Inqilab Logo

শনিবার, ০৮ জুন ২০২৪, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে এশিয়ার দাপট

মো. জাহিদুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১৭ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০২ এএম | আপডেট : ৭:৫৫ পিএম, ১৭ অক্টোবর, ২০২১

দুয়ারে কড়া নাড়ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। দর্শক বিনোদনের চাহিদা থেকে ক্রিকেটের এই সংক্ষিপ্ততম সংস্করণের আবির্ভাব। সেই আবির্ভাব বিনোদন ছাড়িয়ে এখন ক্রিকেট-বাণিজ্যের সর্বোচ্চ চূড়া ছুঁয়েছে। আফ্রিকা, ব্রিটিশ সাম্রাজ্য, ক্যারিবিয়ান দীপপুঞ্জ আর উপমহাদেশ ঘুরে এবার টুর্নামেন্টটি পা ফেলছে মরুর দেশ ওমান আর সংযুক্ত আরব আমিরাতে (এতে অবশ্য করোনার ‘অবদান’ আছে)।

দর্শকের আগ্রহ থেকে ২০০৭ সালে প্রথমবার দক্ষিণ আফ্রিকায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পথচলা শুরু। গত ১৪ বছরে আরও পাঁচবার মাঠে গড়িয়েছে আইসিসির লাভজনক এই টুর্নামেন্ট। একমাত্র দল হিসেবে দুবার শিরোপা জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে মহাদেশ হিসেবে রুপালি ট্রফিটা সবচেয়ে বেশি তিনবার উপমহাদেশে এসেছে। টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কারটাও সবচেয়ে বেশি চারবার এশিয়ানদের দখলেই গেছে।

মরুর দেশে আবার কি এশিয়ানরাই দাপট দেখাবেন? নাকি সর্বশেষ ২০১৬ সালের মতো আরেকবার ক্যারিবিয়ান নৃত্যে মুখরিত হবে আমিরাত? কে হবেন টুর্নামেন্ট মাতানো সেরা খেলোয়াড়? এসব নিয়ে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে আলোচনা! কারও চোখে অধিনায়ক হিসেবে ‘শেষ’ ঘোষণা দেওয়া কোহলি প্রথমবার ট্রফি উঁচিয়ে ধরবেন। কারও মতে, টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বেশি বয়সী একই সঙ্গে এই সংস্করণের অবিসংবাদিত নেতা গেইল ‘বুড়ো হাড়ে’ ওস্তাদের শেষ মারটা দিয়ে টুর্নামেন্ট রাঙাবেন! দুবার ট্রফি জিতলেও গত ছয়বারের একবারও ‘ইউনিভার্স বস’ গেইলের যে টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কার জেতা হয়নি।

২০০৭ সালে প্রথম বিশ্বকাপে তীরে এসে তরি ডুবিয়েছিল পাকিস্তান। পাকিস্তানের প্রতিনিধি হয়ে শহীদ আফ্রিদি অবশ্য ৯২ রানের সঙ্গে ১২ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্ট-সেরার পুরস্কারটা ঠিকই নিজের করে নিয়েছিলেন। দুই এশিয়ান চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াই সেবার ভিন্ন মাত্রা পেয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়। পরের পাঁচটি বিশ্বকাপেও এশিয়ানদের দাপট। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের শিরোপা জয়ের আক্ষেপে প্রলেপ পড়লেও রানার্সআপ আরেক এশিয়ান পরাশক্তি শ্রীলঙ্কা। এবার শ্রীলঙ্কার ‘আফ্রিদি’ হয়ে ৭ ম্যাচে ৩১৭ রান করে টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কার ওঠে তিলকরত্নে ‘দিলস্কুপ’ দিলশানের হাতে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজে হওয়া ২০১০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওড়ে ইংলিশদের পতাকা। বড় মঞ্চে একটা শিরোপা জেতার আক্ষেপ ইংলিশদের পূরণ হয়েছে এই টুর্নামেন্টে। দলের শিরোপা জয়ের সঙ্গে টুর্নামেন্ট-সেরার পুরস্কারও ওঠে জয়ী দলের কেভিন পিটারসনের হাতে। সেবারই প্রথম এশিয়ার বাইরে দুটো পুরস্কারই গেল।
শ্রীলঙ্কায় হওয়া ২০১২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টুর্নামেন্ট-সেরা এক অস্ট্রেলিয়ান-শেন ওয়াটসন। শিরোপাটা ক্যারিবিয়ান দ্বীপে গেলেও ব্যাটে-বলে ওয়াটসনের সর্বোচ্চ অলরাউন্ড সত্তাটাই সেবার বেরিয়ে এসেছিল। ৬ ম্যাচে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ২৪৯ রানের সঙ্গে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১ উইকেট নিলেও শিরোপা উঁচিয়ে ধরার সৌভাগ্য হয়নি তার।

