বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কোরআন মাজীদ নিজে তিলাওয়াত করলে যেমন ফায়েদা ও সওয়াব, তেমনি অন্যের তিলাওয়াত শোনায়ও অনেক ফায়েদা ও সওয়াব। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত বিখ্যাত হাদীস, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের একটি হরফ তিলাওয়াত করবে তার জন্য রয়েছে একটি নেকী। আর প্রতিটি নেকী দশ গুণ বৃদ্ধি পাবে। আমি বলছি না, ‘আলিফ লাম মীম’ একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ, মীম একটি হরফ। (জামে তিরমিযী : ২৯১০)।
অর্থাৎ কেউ যদি শুধু ‘আলিফ লাম মীম’ তিলাওয়াত করে তাহলেও ত্রিশ নেকী লাভ করবে। এভাবে যেকোনো সূরা তিলাওয়াত করা হবে তার প্রতি হরফে কমপক্ষে দশটি নেকী আল্লাহ তাআলা দান করবেন। কোরআনের একেকটি আয়াতে একেকটি সূরায় কতগুলো করে হরফ থাকে! সুবহানাল্লাহ।
হযরত আবু উমামা রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি : তোমরা কোরআন তিলাওয়াত করো। কেননা, কোরআন কিয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশকারী হিসাবে হাজির হবে। (সহীহ মুসলিম : ৮০৪)। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত নবী (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন রোজা ও কোরআন সুপারিশ করবে। তখন তাদের সুপারিশ কবুল করা হবে। (মুসনাদে আহমাদ : ৬৬২৬)।
আর তিলাওয়াত শোনার বিষয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন : যখন কোরআন তিলাওয়াত করা হয়, তখন তা মনোযোগ দিয়ে শোনো এবং চুপ থাকো। এতে তোমাদের প্রতি রহমত নাযিল হবে। (সূরা আরাফ : ২০৪)।
আরেক জায়গায় মুমিনদের গুণাবলি প্রসঙ্গে বলেন : যখন তাদের সামনে তাঁর আয়াত তিলাওয়াত করা হয় তখন তাদের ঈমান বাড়ে এবং তারা তাদের প্রতিপালকের ওপর ভরসা করে। (সূরা আনফাল : ২)। হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের একটি আয়াত শুনবে তার জন্য দ্বিগুণ সওয়াব। যে আল্লাহর কিতাবের একটি আয়াত শিখবে কিয়ামতের দিন এই আয়াত তার জন্য নূর হয়ে প্রকাশ পাবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক : ৬০১৩)।
রাসূলে কারীম (সা.)ও সাহাবীদের থেকে তিলাওয়াত শুনতেন। এক হাদীসে এসেছে, নবী (সা.) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-কে বললেন, আমাকে কোরআন তিলাওয়াত করে শোনাও। ইবনে মাসউদ রা. বললেন, আমি আপনাকে তিলাওয়াত করে শোনাবো, অথচ আপনার ওপর কোরআন নাযিল করা হয়েছে!
রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমি চাই অন্যদের তিলাওয়াত শুনি। তিনি বলেন, তখন আমি সূরা নিসা তিলাওয়াত করতে শুরু করলাম। যখন ১৪১ আয়াত পর্যন্ত পৌঁছলাম : তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, একটু থামো। আমি দেখলাম তাঁর দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। (সহীহ বুখারী : ৫০৫০)।
বিশুদ্ধ ও সাবলীলভাবে যারা কোরআন মাজীদ তিলাওয়াত করতে পারে তাদের জন্য যেমন মর্যাদা ও ফজিলত রয়েছে তেমনি মর্যাদা ও ফজিলত রয়েছে, যারা কষ্ট করে আটকে আটকে তিলাওয়াত করে তাদের জন্যও। এ প্রসঙ্গে আম্মাজান আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যারা কোরআনে (তিলাওয়াতে) পারদর্শী, তারা থাকবে সম্মানিত ও অনুগত ফেরেশতাদের সঙ্গে। আর যারা খুব কষ্ট করে আটকে আটকে তিলাওয়াত করে, তাদের জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব। (সহীহ মুসলিম : ৭৯৮)।
কুরআন মাজীদ যারা হিফজ করবে, নিয়মিত তিলাওয়াত করবে এবং কোরআন অনুযায়ী আমল করবে, তাদের প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : কোরআনওয়ালা (কোরআন শিক্ষালাভকারী ও তার হক আদায়কারীকে জান্নাতে) বলা হবে, পড়তে থাকো এবং আরোহণ করতে থাকো। আর ধীরে ধীরে তিলাওয়াত করো, যেমন ধীরে তিলাওয়াত করতে দুনিয়ায়। তোমার মর্যাদা হবে সেখানে, যেখানে তুমি তিলাওয়াত করে পৌঁছবে। (জামে তিরমিযী : ২৯১৪)।
হে আল্লাহ, আপনি আমাদেরকে কুরআনওয়ালা বানিয়ে দিন। কুরআন বুকে ধারণ করার, নিয়মিত তিলাওয়াত করার, অন্যদের তিলাওয়াত শুনে ফায়েদা অর্জন করার, আয়াতের অর্থ, ভাব ও মর্ম নিয়ে চিন্তা-ফিকির করার এবং কোরআন অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফীক দান করুন। কোরআনকে আমাদের সুখ-দুঃখের সঙ্গী বানিয়ে দিন। কোরআনের মাধ্যমে আপনার নৈকট্য লাভ করা সহজ করে দিন- আমীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।