বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
হুযুর আকরাম (সা.) এর কণ্ঠস্বর ছিল সীমাহীন প্রীতিপূর্ণ। তাঁর পবিত্র মুখনিঃসৃত ধ্বনি ও তার মাধুর্য অন্য সকল আওয়াজের চেয়ে সুন্দর ও চিত্তাকর্ষক ছিল। তাঁর চেয়ে সুন্দর আওয়াজ ও মিষ্টি কথার কোনো মানুষ পৃথিবীতে আসেননি। তাঁর রসনা মোবারক মাখরাজ থেকে শব্দ বের করে এনে যথাযথ উচ্চারণ করতে যেমন সক্ষম ছিল, তেমনি ছিল তাঁর বাক্যে সঠিকত্ব, বিশুদ্ধতা ও শ্রেষ্ঠত্ব। আজ পর্যন্ত কেউই উক্ত গুণাবলি অর্জনে সক্ষম হননি।
হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, আল্লাহ তাআলা এমন কোনো নবীকেই পৃথিবীতে প্রেরণ করেননি, যাঁর কণ্ঠস্বর ও বাক্যাবলি সুন্দর ছিল না। আর উক্ত গুণাবলির দিক দিয়ে আমাদের নবী (সা.) ছিলেন সর্বাগ্রে।
অন্য কোনো মানুষের কণ্ঠ যেখানে পৌঁছুতে ব্যর্থ হতো, সেখানে হুযুর পাক (সা.) এর পবিত্র ধ্বনি বিনা বাধায় পৌঁছে যেত। বিশেষ করে নসিহত, সতর্কীকরণ বা সুসংবাদ-সম্বলিত বক্তৃতায়। সুতরাং পর্দার অন্তরালে নারীসমাজও সে আওয়াজ শুনতে পেত। পবিত্র হজ সম্পাদনকালে মিনা প্রান্তরে তিনি যে খুতবা প্রদান করেছিলেন, সে খুতবা সমস্ত লোকের কর্ণকুহরে পৌঁছে গিয়েছিল। দূরের ও কাছের সবাই আপন অবস্থানে থেকেই সে খুতবা শুনতে পেয়েছিলেন।
হুযুর আকরাম (সা.) এর জবান মোবারক থেকে উচ্চারিত ভাষার অলঙ্কার, গভীর ভাবসম্পন্ন বাক্য, আশ্চর্য ধরনের প্রকাশভঙ্গিমা, বিস্ময়কর ও সূক্ষ্ম বিষয়ের অবতারণা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলি তাঁর মধ্যে এত বিপুল ছিল যে, কেউ এই সমস্ত ব্যাপারে তাঁর তুলনীয় হতেও সক্ষম নয়।
একদা হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনি তো কখনো বিদেশে তাশরিফ নিয়ে যাননি বা মানুষের সঙ্গে তেমন ওঠা-বসা করেননি, তা সত্ত্বেও এরূপ অলঙ্কৃত ভাষা আপনি কোত্থেকে লাভ করলেন? উত্তরে তিনি বললেন, হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালামের ভাষা ও পরিভাষা, যা বিলুপ্ত ও নিঃশেষিত হয়ে গিয়েছিল, সেগুলো হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম আমার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন আর আমি সেগুলো রপ্ত করে নিয়েছি। তদুপরি তিনি বলেছেন, আমার রব আমাকে আদব শিখিয়েছেন। অতএব, আমাকে তিনি সর্বোৎকৃষ্টরূপে শিষ্ট, পরিশীলিত ও মার্জিত করেছেন। আদবের বাচনিক পর্যায়ে অলঙ্কারযুক্ত কথা এবং স্থান-কাল ও পাত্রের পরিপ্রেক্ষিতে যথোপযুক্ত বাক্যপ্রয়োগ বা হৃদয়স্পর্শী ভাষণও এর সাথে সম্পৃক্ত।
তিনি আরও এরশাদ করেছেন, আমার প্রতিপালন হয়েছে বনী সাদ ইবনে বকর গোত্রে, অর্থাৎ, এটি ছিল তাঁর ধাত্রীমাতা হযরত হালিমা সাদিয়া (রা.)-এর গোত্র। এই সম্প্রদায়ের লোকেরা সমস্ত আরবে ভাষার বিশুদ্ধতার দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ পর্যায়ে ছিলেন।
এক বর্ণনায় আছে, নবী কারীম (সা.) এরশাদ করেছেন, আরবি বর্ণকে তার মাখরাজ বা উচ্চারণস্থল থেকে উচ্চারণকারীদের মধ্যে আমিই শ্রেষ্ঠ, অর্থাৎ, আমার মতো সঠিক উচ্চারণ আর কেউ করতে পারে না।
হুযুর আকরাম (সা.) নেহায়েত পরিষ্কার এবং স্পষ্টভাবে কথা বলতেন। এমন পরিষ্কার করে বলতেন যে, প্রতিটি শব্দ পৃথক পৃথকভাবে গণনা করা সম্ভব হতো। কথোপকথনকালে কখনো সন্দেহ বা দুর্বোধ্য পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তিনি একেকটি শব্দ তিন-তিনবার করে উল্লেখ করতেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।