নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
২০০০ সালে বাংলাদেশ যখন টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়ে ক্রিকেটের কুলিন সমাজের বাসিন্দা ঠিক সেই বছরই আইসিসির ক্রিকেট নেশন্সের স্বীকৃতি পায় ওমান। তার পর থেকে আরব দেশটি হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগুচ্ছিল ঠিকই তবে বাধ সাধে তাদের আবহাওয়া আর অবকাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা। সেই ধাক্কা সামলে সহযোগী দেশটি ওয়ানডে স্ট্যাটাস পেল ২০১৪ সালে, ঠিক তখন থেকেই বেড়ে যায় তাদের স্বপ্নের পরিধি। সেই স্বপ্নের ডানায় ভর করে আজ তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সহ-আয়োজক। যদিও তাতে আছে কিছুটা ভাগ্যের পরশ!
সারা বিশ্বের জন্য করোনাভাইরাস যেখানে অভিশাপের অপর নাম, সেই মহামারীই আশির্বাদ হয়ে এসেছে ওমানের জন্য। মূলত এবারের বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল ভারত। তবে করোনাভাইরাসে জেরবার এশিয়ার দেশটি শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হওয়ায় আয়োজকের দায়িত্বভার পড়ে বিপদের বন্ধু বনে যাওয়া আরব আমিরাতের কাঁধে। তবে সেখানে টানা আইপিএল চলায় প্রথম রাউন্ডের ম্যাচগুলো আয়োজনের গুরুভার দেওয়া হয় পার্শবর্তী দেশ ওমানকে। আজ থেকে এই মরুদ্যানেই আনুষ্ঠানিক পর্দা উঠতে যাচ্ছে ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের। দেশটির রাজধানী মাসকাটের ওমান ক্রিকেট একাডেমি গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিকদের মুখোমুখি হবে পাপুয়া নিউ গিনি। একই দিন রাত ৮টায় বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ স্কটল্যান্ড। সব মিলিয়ে ৩ দিনে প্রথম রাউন্ডে বি গ্রুপের ৬টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে এই একটি ভেন্যুতে। তাতেও যেন আগ্রহের কমতি নেই শহরটির ‘বাসিন্দা’দের।
চারপাশে রুক্ষ মরু আর পাথুরে পাহাড়। মাঝখানে কিছু জায়গা জুড়ে সবুজের গালিচা। সেই সবুজ ঘিরে নান্দনিক কিছু স্থাপনা। সব মিলিয়ে উষর ভূমিতেই যেন এক টুকরো স্বর্গোদ্যান। সেই নন্দন কাননে একটু জায়গা পেতে এখন ওমানে চলছে হাহাকার। সুযোগটা মিলবে তো কেবল হাজার তিনেক সৌভাগ্যবানের! ওমান ক্রিকেট একাডেমি স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা যে ওটুকুই! এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পথচলা শুরু হবে যে ময়দানে। বিশ্বআসর উপলক্ষে অস্থায়ী কিছু স্ট্যান্ড বসানো হয়েছে দর্শকদের জন্য। কিন্তু চাহিদা যেখানে আকাশছোঁয়া, জোগান সেখানে জমিনে।
এখানকার স্থানীয়দের মধ্যে বিশ্বকাপ কিংবা ক্রিকেট খেলাটার আবেদন সামান্যই। মাসকাট শহরেও বিশ্বকাপের আবহ ততটা চোখে পড়ে না। স্টেডিয়ামের আশেপাশে গেলেই কেবল কিছুটা বোঝা যায়, এটি বিশ্বকাপের নগরী। তবে প্রবাসী বাংলাদেশি ও উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের প্রবাসীদের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা। ওমানের ন্যাশনাল সেন্টার ফর স্ট্যাটিসটিকস অ্যান্ড ইনফরমেশন (এনসিএসআই)-এর গত মে মাসের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির জনসংখ্যা ৪৫ লাখের একটু বেশি। সেখানে প্রবাসীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ। বিশাল সংখ্যক এই প্রবাসীর বড় একটা অংশ উপমহাদেশের।
