নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ম্যাচশেষে ফেসবুক স্ক্রল করতেই একটি স্ট্যাটাস চোখে পড়ল। সেখানে লেখা ছিল, ‘ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের এগারো উইকেটের জয়।’ ক্রিকেটীয় কোন হিসেবে কি এগারো উইকেটে জেতা যায়? পরক্ষণে বুঝলাম পাকিস্তানের ১০ উইকেটের জয়কে স্ট্যাটাসদাতা কেন এক উইকেট বাড়িয়ে বললেন। পাকিস্তানের রান তাড়ায় ভুবেনেশ^র কুমারের ওভারে একাধিক ওয়াইড বল থেকে আম্পায়ার বঞ্চিত করেছে পাকিস্তানকে। শুধু তাই নয়, হাই ফুলটস একটি বলে মোহাম্মদ রিজওয়ান উড়িয়ে ছক্কা মেরেছিলেন। নিশ্চিতভাবেই সেটা ছিল নো বল। কিন্তু ভারতের ‘দ্বাদশ খেলোয়াড়’ তা হতে দেননি। তবে আম্পায়ারের পক্ষপাতিত্ব যাই করা হয়েছে, তা অনেকটা অনুমেয়ই ছিল। শুধু দেখার বিষয় ছিল এবারের ধরনটা কি হয়। তাও দেখা হয়ে গেল। কিন্তু তাতে পাকিস্তানের জয় আটকানো যায়নি। ‘আনলাকি থার্টিন’কে ‘লাকি থার্টিন’ বানিয়ে ইতিহাস বদলে দিল পাকিস্তান।
ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিলিয়ে আগের ১২ দেখায় একবারও ভারতের বিপক্ষে জিততে পারেনি পাকিস্তান। বিশ্বমঞ্চে এই দুই দলের ১৩তম দেখায় এবার ভারতকে হারিয়ে দিল বাবর আজমের দল। গতকাল দুবাইয়ে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তান জিতেছে ১০ উইকেটে। শুধু বিশ^মঞ্চেই নয়, পাকিস্তান এর আগে টি-টোয়েন্টিতে কখনোই ১০ উইকেটের ব্যবধানে জেতেনি। আর যেকোন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ভারতের ১০ উইকেটে হারের রেকর্ডও এটাই প্রথম। এছাড়া তিন সংস্করণ মিলিয়ে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি ২০০তম ম্যাচের উপলক্ষটা রেকর্ড গড়া জয়ে রাঙাল পাকিস্তান। আরব আমিরাতের দুবাইয়ের সেই রোমাঞ্চের আঁচ একটু হলেও লেগেছে এশিয়ায়। ভারতের এই লজ্জাজনক পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে আনন্দে উল্লোসিত হয়ে ওঠে বাংলাদেশের ক্রীড়ামোদীরাও। ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে সমর্থকদের পটকা ফোটাতেও দেখা যায়। এ যেন নিজেদের ক্ষতে কিছুটা প্রলেপ দেওয়ার মতো। একটু আগেই যে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে গেছে বাংলাদেশ, সেটি ভোলারই যেন ‘বায়বীয়’ চেষ্টা।
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই উত্তেজনা। সমর্থকদের দৃষ্টিতে ‘অলিখিত ফাইনাল’। উত্তেজনার পারদে ঠাসা ম্যাচটা দর্শকরা যেমন চেয়েছিল ঠিক সেরকমই হয়েছে। কোনভাবেই আটকে রাখা যায়নি পাকিস্তানকে। বাবর আজমের ক্রিকেটীয় দর্শনের কাছে হার মানল বিরাট কোহলি ব্রিগেড। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একক আধিপত্য দেখিয়ে দাপুটে জয় পেয়েছে পাকিস্তান। ম্যাচের প্রথম বল থেকে বাবর আজমদের শরীরী ভাষায় যেন ইতিহাস বদলানোর ইঙ্গিত দিচ্ছিল। দুবাইয়ে টস জিতে বিরাট কোহলিদের ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান বাবর আজম।
প্রথম ওভারে পাকিস্তানকে উৎসবের উপলক্ষ্য এনে দেন শাহিন আফ্রিদি। মাপা এক ইয়র্কারে রোহিত শর্মাকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন শাহিন। এক ওভার পর আবার শাহিন ঝলক। এবার শিকার ইনফর্ম লোকেশ রাহুল (৩)। দুর্দান্ত এক ইনসুইঙ্গারে বোল্ড হয়ে যান ভারতীয় ওপেনার। ৬ রানে দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে ম্যাচের মোমেন্টাম নিজেদের দিকে নেয় পাকিস্তান। নতুন ব্যাটসম্যান সূর্যকুমার যাদব শাহিনের ওভারের শেষ বলে ছয় হাঁকিয়ে প্রতি আক্রমণের একটা আভাস দিয়েছিলেন। তবে সেটি মিলিয়ে যেতেও সময় লাগেনি। এবার ধাক্কাটা দেন হাসান আলী। দলীয় ৩১ রানে যাদবকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানান এ পেসার।
৩১ রানের মধ্যে তিন টপ অর্ডার হারিয়ে দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন কোহলি। প্রথম দফায় ঋষভ পন্তকে নিয়ে ৪০ বলে ৫৩ রানের জুটি গড়ে প্রাথমিক ধাক্কা সামলান। পরে পন্ত শাদাব খানের বলে তার হাতেই ক্যাচ দিলে রবীন্দ্র জাদেজাকে নিয়ে ৩৩ বলে ৪১ রানের জুটি গড়ে ভারতকে ম্যাচে রাখেন কোহলি। তবে ভারতের ইনিংস দেখে অবশ্য একবারও মনে হয়নি ম্যাচ লক্ষ্য পাকিস্তানের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। ১২৫ রানে জাদেজা আউট হলে কোহলিও আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। শেষ ১৯ বলে ২৬ রান ভারত ১৫১ রানের লড়াইয়ের পুঁজি পায়। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৭ করেন কোহলি। কোহলিকেও ফিরিয়েছেন শাহিন।
১৫১ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে শুরু থেকেই দারুণ আত্মবিশ্বাসী দুই পাকিস্তানি ওপেনার বাবার আজম আর মোহাম্মদ রিজওয়ান। প্রথম ওভারেই বুমরাকে এক ছয়, এক চার হাঁকিয়ে রিজওয়ান যেন বলতে চাইলেন দিনটা আজ আমাদেরই! সত্যিই সত্যিই দিনটা নিজেদের করে নিয়েছেন বাবার-রিজওয়ান। বুমরা, সামি, বরুণদের কোনো পাত্তায় দেননি ম্যাচের বাকি অংশে। আক্ষরিক অর্থেই যাকে বলে একক আধিপত্য! ভারতকে বিশ্বমঞ্চে হারাতে না পারা দলটা কোহলিদের একদম গুঁড়িয়ে দিয়ে ১০ উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে পাকিস্তান। রিজওয়ান ৭৯ আর বাবর ৬৮ রানে অপরাজিত থাকেন। ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠে আফ্রিদির হাতে। বিশ্বকাপে এর চেয়ে ভালো শুরু নিশ্চয়ই আর হতে পারত না আমূলে বদলে যাওয়া ‘নতুন’ পাকিস্তানের!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।