বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
২. কিয়ামত দিবসে হামদের ঝান্ডা নবী (সা.)-এর হাতে থাকবে : নির্ভরযোগ্য সনদে একাধিক হাদিসে এ বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে। মুসনাদে আহমাদে মজবুত সনদে আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি : কিয়ামত দিবসে সর্বপ্রথম আমার কবর খুলবে, কোনো গর্ব নয়। আমাকে হামদের ঝান্ডা প্রদান করা হবে, কোনো গর্ব নয়। কিয়ামতের দিন আমি সকল মানুষের সরদার হব, কোনো গর্ব নয় এবং সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী আমি হব, কোনো গর্ব নয়। (মুসনাদে আহমাদ : ১২৪৬৯)।
৩. জান্নাতের দরজা সর্বপ্রথম তাঁর জন্য খোলা হবে : সহীহ মুসলিমে আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : কিয়ামতের দিন আমি জান্নাতের দরজায় দাঁড়াব এবং দরজা খুলতে বলব। জান্নাতের প্রহরী জিজ্ঞেস করবেন, আপনি কে? বলব, মুহাম্মাদ। বলবেন, হ্যাঁ, আপনার বিষয়েই আমাকে হুকুম করা হয়েছে; আপনার আগে কারো জন্য যেন (জান্নাতের দরজা) না খুলি। (সহীহ মুসলিম : ১৯৭)।
৪. নবী (সা.) সায়্যিদুন নাস এবং সায়্যিদু উল্দি আদাম : শাফাআতের দীর্ঘ হাদিসটি মুতাওয়াতির। এর সারকথা এটাই যে, আল্লাহ তাআলা যে নবী (সা.)-কে সকল বনী আদমের সরদার বানিয়েছেন, তার প্রকাশ সেখানে ঘটাবেন। মানুষেরা হাশরের ময়দানের ভয়াবহতায় পেরেশান হয়ে আদম (আ.) থেকে ঈসা (আ.) পর্যন্ত বিশেষ বিশেষ ফজিলত ও মর্যাদার অধিকারী নবীগণের নিকট সুপারিশের জন্য যাবে।
কিন্তু সবশেষে তাদের খাতামুন নাবিয়্যীন হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসতে হবে। শাফাআতের হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই বাণী সহীহ সনদে প্রমাণিত, তিনি বলেন : কিয়ামত দিবসে আমি সকল মানুষের সরদার হব। (সহীহ বুখারী : ৪৭১২)।
সকল নবী-রাসূল আদম আলাইহিস সালামেরই সন্তান। অতএব তিনি যখন সকল আদম সন্তান এবং সমস্ত মানুষের সরদার তাহলে তিনি সকল নবী-রাসূলেরও সরদার। ইমামুল আম্বিয়া এবং সায়্যিদুল মুরসালীন। সেজন্য সাহাবায়ে কেরাম থেকে অদ্যাবধি নবী (সা.)-এর এই দুই বৈশিষ্ট্য উম্মতের মাঝে স্বীকৃত।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিশিষ্ট সাহাবী আবু হুরায়রা (রা.) বলেন : নবীগণের সরদার পাঁচজন। (সা.) এই পাঁচজনের মধ্যেও সরদার। নূহ (আ.), ইবরাহীম (আ.), মূসা (আ.), ঈসা (আ.) এবং মুহাম্মাদ (সা.)। (মুসতাদরাকে হাকেম : ৪০০৭)।
মহান সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. দরূদ শরীফের শব্দ এভাবে শেখাতেন, যেটা তাঁর থেকে নির্ভরযোগ্য সনদে বর্ণিত আছে : হে আল্লাহ! আপনি আপনার যাবতীয় রহমত, বরকত ও অনুগ্রহ বর্ষণ করুন সায়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুত্তাকীন মুহাম্মাদের ওপর, যিনি আপনার বান্দা ও রাসূল। কল্যাণের ইমাম, কল্যাণের সরদার এবং রহমতের রাসূল...। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, খ. ২, পৃ. ২১৩, হাদিস ৩১০৯)।
যেহেতু নবী (সা.)-এর এই বৈশিষ্ট্যটি শরীয়তের দলিল দ্বারা প্রমাণিত এবং তা ঈমানের সঙ্গে সম্পর্কিত সে জন্য এ বিষয়টি মুসলমানদের আকীদার কিতাবগুলোতেও বিবৃত হয়েছে। ইসলামী আকীদার নির্ভরযোগ্য ও সর্বজনস্বীকৃত কিতাব আলআকীদাতুত তহাবিয়্যাহ। তাতে হানাফী ইমাম তহাবী রাহ. ইমাম আবু হানীফা, ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ (রাহ.)-এর সূত্রে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদাসমূহ আলোচনা করেছেন।
এই গ্রন্থে নবী (সা.) সম্পর্কিত আকীদায় এই বক্তব্য উল্লেখ আছে : তিনি সর্বশেষ নবী, মুত্তাকীদের ইমাম, রাসূলগণের সরদার এবং রাব্বুল আলামীনের বন্ধু। ইমাম বায়হাকী (রাহ.) শুআবুল ঈমান গ্রন্থে (২/১৭৮) নবী (সা.)-এর বৈশিষ্ট্যের আলোচনায় লেখেন : নবী (সা.)-এর একটি বৈশিষ্ট্য হলো, তিনি সায়্যিদুল মুরসালীন-নবীগণের সরদার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।