বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড থেকে চেক জালিয়াতি করে আরও আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা ধরা পড়েছে। মোট ৫ কোটি টাকা চেক জালিয়াতি করে তুলে নেয়া হয়েছে। আগের বিষয়টি ধরা পড়লে গোপনে দুদকে আরও একটি অভিযোগ দেয় শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ। যেখানে বলা হয়েছে হিসাব সহকারী আবদুস সালাম বর্তমান চেয়ারম্যান মোল্লা আমীর হোসেন সচিব থাকাবস্থায় এসব জালিয়াতি করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের ২১ আগষ্ট বিজনেস আইটি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে আয়কর বাবদ ১২ হাজার ২৭৬ টাকা তুলে নেয়া হয়। একই সালের ৪ অক্টোবর শহরের জামে মসজিদ লেনের নূর এন্টারপ্রাইজ নামে ৫৯ হাজার ৩৫ টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। ২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল মেসার্স খাজা প্রিন্টিং প্রেসের নামে ২ লাখ ৯৮ হাজার ৫৩০ টাকা ও নিহার প্রিন্টিং প্রেসের নামে ২ লাখ ৯৮ হাজার ৫৩০ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এভাবে ৯টি প্রতিষ্ঠানের নামে আরও ২ কোটি ৪৩ লাখ ৭ হাজার ৮৭৮ টাকা তুলে নিয়েছে হিসাব সহকারী আবদুস সালাম। একই সাথে সেকশন অফিসার আবুল কালাম আজাদের নামে ৯৪ হাজার ৩১৬ টাকা ও আবদুস সালামের নিজ নামে ২৫ লাখ ৮০ হাজার ১০ টাকা তুলে নেয়া হয়েছে।
যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের হিসাব ও নীরিক্ষা বিভাগের উপ-পরিচালক এমদাদুল হক জানান, আমরা আরও প্রায় আড়াই কোটি টাকার চেক জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছি। যা দুদকে ২১ অক্টোবর আরও একটি অভিযোগ জমা দিয়েছি। ওই সময় বর্তমান চেয়ারম্যান মোল্লা আমীর হোসেন বোর্ডের সচিব থাকাবস্থায় প্রথম এই জালিয়াতি করা হয়েছে। বোর্ডের আবদুস সালাম তখন হিসাব শাখার দায়িত্বে ছিলেন। তার নেতৃত্বে ভেনাস প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক যশোরের শরিফুল ইসলাম বাবু এসব জালিয়াতি করেছন বলে আমরা জেনেছি। এখন দুদক বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।
দুর্নীতি দমন কমিশন যশোর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো: নাজমুচ্ছায়াদাত জানান, আমাদের কাছে আরও প্রায় আড়াই কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগ করা হয়েছে। জালিয়াতির সাথে কারা জড়িত আছে তা খুঁজে বের করা হবে।
এর আগে ০৭ অক্টোবর বোর্ডের হিসাব শাখা থেকে ধরা পড়লে তুলকালাম ঘটে যায়। এব্যাপারে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ কোতয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছিলেন। আর ১০ অক্টোবর দুদক অফিসে লিখিত অভিযোগ দেন শিক্ষাবোর্ড সচিব এএমএইচ আলী আর রেজা। দুদক যশোর কার্যালয়ের উপপরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাতের নেতৃত্বে তাদের একটি টিম শিক্ষাবোর্ড এর তদন্ত শুরু করেন।
দুদকের কর্মকর্তাদের তদন্ত শুরু হওয়ার পর সালামের স্ত্রী দোষ স্বীকার করেন। সেখানে জানানো হয়েছে, চেক জালিয়াতের ঘটনায় আব্দুস সালাম ব্যক্তিগতভাবে দায়ী। শিক্ষাবোর্ডের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারি কেউ জড়িত নয়। পূর্ব পরিচিতির সূত্র ধরে দুই প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব ব্যবহার তিনি টাকা উত্তোলন করেছেন। নিজ প্রয়োজনে খরচ করে ফেলেছেন। ওই টাকা তিনি ফেরত দিতে ইচ্ছুক। পর্যায়ক্রমে সব টাকা ফেরত দেয়ার অঙ্গীকার করেন। এরপর তিনি ডাকযোগে পে-অর্ডারের মাধ্যমে ১১ অক্টোবর তিনি ১৫ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা এবং একই মাধ্যমে ২১ অক্টোবর ১৫ লক্ষ ৯৮ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোর শিক্ষাবোর্ডের হিসাব শাখার উপ-পরিচালক এমদাদুল হক।
এর আগে ১৮ অক্টোবর আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৫জনকে আসামি করে মামলা করে দুদক। দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের সহকারী পরিচালক মাহফুজ ইকবাল বাদী হয়ে এই মামলা করেছেন।
অভিযুক্তরা হলেন, যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোল্লা আমীর হোসেন, সচিব অধ্যাপক এএম এইচ আলী আর রেজা, হিসাব সহকারী আবদুস সালাম, প্রতারক প্রতিষ্ঠান ভেনাস প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক শরিফুল ইসলাম বাবু, ও শেখহাটী জামরুলতলার শাহীলাল স্টোরের মালিক আশরাফুল আলম।
মামলা হবার পর ওইদিন রাতেই চেয়ারম্যান ও সচিব তাদের বাংলো থেকে বের হয়ে যান। এরপর তারা কেউ অফিসে আসেনি।
এব্যাপারে যশোর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান মোল্লা আমীর হোসেন জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠানের চেক প্রিন্টিং করা। সেখানে হাতে লেখার সুযোগ নেই। ধারণা করা হচ্ছে জালিয়াতি করে ভুয়া চেকের মাধ্যমে এসব টাকা আতœসাত করা হয়েছে।
যশোর শিক্ষাবোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাধব চন্দ্র রুদ্র জানান, আরও আড়াই কোটি টাকা জালিয়াতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শিক্ষাবোর্ডের কর্মচারি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো: আসাদুজ্জামান জানান, বর্তমান বোর্ড চেয়ারম্যান আগে যখন সচিব ছিলেন তখন থেকে এই জালিয়াতি শুরু করে আবদুস সালাম ও তার ব্যবসায়ীক পার্টনার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।