সর্বশেষ দুই প্রতিযোগিতায় চলেছে কোহলির রাজত্ব। বাংলাদেশে হওয়া ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অবিশ্বাস্য ১০৬.৩৩ ব্যাটিং গড়ে ৩১৯ রান করে টুর্নামেন্ট-সেরা হয়েছিলেন কোহলি। শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে যদিও ট্রফিটা জেতা হয়নি তার। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ঘরের মাঠে ভারত সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে গেলেও কোহলি ছিলেন আগের মতোই দুর্দান্ত। ১৩৬.৫০ গড়ে ২৭৩ রান করে সেবারও টুর্নামেন্ট-সেরা কোহলি। শিরোপাটা অবশ্য উঠেছিল গেইলদের হাতে।

গত ছয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে তিনটি শিরোপা ছিল এশিয়ার বাইরে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ (২০১২ ও ২০১৬) দুইবার আর ইংল্যান্ড (২০১০) একবার। বাকি তিনটি বিশ্বকাপের শিরোপা গিয়েছিল এশিয়ার অন্যতম তিন পরাশক্তি হাতে। ২০০৭ সালে ভারত, ২০০৯ সালে পাকিস্তান ও ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কা। তবে তিন আসরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর ইংল্যান্ড জিতলেও ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণের শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে যে এশীয়দেরই দাপট, সেটি রোল অব অনার আর টুর্নামেন্ট সেরাদের তালিকা দেখলেই বোঝা যাচ্ছে!

আগের আসরগুলোর চেয়ে এশিয়ার দলগুলোর শক্তিও বেড়েছে। এশিয়ার তিন চ্যাম্পিয়নের কথা না-হয় বাদই দিলাম। কেননা ভারত-পাকিস্তানকে ফেবারিট বললেও শ্রীলঙ্কার অবস্থা খুব একটা সুবিধার না। কেন ২০১৪ সালের চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে একথা বলছি, তা বুঝতে সাধারন ক্রিকেটপ্রেমী হলেই চলবে। কোন আলাদা গবেষণার প্রয়োজন নেই। উল্টোদিকে সরাসরি মূলপর্বে খেলছে রাজনৈতিকভাবে পরাশক্তিদের জম বলে খ্যাত আফগানিস্তান। দলটিকে নিয়ে তেমন উচ্চাকাক্সক্ষার সুযোগ না থাকলেও নিজেদের দিনে যে কোনো প্রতিপক্ষকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিতে পারেন রশিদ খান-মোহাম্মদ নবীরা।

আর সম্প্রতি জিম্বাবুয়ের মাঠে তাদের হারিয়ে দেয়ার পর ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মতো দল পাত্তাই পায়নি বাংলাদেশের বিপক্ষে। এ কয়েকটি সিরিজে একটি দৃশ্য খুব বেশি করেই নজরে এসেছে-তা হল বাংলাদেশ এখন জয়ের জন্য নির্দিষ্ট দু’একজনের উপর নির্ভর করে না। দলের প্রতিটি খেলোয়াড়ই মানসম্মত এবং সবাই ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা রাখেন। এবার এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে তাই বাংলাদেশকেও শিরোপার দাবিদার হিসেবেই মানছেন ক্রিকেটবোদ্ধারা। সেই হিসেবে টাইগার শিবির থেকে এবার আসর সেরার পুরস্কারে ভূষিত হলে অবাক হবার কিছু থাকবে না।


