬ অক্টোবর, ২০২১, ৩:০১ এএম says : 0
    হজরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (দরূদ) এর চেয়ে সুন্দর কোন কিছুই আমার দৃষ্টিগোচর হয়নি ।
    Total Reply(0) Reply
  • সোলায়মান ২৬ অক্টোবর, ২০২১, ৩:০২ এএম says : 0
    নবী করিম (সা:) এর নূরানী চেহারাখানা এত উজ্জ্বল যে, সূর্যের উজ্জ্বলতাও তাঁর কাছে হার মেনেছে ।
    Total Reply(0) Reply
  • নিয়ামুল ২৬ অক্টোবর, ২০২১, ৩:০৬ এএম says : 0
    লেখাটির জন্য উবায়দুর রহমান খান নদভী সাহেবকে অসংখ্য মোবারকবাদ জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন