Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ছোট মঞ্চের বড় তারকারা

দারুণ প্রতিভাবান কিছু ব্যাটসম্যান, বোলার এবং অলরাউন্ডারদের আবির্ভাব ঘটেছে টি-টোয়েন্টির সুবাদে। এক দশকেরও বেশি সময় সফল পদচারণার পরও এই ফরম্যাটে দাপট-টা এশিয়ানদেরই।

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ১৭ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০২ এএম | আপডেট : ৭:৫৮ পিএম, ১৭ অক্টোবর, ২০২১

ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম ও সবচেয়ে উত্তেজনাময় ফরম্যাট টি-টোয়েন্টি। ক্রিকেট বোদ্ধাদের অনেকেই এই ফরম্যাটের সমালোচনা করলেও বর্তমান প্রজন্মের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় এই কুড়ি ওভারের খেলা। ২০০৫ সালে আবির্ভাব ঘটে চার-ছক্কার এই ক্ষুদ্র ক্রিকেট সংস্করণের। দ্রুতই ক্রিকেটারদের মাঝেও জনপ্রিয় হয়ে উঠে ফরম্যাটটি। ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের সুবাদে বিশ্বজুড়ে আরো পরিচিতি পায় এই সংস্করণ।

২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় বসে এই ক্ষুদ্রতম ফরম্যাটের প্রথম বিশ্ব আসর। সেবার ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে ট্রফি ঘরে তোলে ভারত। ২০০৯ ও ২০১০ সালে ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে বসে আরো দুটি আসর। এরপর থেকে প্রতি দুই বছর পর পরই টুর্নামেন্টটি আয়োজন করে আসছিল আইসিসি। মাঝে ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও করোনার বাধার পর অবশেষে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানে আবার পর্দা উঠছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের।

দারুণ প্রতিভাবান কিছু ব্যাটসম্যান, বোলার এবং অলরাউন্ডারদের আবির্ভাব ঘটেছে টি-টোয়েন্টির সুবাদে। এক দশকেরও বেশি সময় সফল পদচারণার পরও এই ফরম্যাটে দাপট-টা এশিয়ানদেরই।
ক্রিস গেইল

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বাদশাহ বলা হয় গেইলকে। এমনকি এই ফরম্যাটের সেরা ব্যাটসম্যানও মনে করা হয় তাকে। ৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার বিশালদেহী এই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বাইশ গজে বড়ই নির্দয়। বিশাল সব ছয়ে প্রায়ই বল উপড়ে ফেলেন স্টেডিয়ামের বাইরে।

পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে ৭৪টি ম্যাচ খেলে ২৯.৪২ গড়ে করেছেন ১৮৫৪ রান। তবে বিশ্বকাপে তার ব্যাট আরো ভয়ংকর। এই মঞ্চে ২৮ ম্যাচে প্রায় ৩৩ গড়ে করেছেন ৯২০ রান। টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। আর ৮০ রান করতে পারলেই মাহেলা জয়াবর্ধনের পর দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে এক হাজারি ক্লাবে ঢুকে পড়বেন ‘দ্য ইউনিভার্স বস’ গেইল।

৬০টি ছক্কা হাঁকিয়ে এই টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ডটিও তার দখলে। এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা যুবরাজ সিংয়ের ছক্কা ৩৩টি। যদিও ফাইনালের মঞ্চে এখন পর্যন্ত জ্বলে উঠতে ব্যর্থ এই ক্যারিবিয়ান দানব। ২০১২ ও ২০১৬ এর ফাইনালে করেছেন যথাক্রমে ৩ ও ৪ রান। তবে দুটি ফাইনালেই জিতেছে তার দল।

বিরাট কোহলি
বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় কোহলি আছেন চতুর্থ অবস্থানে। এই প্রতিযোগিতায় ভারত অধিনায়কের গড় তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো। মাত্র ১৬ ম্যাচ খেলে ৮৬.৩৩ গড়ে করেছেন ৭৭৭ রান। এমন অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের সুবাদে সর্বশেষ দুটি আসরেই টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন। দুটি আসরেই তার গড় ছিল ১০০ এর বেশি।
মূলত টাইমিং নির্ভর ব্যাটসম্যান কোহলি অপরাজেয় হয়ে উঠেন নক আউট পর্বে। এই পর্বে তার সর্বনিম্ন রান ৭২! তবে এখন পর্যন্ত এই প্রতিযোগিতার ট্রফি ছুঁয়ে দেখার সৌভাগ্য হয়নি সময়ের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যানের।