দর্শকের আগ্রহ থেকে ২০০৭ সালে প্রথমবার দক্ষিণ আফ্রিকায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পথচলা শুরু। গত ১৪ বছরে আরও পাঁচবার মাঠে গড়িয়েছে আইসিসির লাভজনক এই টুর্নামেন্ট। একমাত্র দল হিসেবে দুবার শিরোপা জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে মহাদেশ হিসেবে রুপালি ট্রফিটা সবচেয়ে বেশি তিনবার উপমহাদেশে এসেছে। টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কারটাও সবচেয়ে বেশি চারবার এশিয়ানদের দখলেই গেছে। বন্ধুদের সঙ্গে তর্কে জিততে চলুন জেনে নিই এমনই নানান তথ্য

পরিসংখ্যানের আলোয়
টি-২০ বিশ্বকাপ

শুরু ও শেষ
প্রথম আসর : ২০০৭, দক্ষিণ আফ্রিকা
সর্বশেষ আসর : ২০১৬, ভারত
এবারের স্বাগতিক : ভারত*
আয়োজক : ইউএই এবং ওমান
ফরম্যাট : রাউন্ড রবিন, সুপার-১২, নক-আউট
অংশগ্রহণকারী দল : ১৬
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন : ওয়েস্ট ইন্ডিজ
একাধিক চ্যাম্পিয়ন : ওয়েস্ট ইন্ডিজ (দু’বার)
*করোনাভাইরাসের কারণে স্থানান্তরিত

রোল অব অনার
আসর স্বাগতিক চ্যাম্পিয়ন রানার্সআপ
২০০৭ দ.আফ্রিকা ভারত পাকিস্তান
২০০৯ ইংল্যান্ড পাকিস্তান শ্রীলঙ্কা
২০১০ উইন্ডিজ ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া
২০১২ শ্রীলঙ্কা উইন্ডিজ শ্রীলঙ্কা
২০১৪ বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা ভারত
২০১৬ ভারত উইন্ডিজ ইংল্যান্ড

দলগুলোর পারফরমেন্স
দল অংশগ্রহণ ম্যাচ জয় হার টাই/পরি. সাফল্যাঙ্ক
উইন্ডিজ ৬ ৩১ ১৭ ১২ ১/১ ৫৮.৩৩
শ্রীলঙ্কা ৬ ৩৫ ২২ ১২ ১/০ ৬৪.২৮
ভারত ৬ ৩৩ ২০ ১১ ১/১ ৬৪.০৬
পাকিস্তান ৬ ৩৪ ১৯ ১৪ ১/০ ৫৭.৩৫
ইংল্যান্ড ৬ ৩২ ১৫ ১৬ ০/১ ৪৮.৩৮
অস্ট্রেলিয়া ৬ ২৯ ১৬ ১৩ ০/০ ৫৫.১৭
দ.আফ্রিকা ৬ ৩০ ১৮ ১২ ০/০ ৬০.০০
নিউজিল্যান্ড ৬ ৩০ ১৫ ১৩ ২/০ ৫৩.৩৩
আয়ারল্যান্ড ৫ ১৫ ৩ ৯ ০/৩ ২৫.০০
বাংলাদেশ ৬ ২৫ ৫ ১৯ ০/১ ২০.৮৩
নেদারল্যান্ডস ৩ ১২ ৫ ৬ ০/১ ৪৫.৪৫
আফগানিস্তান ৪ ১৪ ৫ ৯ ০/০ ৩৫.৭১
নেপাল ১ ৩ ২ ১ ০/০ ৬৬.৬৬
ওমান ১ ৩ ১ ১ ০/১ ৫০.০০
জিম্বাবুয়ে ৫ ১২ ৫ ৭ ০/০ ৪১.৬৬
হংকং ২ ৬ ১ ৫ ০/০ ১৬.৬৬
স্কটল্যান্ড ৩ ৭ ১ ৫ ০/১ ১৬.৬৬
কেনিয়া ১ ২ ০ ২ ০/০ ০.০০
ইউএই ১ ৩ ০ ৩ ০/০ ০.০০


