Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

আগামীকাল বিশ্ব খাদ্য দিবস, খাদ্যের উচ্চ মূল্য নিয়ে উদ্বেগ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০২১, ৪:৪১ পিএম

খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নজিরবিহীন বিপর্যয় আসতে পারে জাতিসংঘের এমন সতর্কতা আর বৈশ্বিক ক্ষেত্রে খাদ্য পণ্যের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কার মধ্য দিয়েই চলতি বছর বিশ্ব খাদ্য দিবস (১৬ই অক্টোবর) পালিত হতে যাচ্ছে।

সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ জানিয়েছে, ‘ইথিওপিয়া, মাদাগাস্কার, দক্ষিণ সুদান এবং ইয়েমেনে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতিতে আছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বুরকিনা ফাসো এবং নাইজেরিয়ার ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীও প্রায় একই পরিস্থিতিতে পড়েছে।’ এমন দুর্ভিক্ষময় পরিস্থিতিতে থাকা অন্তত ৪ কোটি মানুষকে সহায়তার জন্য দ্রুত তহবিল গঠনের আহবান জানিয়েছে সংস্থাটি।

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক চ্যারিটি সংস্থা দা হাঙ্গার প্রজেক্টের তথ্য অনুসারে, প্রায় ৬৯ কোটি মানুষ বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ দরিদ্রতার সাথে বাস করছে, আর ৮৫ কোটি মানুষ দরিদ্রতার ঝুঁকিতে আছে কোভিডের কারণে। আবার এর মধ্যে ৬০ শতাংশই নারী। খাদ্যের আন্তর্জাতিক বড় প্রতিষ্ঠান ক্রাফট হেইনজ সতর্ক করে বলেছে যে মহামারি-পরবর্তী পরিস্থিতি আর মুদ্রাস্ফীতির কারণে ‘খাদ্যের উচ্চমূল্যের সাথেই খাপ খাইয়ে নিতে হবে’।

মহামারির কারণে অনেকে দেশেই শস্য থেকে আরম্ভ করে ভোজ্যতেলসহ কাঁচামালের উৎপাদন কমেছে। মূলত করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে নেয়া পদক্ষেপের পাশাপাশি অসুস্থতা, স্বল্প উৎপাদন ও বিতরণের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যেহেতু অর্থনীতিতে এমন পণ্যের সরবরাহ পুনরায় শুরু হয়েছে, অনেকেই হয়তো ক্রমবর্ধমান চাহিদা অনুযায়ী তা করতে পারছে না, যা দাম বাড়াতে অবদান রাখছে। পাশাপাশি উচ্চ বেতন আর জ্বালানি মূল্যও উৎপাদনকারীদের ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মার্টিন গ্রিফিতের মতে, ‘যখন দুর্ভীক্ষ দরজায় আসে, তখন এটি ভাইরাল হয়ে ওঠে।’ আর ক্রমবর্ধমান দরিদ্রতা আর খাদ্যের উচ্চ মূল্যে ঝুঁকিতে পড়ে মূলত নারী ও কন্যা শিশুরাই বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়ে। ‘পরিবারের সদস্যদের খাদ্যের যোগান দিতে নারীদের মরিয়া চেষ্টা চালাতে হয়। এর মধ্যে খাদ্যের জন্য যৌনতা যেমন আছে, তেমনি অনেককে বাল্যবিবাহের শিকার হতে হচ্ছে-যা আমি সম্প্রতি সিরিয়ায় থাকার সময় শুনেছি,’ বলছিলেন তিনি।

ফার্ম রেডিও ইন্টারন্যাশনালের প্রোগ্রাম ডেভেলপমেন্টের সিনিয়র ম্যানেজার কারেন হ্যাম্পসন বলছেন, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে আছে ছোট মাপের কৃষকরাও। তিনি বলেন, ‘দাম বাড়ার এখনকার পরিস্থিতি তাদের দু মুখো তলোয়ারের মতো- একদিকে কৃষক পরিবারগুলোকে তারা যা উৎপাদন করে না, সেসব খাবার কিনতে হয় এবং সে কারণে তাদের ব্যয় অনেক বেড়েছে যাচ্ছে। এটি তাদের ক্ষুধা ও অপুষ্টির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অন্যদিকে তাত্ত্বিকভাবেই খাদ্যমূল্যবৃদ্ধির অর্থ হলো তারা যা বিক্রি করে, সেখান থেকে তারা ভালো আয় করবে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি মানেই কৃষকদের হাতে বেশি অর্থ আসছে- এমনটি হচ্ছে না। বিশেষ করে আফ্রিকার ক্ষুদ্র মাপের কৃষকদের ক্ষেত্রে।’

উন্নত বিশ্বের মানুষ হয়তো বিলাসদ্রব্য কমাতে পারে বা বিদেশে ছুটিতে যাওয়া কমাতে পারে বা তাদের বাজেটও কাটছাঁট করতে পারে। কিন্তু এর সুফল সরাসরি অনুন্নত বিশ্বের মানুষ পায় না, বিশেষ করে যারা খাদ্যের জন্য যৌনতাকেও বেছে নিতে বাধ্য হয়। বৈশ্বিক খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জাতিসংঘ, আঞ্চলিক সংস্থা ও সরকারগুলো মানুষকে দরিদ্রতা থেকে বের করে আনতে প্রচলিত উপায়গুলো দেখতে পারে। আর বহু সাহায্য সংস্থা বিশ্বব্যাপী জোর দিয়েছে সৃষ্টিশীল ধারণার ওপর।

খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) মহাপরিচালক বলছেন, কৃষি খাদ্য পদ্ধতিতে সহায়তা, দীর্ঘমেয়াদী সহায়তার মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে এবং নষ্ট করার মতো কোন সময়ই এখন নেই। হ্যাম্পসনের মতে, গ্রামীণ জনপদে খাদ্য দরিদ্রতার আরেকটি বড় কারণ হলো - দরকারি তথ্য না জানা- বিশেষ করে বিভিন্ন বাজারে পণ্যের দাম বা আবহাওয়া বিষয়ে। এর ফলে তারা দরকষাকষি করতে পারে না যা পরিবর্তন করতে পারে ফার্ম-রেডিও।

বিশ্বব্যাপী সবাই হয়তো চিন্তা করছে যে কীভাবে পণ্যের ক্রমবর্ধমান মূল্য তারা সামলাবে, তখন অধিকারকর্মীরা আশা করছে একটি সংকট হয়তো বিশ্ব এড়াতে পারবে যদি বিশ্ব নেতারা দ্রুত কোন পদক্ষেপ নেয়। ‘আমি আশাবাদী,’ বলছেন হ্যাম্পসন কিন্তু সেটি করা সম্ভব হবে যদি ‘আমরা নারী, পুরুষ ও তরুণ কৃষকদের কথা শুনি। আমরা যদি তাদের সংলাপে অন্তর্ভুক্ত করি এবং সমবায়ের মতো পদক্ষেপ বা সৃষ্টিশীল উদ্যোগের মাধ্যমে তাদের পাশে দাড়াই। জলবায়ু পরিস্থিতিতে ফোকাস করে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে সহায়তার মাধ্যমে বাজারে সবার জন্য সমতা তৈরি ও তথ্য নিশ্চিত’ করতে পারি। সূত্র: বিবিসি বাংলা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