বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
প্রজনন নির্বিঘ্ন করার মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে দেশে ইলিশ-এর আহরন, পরিবহন ও বিপননে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে আজ মধ্যরাতে। নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হয়ে আসায় গত কয়েকদিন ধরেই দক্ষিণাঞ্চল সহ উপকুলে ইলিশ আহরনে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে জেলেরা। দক্ষিনাঞ্চলের সব জেলেপল্লী ও ইলিশ মোকামগুলো আবার প্রাণ চাঞ্চল হয়ে উঠছে। জাল মেরামত সহ সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহন করে মঙ্গলবার সকাল থেকেই জেলেরা তাদের নাও ভাসাবার অপেক্ষার প্রহর গুনছে।
তবে আগামী ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সারা দেশে ইলিশ পোনা,জাটকা আহরন ও বিপননে ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে। এসময়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি অভয়াশ্রমে পর্যায়ক্রমে দুমাস করে সব ধরনের মৎস্য আহরনে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি সারা দেশে অনুর্ধ ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত জাটকা আহরন নিষিদ্ধ থাকবে।
মা ইলিশের অত্যাধীক প্রচুর্য থাকায় গত ৪ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ভোলার পশ্চিম আউলিয়া পয়েন্টÑতজুমদ্দিন, মনপুরা দ্বীপ, পটুয়াখালীর কলাপাড়ার লতাচাপলি পয়েন্ট-এর ধলচর দ্বীপ, মৌলভীরচর দ্বীপ ও কালিরচর দ্বীপ, মায়ানী পয়েন্টÑমীরসরাই ছাড়াও কুতুবদিয়া পয়েন্ট এলাকার ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারে ২২ দিনের জন্য সবধরনের মৎস্য আহরন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল ।
এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর ৭টি সমর নৌযান ছাড়াও কোষ্ট গার্ড, পুলিশ ও র্যাব সহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলাÑউপজেলা প্রশাসন মৎস্য বিভাগের সাথে নানামুখি ১৭ হাজার অভিযান ও দুই সহশ্রাধীক মোবইল কোর্ট পরিচালনা করে।
নিষেধাজ্ঞার এসময়ে আইনÑশৃংখলা বাহিনী ও প্রশাসনের অভিযানে প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের সাড়ে ৯ লাখ মিটার নিষিদ্ধ জাল ছাড়াও ৩৩ টন ইলিশ আটকের পাশপাশি আড়াই সহশ্রাধীক জেলেকে কারাদন্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। জরিমানা আদায় হয়েছে প্রায় ৬০ লাখ টাকা। এসময়ে নিষিদ্ধ নৌকা সহ বিভিন্ন মৎস্য আহরন সরঞ্জাম নিলামে বিক্রী করে সরকারী কোষাগারে প্রায় ৬ লাখ টাকা জমা করা হয়েছে।
‘হিলসা ফিসারিজ ম্যানেজমেন্ট অ্যাকশন প্লান’র আওতায় ২০০৫ সালেই ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ১০ দিন, ২০১১ সালে ১১ দিন, ২০১৫ সালে ১৫ দিন ও ২০১৬ সালে থেকে ২২ দিন ইলিশ আহরন নিষিদ্ধ করে সরকার। এসব বৈজ্ঞানিক পদক্ষেপ গ্রহনের ফলে দেশে ইলিশের উৎপাদন নিকট অতীতের ১.৯৮ লাখ টন থেকে বর্তমানে সাড়ে ৫ লাখ টনের ওপরে উন্নীত হয়েছে। যার ৬৬Ñ৭০% ইলিম উৎপাদন হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলে। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী বছর দুয়েকের মধ্যে জাতীয় এ মাছের উৎপাদন ৬ লাখ টন অতিক্রম করতে পাড়ে বলেও মনে করছেন একাধীক মৎস্য বিশেষজ্ঞ।
বাংলাদেশের ইকাসিষ্টেমে সারা বছরই ৩০% ইলিশ ডিম বহন করে এবং পরিপক্ক হয়ে ডিম ছাড়ে। যে ডিমগুলো পুরুষ ইলিশ দ্বারা নিষিক্ত হয়ে থাকে, তা নতুন প্রজন্ম গঠন করে। মৎস্য গবেষনা ইনষ্টিটিউট-এর গবেষনায় দেখা গেছে, ২০১৮-এর ৭Ñ২৮ অক্টোবর আহরন বন্ধ থাকাকালে উপকূলের প্রজননস্থল সহ অভ্যন্তরীন মূক্ত জলাশয়ে ৪৮% মা ইলিশ ডিম ছাড়ার সুযোগ পায়। ইনস্টিটিউট-এর মতে প্রজননক্ষম মা ইলিশের হার ২০১৭ সালে ৭৩% থেকে ’১৮ সালে ৯৩%-এ উন্নীত হয়। পাশাপাশি এসময়ে প্রজনন সাফল্য ৮০%-উন্নীত হয়। ইলিশ আহরন নিষিদ্ধের ফলে ঐ সময়ে দেশে ৭ লাখ ৬ হাজার কেজি উৎপাদিত ডিমের ৫০%-এর সাফল্যজনক পরিস্ফুটন সহ তার ১০% বেঁচে থাকলেও ইলিশ পরিবারে নতুন ৩ হাজার কোটি জাটকা যূক্ত হয়।
আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে ইলিশের একক অবদান এখন ১%-এর বেশী। আর মৎস্য খাতে অবদান প্রায় ১২.৫০%।
অভিপ্রয়াণী মাছ ইলিশ প্রতিদিন শ্রোতের বিপরিতে ৭১ কিলোমিটার পর্যন্ত ছুটে চলতে সক্ষম। জীবনচক্রে স্বাদু পানি থেকে নোনা পানিতে এবং সেখান থেকে পুনরায় স্বাদু পানিতে অভিপ্রয়ান করে এ মাছ। উপক’লের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারের মূল প্রজনন ক্ষেত্রে মূক্ত ভাসমান অবস্থায় ছাড়া ডিম থেকে ফুটে বের হয়ে ইলিশের লার্ভা, স্বাদু পানি ও নোনা পানির নার্সারী ক্ষেত্রসমুহে বিচরন করে খাবার খেয়ে বড় হতে থাকে। নার্সারী ক্ষেত্রসমুহে ৭Ñ১০ সপ্তাহ ভেসে বেড়াবার পরে জাটকা হিসেব সমুদ্রে চলে যায়। বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন এলাকায় ১২Ñ১৮ মাস অবস্থানের পরে পরিপক্ক হয়েই পূর্র্ণাঙ্গ ইলিশ হিসেবে প্রজননের লক্ষ্যে আবার স্বাদু পানির নার্সারী ক্ষেত্রে ফিরে এসে ডিম ছাড়ে।
ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্র ও মাইগ্রেশন পথ নির্বিঘœ রাখা সহ সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের মজুদ ও জীব বৈচিত্রকে সমৃদ্ধ করতে ২০১৯-এর ২৬ জুন হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ সংলগ্ন ৩ হাজার ১৮৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে দেশের প্রথম ‘সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা বা মেরিন রিজর্ভ এরিয়া’ ঘোষণা করা হয়েছে।
গত ২২ দিন ইলিশ আহরনে বিরত জেলে সম্প্রদায়ের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২০ কেজি করে চাল প্রদন করা হয়েছে। শুধুমাত্র বরিশাল বিভাগের সাড়ে ৩ লাখ জেলের মধ্যে ৩ লাখ ৭ হাজার ১২৪ জনকে প্রায় ৭ হাজার টন চাল বিতরন করা হয়েছে বলে মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।