Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দীর্ঘ লালিত স্বপ্নের পায়রা সেতু রোববার খুলে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাংলাদেশ কুয়েত ওপেক-এর যৌথ ব্যায় দেড় হাজার কোটি টাকা

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৩ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০২ পিএম

দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্নের বাস্তবয়ন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল সকালে বহু প্রতিক্ষিত ‘পায়রা সেতু’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করছেন। বাংলাদেশের নিজস্ব ৩৬৮ কোটি টাকা ছাড়াও কুয়েত উন্নয়ন তহবিল এবং ওপেক ফান্ড সহ সর্বমোট এক হাজার ৪৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যায়ে নির্মিত দক্ষিণাঞ্চলের প্রথম ৪ লেনের ‘পায়রা সেতু’ নির্মানের ফলে সারা দেশের সাথে পটুয়াখালী ও পায়রা বন্দর সহ কুয়াকাটার ফেরি বিহীন নিরবিচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হচ্ছে। রোববার সকাল ১১ টার পরেই দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক পথে অবশান হচ্ছে দীর্ঘ দিনের বিড়ম্বনার। দেশের বিশিষ্ট অর্থনতিবীদদে মতে, দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষের স্বপ্নের পায়রা সেতু এ অঞ্চলের মত সারাদেশের আর্থÑসামাজিক ব্যবস্থায়ও এক অনন্য মইলফলক হয়ে উঠবে অদুর ভবিষতেই।
প্রধানমন্ত্রী রোববার সকাল ১০টায় গনভবন থেকে ভার্চুয়ালি আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটির উদ্বোধন করবেন। এর পরপরই সেতুটি সব ধরনের যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
২০১৩ সালের ১৯মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। এ সেতু চালু হলে রাজধানী থেকে পদ্মা সেতু হয়ে এবং দেশের উত্তরাঞ্চল থেকেও কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র এবং পায়রা সমুদ্র বন্দরে পৌছা যাবে মাত্র ৭ ঘন্টায়। এমনকি সারা দেশের সাথে পায়রা বন্দর সহ কুয়াকাটার দুরত্ব হবে কক্সবাজারের প্রায় অর্ধেক।
এক হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ ও ১৯.৭৬ মিটার প্রস্থ ৪ লেনের এ সেতুটি পায়রা নদীর মূল অংশের ৬৩০ মিটার ‘বক্স গার্ডার’এর ৪টি স্প্যানের ওপর নির্মিত হয়েছে। যার মূল অংশ ২শ মিটার করে দুটি স্প্যানে ১৮.৩০ মিটার ভার্টিক্যল ক্লিয়ারেন্স রাখা হয়েছে। ফলে পায়রা সমুদ্র বন্দরে উপক’লীয় পণ্য ও জ¦ালানীবাহী নৌযান ছাড়াও নৌ বাহিনীর বড় মাপের যুদ্ধ জাহাজসমুহ চলাচলও নির্বিঘœ থাকছে। এছাড়া সেতুর মূল অংশের দুপ্রান্তে ৮৪০ মিটার ভায়াডাক্ট-এ ৩০ মিটার করে ২৮টি স্প্যানে বর্ধিত অংশের ভার বহন করছে। সেতুটির ৩২টি স্প্যান এখন দাড়িয়ে আছে ৩১টি পিয়ার-এর ওপর। ২৮টি স্প্যানের ১২টি বরিশাল প্রান্তে এবং ১৬টি পটুয়াখালী প্রান্তে।
বাংলাদেশ, চীন ও কুয়েতের যৌথ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান- ‘আইসিটি-কুনহুয়া-নারকো-ইপিসি-জেভি’র প্রকৌশলীদের তত্বাবধানে চীনের ‘লংজিয়ান রোড এন্ড ব্রীজ কনস্ট্রাকশন কোম্পানী সেতুটি নির্মান করেছে।
