পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা হয়েছে, তাদের উপাসনালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে কক্সবাজারের রামু, উখিয়া, সুনামগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফরিদপুর, নেত্রকোণাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপর, উপাসনালয়ে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। তাদের ঘরবাড়ি, সহায়-সম্পত্তি আত্মসাত করা হয়েছে। এই দুষ্কৃতিকারীরা প্রায় সবাই ক্ষমতাসীন দলের লোক। গতকাল রোববার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। কুমিল্লার ঘটনাসহ সারা দেশে পূজামন্ডপে হামলা-ভাংচুরের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সব ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তি যারা রয়েছে তাদেরকে সঠিক, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে দেশবাসীকে এই ব্যাপারে সচেতন থাকার জন্য আহবান জানাচ্ছি যে, সরকারের এই হীন প্রচেষ্টা যেন কোনো মতেই সফল না হয়, আমাদের বাংলাদেশের যে আত্মা সেই আত্মাকে কখনো যেন তারা বিনষ্ট না করতে পারে সেজন্য দেশবাসী সচেষ্টা থাকবেন।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, এই সরকার একটি স্পর্শ কাতর বিষয় নিয়ে শুধুমাত্র ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার লক্ষ্য আমাদের হাজার বছরের যে ঐতিহ্য সকল ধর্মের মানুষ সৌহার্দ্যমূলক পরিবেশে বাস করি তাকে বিনষ্ট করা, ধবংস করা। শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তারা (ক্ষমতাসীন) উস্কানি দিয়ে, মদদ দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, পবিত্র কোরআন শরীফ অবমাননা, পূজামন্ডপ ও মন্দিরে নিরাপত্তা বিধান না করে হামলা-ভাংচুর-সংঘাত-সংঘর্ষকে উস্কিয়ে দিয়ে দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়কে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের জীবন কেড়ে নিয়ে রাজনৈতিক ফয়দা হাসিলের চক্রান্তে মেতে উঠেছে সরকার। গণতন্ত্রের লাশের ওপর দাঁড়িয়ে তারা সাম্প্রদায়িক সংঘাতের উপকরণ ছড়িয়ে সহিংস রক্তাক্ত পরিস্থিতিতে উদ্ধারকর্তার ভূমিকায় অভিনয় করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সুদৃষ্টি পেতে চায়।
মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান যুগে কিছুই ঢেকে রাখা যায় না। সত্য প্রকাশ পাবেই। কুমিল্লার পূজা মন্ডপের ঘটনার রেশ ধরে সারাদেশে যে সরকারের ন্যাক্কারজনক পরিকল্পিত নীলনকশা অনুযায়ী বাস্তবায়িত হচ্ছে সেটা আজ জনগণের কাছে স্পষ্ট। সরকারের পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক উস্কানি ও এর ফলোশ্রুতিতে দেশব্যাপী রক্তাক্ত হিংসাশ্রয়ী ঘটনার আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
পূজামন্ডপের নিরাপত্তা বিধানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘নিরব’ ভূমিকার সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দুর্গাপূজার প্রাক্কালে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আশ্বাস দেয়ার পরও কেন পবিত্র কোরআন শরীফের অবমাননা, মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাংচুরের মতো ঘটনা ঘটলো। কুমিল্লার সাধারণ মানুষের মতো আমরাও একমত যে, পুলিশ বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নিলে নানুয়া দীঘীর পাড়ের মন্ডপের ঘটনাটি নির্মম অমানবিকতার দিকে গড়াতো না। একই ঘটনা ঘটেছে চৌহমুনীতে। বার বার প্রশাসনকে বলার পরে, পুলিশ বাহিনীকে বলার পরেও তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। ৬ ঘন্টা ধরে সেখানে নৈরাজ্য চলেছে, লুটপাট চলেছে, ভাংচুর চলেছে। কিন্তু তারা নিরব ছিলো। তারা দাঁড়িয়ে থেকে দেখেছে কিন্তু কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করেনি।
তিনি বলেন, এখন একটি প্রশ্ন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে, কে বা কারা পবিত্র কোরআন শরীফ পূজা মন্ডপে নিয়ে গেছে? সরকারের নিরাপত্তা দেয়ার আশ্বাসের পর কেবলমাত্র ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট দুষ্ট চক্র ছাড়া দেশের জনগোষ্ঠীর কোন ধর্মীয় সম্প্রদায়ই এই কদর্য কাজ করবে না বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। সরকারের মদদেই কুমিল্লার নানুয়ার দিঘীর পাড়ের পূজা মন্ডপে চক্রান্তমূলক কুৎসিত কাজটি করা হয়েছে।এর বড় প্রমাণ ঘটনার পরপরই হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা অতিসত্বর পূজা মন্ডপ ও মন্দিরগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পাঠানোর জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ করেছিলো। কিন্ত স্থানীয় প্রশাসন এই অনুরোধে সাড়া না দিয়ে পুলিশ পাঠিয়েছে অনেক পরে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, শুধু অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এদেশের সমস্ত অর্জনগুলোকে বিসর্জন দিয়ে এবং তাকে ধবংস করে আজকে আওয়ামী লীগ এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। জনগনের দৃষ্টি ভিন্নখাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সাম্প্রতিককালের ঘটনা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকী। সারাদেশের মানুষের মধ্যে একটা রব আছে সরকারের পতন হচ্ছে। সরকারও নানা জটিল রোগে ভুগছে। তাদের আভ্যন্তরীণ সমস্যাও যথেষ্ট। সবকিছুকে চাপা দেয়ার জন্যই এই ধরণের মর্মান্তিক ও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড সরকারের অনেক নাটকের মধ্যে আরও একটি নাটক।
গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়ে সরকারে থাকার পৈশাচিক মানসিকতা, এটাই শেষ না এর চেয়ে আর নারকীয় ঘটনা সরকার ঘটাতে পারে। মানুষ বিশ্বাস করে, হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ পবিত্র কোরআন শরীফ মন্দিরে রাখতে পারে না। এটা সরকারের কাজ। রাজনৈতিক কারণে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে, গণতান্ত্রিকে শক্তিকে ধ্বংস করার সর্বশেষ প্রচেষ্টা এই সরকার করছে।
তিনি বলেন, সরকারের লাভ হচ্ছে- হিন্দুদের তাড়াতে পারলে সম্পত্তি পায়, রাখলে ভোট পায়। দুই দিকেই তাদের লাভ। সকল ধর্মপ্রাণ মানুষ, আলেম-ওলামাদের কাছে আবেদন, সরকারের ফাঁদে পা না দিয়ে সচেতন হোন, সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলুন কোন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নয়।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান, বরকত উল্লাহ বুলু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, মীর সরাফত আলী সপু, এবিএম মোশাররফ হোসেন, কামরুজ্জামান রতন, আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।