নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
সময়! কী আশ্চর্য ঘোরলাগা জাদুকর! শূন্যে তুড়ি মেরে পায়রা উড়ানোর মতো সে ইচ্ছেঘুড়ি ভাসিয়ে দেয় অসীমে। তাই তো বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অঙ্কে শূন্যতার শঙ্কা তাড়িয়ে জায়গা করে নেয়। এমনকি শিরোপা-স্বপ্ন পর্যন্ত। সেটাও মাত্র মাস দুয়েকের সময়ের ভেলকিতে! বাড়াবাড়ি! নয় কী?
ভাবুন তো, আগস্টের শুরুটা। জিম্বাবুয়ে থেকে মাত্রই সিরিজ জিতে ফিরেছে বাংলাদেশ! কিন্তু তিন ম্যাচের মধ্যে একটিতে হেরে। তখন কি লাল-সবুজের বিশ্বকাপ-স্বপ্নের পতাকা এমন পতপত করে উড়ছিল? প্রথম পর্ব পেরিয়ে মূল পর্বে জায়গা করে নেয়াটাই তো মনে হচ্ছিল আকাশের শেষ ঠিকানা!
এরপর অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে দুটো সিরিজ। প্রতিপক্ষের ডাকাবুকো অনেক ক্রিকেটার আসলেন না। কিউইদের বিশ্বকাপ দলের তো একজনও না..., আমাদের তাতে থোড়াই কেয়ার! কুড়ি-বিশের প্রথাবিরোধী উইকেট বানানোর ফাঁদ পাতি। বিশ্ব আসরে অমন ২২ গজ না থাকার প্রায় নিশ্চয়তায় কান পাতি না। জয়ের গর্জনে, বরং বিজয়ের অর্জনে উৎসবের সূর্যস্নান করি।
আরো অনেক বড় উৎসবের উপলক্ষ্য এনে দেবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। প্রত্যাশার সেই জলোচ্ছ্বাস আর বাঁধ মানে না। বিশ্বকাপ নিয়ে আমাদের তাই তৈরি হয় অদ্ভুত কাঙালপনা। অসীম লোভ। অবাস্তব স্বপ্ন। শূন্যতার ক্যানভাসে পূর্ণতার ছবি আঁকার দুরন্ত ইচ্ছে চাপা থাকে না। বিশ্বকাপটা আমাদের জিততেই হবে যেন! এই যে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অভিযানে গেল বাংলাদেশ, সেখানেও শিরোপার কম ভাবছি ক’জন? নিশ্চিত অসম্ভব জেনেও!
অথচ নিরেট পরিসংখ্যানের রূঢ় বাস্তবতা বলছে, এই ফরম্যাটে বাংলাদেশ নিতান্তই গড়পড়তা দল। কানা ছেলের আদুরে নাম পদ্মলোচন হলে, ‘গড়পড়তার চেয়ে একটু ভালো’ বলা যায় বড়জোর। কারণ অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ দুটোকে ব্যতিক্রমের ব্র্যাকেটে রাখলে ইতিহাসেই তো বড় দলের বিপক্ষে সাফল্য হাতেগোনা। সেই ২০০৭ সালে আবির্ভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আর কোনো পরাশক্তিকে পরাভূত করতে পারিনি আমরা। সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমান ছাড়া এই যুগচলতি ক্রিকেটে যুগোপযোগী ক্রিকেটার আর কে আছেন আমাদের, বলুন তো?
এ সব না হয় মানা গেল! তাই বলে কি বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখবে না? বিশ্বকাপে যদি লিটন দাসের ব্যাটে শিল্পের তুফান ওঠে! যদি মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহরা নির্ভরতার সমার্থক হয়ে ওঠেন! যদি সাকিবের সব্যসাচী বাঁ-হাতে ফেরে ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেই অলৌকিক বর! যদি রহস্যময়তায় মায়ায় মুস্তাফিজ হয়ে ওঠেন দুর্বোধ্য! যদি নাসুম আহমেদ, মাহেদী হাসানের ঘূর্ণিতে জাদু ছড়ায়! যদি সাইফউদ্দিন-তাসকিনদের বলে ওঠে গতির ঝড়! তাহলে?
তাহলে বাংলাদেশের পক্ষে অনেক কিছু সম্ভব। না, ট্রফি জয়টা তখনও বড্ড বাড়াবাড়ি। কিন্তু স্কটল্যান্ড, ওমান, পাপুয়া নিউগিনিকে হারিয়ে দাপটে তো সুপার টুয়েলভে ওঠা যায়। সেখানে আফগানিস্তান এবং বাছাইপর্ব পেরিয়ে আসা অন্য দলকে হারানো যায়। নিউজিল্যান্ড, এমনকি ভারত-পাকিস্তানকেও চোখ রাঙানো যায়। প্রবল প্রতিপক্ষের কারো কারো বিপক্ষে জয়ের বুনো ঘোড়াকে পোষ মানানো যায় বাড়ির বেড়ালছানার মতো। এরপর তাকিয়ে থাকা যায় সুপার টুয়েলভে নিজেদের গ্রুপের সমীকরণের দিকে। হয়তো সেমিফাইনালও তখন আর দূরের বাতিঘর হয়ে থাকবে না।
ব্যস, ওইটুকুতেই গর্ব। তাতেই মাথা উঁচু করে লড়াইয়ের অহংকার। বাংলাদেশের ক্রিকেট-যোদ্ধাদের কাছে চাওয়াটা কি খুব বেশি?
হ্যাঁ, এই ধুমধাড়াক্কা ক্রিকেটের ধাঁচটা বাংলাদেশ এখনো আত্মস্থ করতে পারেনি সেভাবে। কিন্তু সব কিছুরই তো শুরু আছে! বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টিতে সমীহ জাগানিয়া শক্তি হয়ে ওঠার শুরুটা না হয় হোক এই বিশ্বকাপের বিশ্বমঞ্চেই! আর কাগজ-কলমের হিসেব মেনেই যে সব কিছু হতে হবে, অমন দিব্যি কে দিয়েছে? তাহলে তো ট্রফির গায়ে ভারতের নাম লিখে রানার্সআপের জন্য অন্যদের লড়াইয়ে নামতে হয়! কী আশ্চর্য দেখুন, সেই ভারত ২০০৭-এর প্রথম আসরে বিশ্বকাপ জিতেছিল প্রায় দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে। এরপর আইপিএলের সৌজন্যে উন্নতি এই ফরম্যাটে। কিন্তু পরের পাঁচ আসরে একবারও শিরোপার নাগাল পায় না।
বাংলাদেশের জন্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা অমন হিসেবের বাইরে কিছু হোক। আলোকিত। উদ্ভাসিত। অলৌকিক। আমাদের বিশ্বকাপ অভিযান আঁকা হোক রং তুলির ক্যানভাসে।
এই যে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অভিযানে গেল বাংলাদেশ, সেখানেও শিরোপার কম ভাবছি ক’জন? নিশ্চিত অসম্ভব জেনেও! অথচ নিরেট পরিসংখ্যানের রূঢ় বাস্তবতা বলছে, এই ফরম্যাটে বাংলাদেশ নিতান্তই গড়পড়তা দল। কানা ছেলের আদুরে নাম পদ্মলোচন হলে, ‘গড়পড়তার চেয়ে একটু ভালো’ বলা যায় বড়জোর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।