দলগুলোর
র‌্যাঙ্কিং
র‌্যাঙ্ক দল
১ ইংল্যান্ড
২ ভারত
৩ পাকিস্তান
৪ নিউজিল্যান্ড
৫ দক্ষিণ আফ্রিকা
৬ বাংলাদেশ
৭ অস্ট্রেলিয়া
৮ আফগানিস্তান
৯ ওয়েস্ট ইন্ডিজ
১০ শ্রীলঙ্কা
১৩ আয়ারল্যান্ড
১৫ স্কটল্যান্ড
১৬ নেদারল্যান্ডস
১৭ ওমান
১৮ পিএনজি
১৯ নামিবিয়া

 

দলীয়

সর্বাধিক ম্যাচ : ৩৫টি, তিলকারত্নে দিলশান (শ্রীলঙ্কা)
অধিনায়ক হিসেবে : ৩৩টি, মহেন্দ্র সিং ধোনি (ভারত)
সর্বোচ্চ দলীয় : শ্রীলঙ্কা ২৬০/৬, প্রতিপক্ষ কেনিয়া (২০০৭)
সর্বনিম্ন দলীয় : নেদারল্যান্ডস ৩৯/১০, প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা (২০১৪)
বড় জয় : শ্রীলঙ্কা ১৭২ রানে, প্রতিপক্ষ কেনিয়া (২০০৭)


ব্যাটিং
সর্বাধিক রান : ৩১ ম্যাচে ১০১৬ মাহেলা জয়াবর্ধনে (শ্রীলঙ্কা)
সর্বোচ্চ ইনিংস : ১২৩ ম্যাককালাম, প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ
সর্বাধিক ফিফটি : ৯টি করে, ক্রিস গেইল ও বিরাট কোহলি
সর্বাধিক ডাক : ৩৪/৩৫ ম্যাচে ৫ বার করে, আফ্রিদি/দিলশান
সর্বাধিক ছক্কা : ২৮ ম্যাচে ৬০টি, ক্রিস গেইল (উইন্ডিজ)
আসরে সর্বোচ্চ রান : ৬ ম্যাচে ৩১৯, বিরাট কোহলি (২০১৪)
সেরা পার্টনারশিপ : ২য় উইকেটে ১৬৬, জয়াবর্ধনে/সাঙ্গাকারা (২০১০)

বোলিং
সর্বাধিক উইকেট : ৩৪ ম্যাচে ৩৯টি, শহীদ আফ্রিদি (পাকিস্তান)
সেরা বোলিং ফিগার : ৪-২-৮-৬ অজন্তা মেন্ডিস, প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে (২০১২)
ম্যাচে পাঁচ উইকেট : মুস্তাফিজ/ফকনার/আহসান/হেরাথ/মেন্ডিস/গুল/মালিঙ্গা
খরুচে স্পেল : ৪ ওভারে ৬৪ সানাৎ জয়সুরিয়া, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান
আসরে সর্বাধিক উইকেট : ৬ ম্যাচে ১৫টি অজন্তা মেন্ডিস (২০১২)

সর্বাধিক ক্যাচ
এবি ডি ভিলিয়ার্স (দ.আফ্রিকা)
৩০ ম্যাচে ২৩টি

সর্বাধিক ডিসমিসাল
মহেন্দ্র সিং ধোনি (ভারত)
৩৩ ম্যাচে ৩২টি



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টি২০ কাপ


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