ক্রিকেটানন্দে মেতে ওঠার আগে ঘূর্ণিঝড় শাহীনের ধাক্কা এখনও অবশ্য পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেননি তারা। গত ৩ অক্টোবর ওমানে হানা দেয় এই ঝড়। রাজধানী মাসকাটে হানা দেওয়ার শঙ্কা থাকলেও পরে গতিপথ বদলে তা ছোবল দেয় উপকূলীয় অঞ্চলে। তাতে প্রাণহানি হয় বেশ কজনের, ক্ষয়ক্ষতি হয় ব্যাপক। ৭ জন বাংলাদেশির মারা যাওয়ার খবর জানা গেছে বলে প্রবাসি বাংলাদেশিদের অনেকের দাবি। ক্ষয়ক্ষতির শিকারও বাংলাদেশিরাই বেশি হয়েছেন। ঝড়ের পর থেকেই ত্রাণ কার্যক্রম চলছে। গতপরশু ছুটির দিনও প্রবাসীদের বিভিন্ন সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গেছেন ত্রাণ ও স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম পরিচালনা করতে। এই ধাক্কা সামাল দিতে আরও অনেক সময় লাগবে, বলছেন প্রবাসীরা। সেই ক্ষত কিছুটা মুছতে দাওয়াই হয়েই যেন এসেছে এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।
ক্রিকেট মানচিত্রে অনেকটাই অপরিচিত ওমানে ২০ ওভারের ক্রিকেটের বিশ্বকাপ হচ্ছে, এক সময়ের বাস্তবতা বিবেচনায় এটিই এক বিস্ময়। বছর দশেক আগেও ওমানে তেমন কোনো ক্রিকেট মাঠ ছিল না। এখন সেখানে আন্তর্জাতিক মানের একটি স্টেডিয়াম আছে। বিশ্বকাপ উপলক্ষে সেটির সুযোগ-সুবিধার মান আরও বাড়ানো হয়েছে। মূল স্টেডিয়ামের লাগোয়া মাঠ আছে আরেকটি, যেখানেও স্বীকৃত পর্যায়ের ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন করা সম্ভব।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ওমানের ওয়ানডে দিয়ে গত বছরের জানুয়ারিতে এই ক্রিকেট একাডেমি মাঠের আন্তর্জাতিক অভিষেক। এই ২১ মাসে এই মাঠে ৬২টি (২০ ওয়ানডে ও ৪২ টি-টোয়েন্টি) আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়ে গেছে। ওমানের ক্রিকেট ও এই মাঠের গ্রহণযোগ্যতাকেই তুলে ধরছে তা। ভারত থেকে বিশ্বকাপ সংযুক্ত আরব আমিরাতে সরে আসার পর তাই সহ-আয়োজক হিসেবে ওমানও পেয়ে গেছে বিশ্বকাপের গৌরব। তবে যথারীতি সেই গৌরবে স্নান করছে মূলত প্রবাসী ও উপমহাদেশের বংশোদ্ভূতরাই। ওমান জাতীয় দল ভারতীয়-পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত দিয়েই গড়া মূলত। ক্রমশ ওমান ক্রিকেটের ভিত্তি হয়ে উঠতে থাকা স্কুল ক্রিকেট, অনূর্ধ্ব-১৩, ১৬ ও ১৯ পর্যায়েও তাদেরই প্রধান্য।
ওমানের ক্রিকেটে বাংলাদেশিদের সরাসরি সংযোগ সামান্যই। তবে এবার বিশ্বকাপ সুযোগ করে দিচ্ছে সম্পৃক্ততার। ওমানের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলকে পাওয়া তাদের আপাতত একঘেয়ে প্রবাস জীবনে বাড়তি রঙের ছটা। অপেক্ষা এখন কেবল মাঠের ক্রিকেটেও উপলক্ষ রঙিন হয়ে ওঠার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।