২০০৪Ñ০৫ সালে প্রনীত ৪২০ কোটি টাকা ব্যায় সম্বলিত ‘উন্নয়ন প্রকল্প-প্রস্তাবনা-ডিপিপি’ ২০১২ সালর মে মাসে প্রথমবারের মত একনেক-এর অনুমোদন লাভ করে। তবে ‘এক্সট্রা ডোজ প্রী-স্ট্রেসড বক্স গার্ডার’ ধরনের এ সেতুটি নির্মানে ২০১৩ সালে আহবানকৃত দরপ্রস্তাবে চীনের ‘লংজিয়ান রোড এন্ড ব্রীজ কোম্পানী লিমিটেড’ প্রায় সাড়ে ১২শ কোটি টাকার সর্বনি¤œ প্রস্তাবনা দাখিল করে। কুয়েত এবং ওপেক-এর সম্মতিতে সর্বনি¤œ দরদাতা চীনা প্রতিষ্ঠানটির সাথে চুক্তির পরে ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই সেতুটির নির্মান কাজ শুরু হয়। কিন্তু পরবর্তিতে নকশা পবির্তনের কারণে দু দফায় ব্যায় সংশোধন করে এক হাজার ২৬৮ মিটার সংযোগ সড়ক এবং প্রায় দেড় কিলোমিটার নদী শাষন ও টোল প্লাজা সহ প্রকল্পটির ব্যায় নির্ধারন করা হয় প্রায় ১ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা।
সেতুটির দু প্রন্তে সংযোগ সড়কে জন্য ১২ একর এবং পটুয়াখালী প্রান্তে নদী শাষন কাজে আরো ১৩ একর ভ’মি অধিগ্রহন করা হয়েছে। তবে কয়েকটি বড় ধরনের ঘূর্নিঝড় ছাড়াও করোনা মহামারীর করণে সেতুটির নির্মানকাজ যথেষ্ঠ পিছেয়ে যায়। পাশাপাশি পটুয়াখালী প্রান্তে নদী শাষনের ভূমি অধিগ্র্রহনে বিলম্বেও প্রকল্পটির বাস্তবায়ন পিছিয়ে গেছে।
খরশ্রোতা পায়রা নদীর ভাঙন থেকে দেশের অন্যতম বৃহত এ সেতু রক্ষায় পটুয়াখালী প্রান্তে ১ হাজার ৪৭৫ মিটার নদী শাষন কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবে ভবিষ্যত নিরাপত্তার স্বার্থে বরিশাল প্রান্তেও নদী শাষনের কথা জানিয়েছেন নদী বিশেষজ্ঞগন। সেলক্ষে পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি ডিপিপি মন্ত্রনলয়ে জমা দিয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় সেতুটির বরিশাল প্রান্তে ৬১০ মিটার ও পটুয়াখালী প্রান্তে ৬৫৮ মিটার সংযোগ সড়কের ওয়ারিং কোর্স শেষে বিটুমিনস কার্পেটিংও গত মাসেই শেষ হয়েছে। মূল সেতু ও তার ভায়াডক্টের জন্য টেষ্ট পাইল, ওয়ার্কিং পাইল, পীয়ার ক্যাপ, পীয়ার এবং ভায়াডাক্ট সহ মূল সেতুর ফাউন্ডেশন ছাড়াও সাব-স্ট্রাকচার-এর নির্মান কাজ সড়ক অধিদপ্তরের প্রকৌশলী সহ পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের নিবিড় তত্ববধানে চীনা নির্মান প্রতিষ্ঠান ইতোপূর্বে সম্পন্ন করেছে ।
গত ৩১ মার্চ প্রত্যুষে ‘ক্লেজিং সেগমেন্ট’ ঢালাই-এর মাধ্যমে মূল সেতুর ‘সুপার স্ট্রাকচার’ দু প্রান্তের সাথে সংযুক্ত হয়। ভয়াডাক্ট’র ওয়ার্কিং পাইল সহ পাইল ক্যাপ, এ্যাবাটমেন্ট ওয়ালও কঠোর মান নিয়ন্ত্রনে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ আবদুল হালিম। মূল সেতুটি বিভিন্ন মাপের ৫৫টি টেষ্ট পাইল সহ দশটি পীয়ার, পাইল ও পীয়ার ক্যাপ-এর ওপর নির্মিত হয়েছে। এছাড়া ১৬৭ টি বক্স গার্ডার সেগমেন্ট নির্মান কারতে হয়েছে।
তবে পায়রা সেতুর টোল বর্তমান ফেরি ভাড়ার তুলনায় ৩/৭ গুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করায় ইতোমধ্যে পরিবহন মালিকÑশ্রমিক সহ সাধারন মানুষের মধ্যেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