এবি ডি ভিলিয়ার্স
বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি রান করা খেলোয়াড়দের তালিকায় পঞ্চম অবস্থানে আছেন ‘৩৬০ ডিগ্রী ব্যাটসম্যান’ খ্যাত এই সাবেক প্রোটিয়া অধিনায়ক। একমাত্র ক্রিস গেইলই এই মঞ্চে তার চেয়ে বেশি স্ট্রাইক রেটে রান তুলতে সক্ষম হয়েছেন।
ব্যাটিংয়ের মতো আউটফিল্ড ও উইকেটের পিছনেও বেশ আক্রমণাত্মক ভিলিয়ার্স। ৩০ খেলায় ৩০ ক্যাচ নিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ক্যাচের রেকর্ডটা তাই তার দখলে। ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানো ভিলিয়ার্স উইকেটের সব দিকেই খেলতে পারতেন শটস। অদ্ভুত সব শটে রান বের করার জন্য ছিলেন বিখ্যাত।

সাকিব আল হাসান
দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র সাকিব আল হাসান। অসাধারণ ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের পরও দলীয় ব্যর্থতায় এখন পর্যন্ত এই আসরে তেমন কোন সুখস্মৃতি নেই বাংলাদেশের। ২৫ খেলায় ৫৬৭ রানের পাশাপাশি নিয়েছেন ৩০টি উইকেট। পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদির পর সাকিবই একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৫০০ এর অধিক রান এবং ৩০ উইকেট নেয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। বড় মঞ্চে তিনি কতটা ভয়ংকর গত ওয়ানডে বিশ্বকাপেই টের পেয়েছে বিশ্ব। টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসের অন্যতম সেরা একজন অলরাউন্ডার হিসেবে এবারও তার দিকে চেয়ে থাকবে টাইগারভক্তরা।

শহিদ আফ্রিদি
৩৪ ম্যাচে ৩৯ উইকেট নিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী আফ্রিদি। মারকুটে ব্যাটিংয়ের জন্য বিশ্বজুড়ে ‘বুম বুম আফ্রিদি’ নামেই অধিক পরিচিত এই পাকিস্তানি ক্রিকেটার। ২০০৯ সালে পাকিস্তানকে চ্যাম্পিয়ন করার পিছনে ব্যাট-বল দুটিতেই সমানতালে ভূমিকা রেখেছিলেন আফ্রিদি।
সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের পাশাপাশি ব্যাট হাতে করেছেন ৫৪৬ রান। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকেই নিজের মারমুখী ব্যাটিং দক্ষতার কথা বিশ্বকে জানান দেন আফ্রিদি। নিজের প্রথম ওডিআই ইনিংসেই ৩৭ বলে এক অতিমানবীয় সেঞ্চুরি করে অবাক করে দেন বিশ্বকে। ক্যারিয়ারের শেষের দিকে এসে তার ব্যাটিং সক্ষমতা কিছুটা হ্রাস পেলেও বল হাতে বরাবরই ছিলেন সফল।

লাসিথ মালিঙ্গা
ইয়র্কার বিশেষজ্ঞ মালিঙ্গা এই টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীদের তালিকায় রয়েছেন দ্বিতীয় অবস্থানে। ৩১ খেলায় নিয়েছেন ৩৮ উইকেট। সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী এক বোলিং অ্যাকশনে বল করতেন মালিঙ্গা। অপেক্ষাকৃত নিচু রিলিজ পয়েন্টের কারণে এই শ্রীলঙ্কানের ছোঁড়া ইয়র্কার ও লো ফুলটসগুলো সামলাতে বেশ হিমিশিম খেতেন ব্যাটসম্যানরা। ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপজয়ী দলের অধিনায়কও তিনি। টুর্নামেন্টের ফাইনালে ভারতকে অল্প রানে বেঁধে ফেলতেও ছিল তার ভূমিকা। ডেথ স্পেলে নিজের করা শেষ দুই ওভারে মাত্র ১১ রান দেন তিনি।

মাহেলা জয়াবর্ধনে
আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এই শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি মাহেলা জয়াবর্ধনে। এছাড়া এই টুর্নামেন্টে ১০০০ এর অধিক রান করা একমাত্র ক্রিকেটারও তিনি। ২০১৪ এর আসরটিই ছিল তার সর্বশেষ বিশ্বকাপ।দারুণ ফুটওয়ার্ক ও টাইমিংয়ের কারণে নিজের পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই প্রতিপক্ষকে রানের বন্যায় ভাসিয়েছেন এই ডানহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। তবে ২০১০ এর বিশ্বকাপটা স্বপ্নের মত কেটেছিল তার। টানা তিন খেলায় করেছিলেন যথাক্রমে ৮১, ১০০ এবং ৯৮* রান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টি২০ কাপ


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