Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

টুঙ্গিপাড়ায় বাড়তি আয়ের দুয়ার খুলছে কৃষকের

প্রকাশের সময় : ১৪ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গোপালগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জলজ উদ্ভিদ কচুরিপানার ধাপে ভাসমান সবজি ও মসলা চাষাবাদের মাধ্যমে কৃষক জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রস্তুত হচ্ছেন। টুঙ্গিপাড়া উপজেলা বন্যা ও জলাবদ্ধপ্রবণ এলাকা। বর্ষা মৌসুমে এ উপজেলার অধিকাংশ জমি পানির নিচে চলে যায়। কৃষকের কোনো কাজ থাকে না। টুঙ্গিপাড়ায় সরকার জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের আওতায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় ভাসমান সবজি ও মসলা উৎপাদন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এ উপজেলার কৃষক কচুরিপানা দিয়ে ভাসমান ধাপ তৈরি করে সবজি ও মসলা চাষ করে বিকল্প আয়ের সংস্থান করছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের চাষাবাদের সাথে কৃষক নিজেদের খাপ খাইয়ে নিচ্ছেন। ধাপের সবজিতে সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। বাজারে সুস্বাদু ও নিরাপদ এ সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ফলে কৃষক এ সবজির বেশি দাম পেয়ে লাভবান হচ্ছেন। টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, এ প্রকল্পের আওতায় ২০টি গ্রামে ব্যাপকভাবে ভাসমান ধাপে মসলা ও সবজির চাষ করা হয়েছে। উপজেলার অন্তত এক হাজার কৃষক পরিবার ৫০/৭০ ফুট দৈর্ঘ্যের প্রায় পাঁচ হাজার ধাপ তৈরি করে ঢেঁড়স, গিমাকলমী, পুঁইশাক, বরবটি, শসা, করলা, বাংগী, হলুদ, লালশাক, ডাটাশাক ইত্যাদি ফসল আবাদ করে। টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় এ বছর প্রায় ৭৫ বিঘা ভাসমান বেড তৈরি করা হয়েছে। এতে সবজি উৎপাদিত হয়েছে প্রায় ২০০ টন। টুঙ্গিপাড়া উপজেলার মিত্রডাঙ্গা গ্রামের কৃষক শক্তি কীর্ত্তনীয়া বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষরা শত বছর আগে থেকেই কচুরির ধাপে ভাসমান চাষ শুরু করেন। সনাতন এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে লাভ হতো না। আমাদের এলাকায় সরকার জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের আওতায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় ভাসমান সবজি ও মসলা উৎপাদন প্রকল্প গ্রহণ করে। আমরা এ প্রকল্পের আওতায় টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কচুরিপানার ধাপে চাষাবাদ করে লাভবান হচ্ছি। মাটিবিহীন এসব চাষাবাদ দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ টুঙ্গিপাড়ায় ছুটে আসছেন। টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বন্যাবাড়ি গ্রামের সনজিৎ বিশ্বাস বলেন, এক শতক পরিমাণ ধাপ তৈরি করতে আমাদের প্রায় ৪ হাজার টাকা খরচ হয়। আর আয় হয় প্রায় ৮০০০ টাকা। খরচ বাদে প্রতি শতক ধাপ থেকে লাভ থাকে ৪ হাজার টাকা। ভাসমান ধাপে সবজি উৎপাদন শেষে ওই ধাপকে জমিতে ছড়িয়ে দিয়ে আমরা জৈবসার হিসেবে ব্যবহার করি। শীত মৌসুমে ধাপের বদৌলতে বিনা চাষে ও রাসায়নিকমুক্ত সবজি উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছি। বন্যাবাড়ী গ্রামের কৃষক বরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, আমি এ বছর ১০০টি ভাসমান ধাপ তৈরি করি। আমার খরচ পড়ে প্রায় ৩ লাখ টাকা। এ থেকে আমি প্রায় ৬ লাখ টাকা আয় করতে পারব বলে আশা করছি। আরো প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা পেলে এ অঞ্চলের ভাসমান সবজি দিনে দিনে অনেক বৃদ্ধি পাবে এবং আরো বেশি মানসম্পন্ন হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। চাপরাইল গ্রামের কৃষক শিশির বিশ্বাস বলেন, ভাসমান সবজি চাষ আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়েছে। আমরা কৃষি বিভাগের পরামর্শে সার ও কীটনাশকের ব্যবহার ছাড়াই আধুনিক পদ্ধতিতে ধাপে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করছি। বাজারে এ সবজির চাহিদা ও দাম বেশি। বেশি দামে সবজি বিক্রি করে আমরা লাভবান হচ্ছি। টুঙ্গিপাড়া উপজেলার জোয়ারিয়া ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিদ্যুৎ কুমার ম-ল বলেন, আমি এই ব্লকে অনেক দিন যাবৎ কাজ করছি। আমার ব্লকের কৃষকরা খুবই কর্মঠ। কৃষি বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ গ্রহণ করে তারা জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুকি মোকাবেলায় আধুনিক ভাসমান চাষাবাদের দিকে ঝুঁকছে। টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মোঃ জামালউদ্দিন বলেন, প্রতি বছরই টুঙ্গিপাড়ায় ভাসমান ধাপে সবজি ও মসলা আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আশপাশের অন্য উপজেলায় বীজতলা, সবজির চারা উৎপাদন অন্য কাজে কচুরিপানার ধাপকে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু টুঙ্গিপাড়ার ভাসমান চাষাবাদ পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। কৃষকের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছে। শীতের সবজি উৎপাদনে ধাপকে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. এইচ এম মনিরুজ্জামান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নি¤œাঞ্চলের কৃষকদের কচুরিপানা দিয়ে ভাসমান সবজি চাষ একটি চমৎকার সমাধান। টুঙ্গিপাড়ায় প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সহায়তা বাড়িয়ে সবজি ও মসলার উৎপাদন প্রায় ৫ থেকে ৬ গুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব। এ সবজির আবাদ সম্প্রসারিত করা হলে বর্ষাকালে সবজির সংকট মোকাবেলা করা সম্ভব।



 

Show all comments
  • Nurul Mamun ১৩ অক্টোবর, ২০১৬, ১০:৫৫ পিএম says : 0
    লেখাটি পরে খুব ভাল লাগল। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে আমাদের দেশের কৃষিকে সে সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। সে জন্য ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ একটি লাগসই প্রযুক্তি। ধন্যবাদ একটি সুন্দর লেখা/ সংবাদ পরিবেশনের জন্য।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টুঙ্গিপাড়ায় বাড়তি আয়ের দুয়ার খুলছে কৃষকের
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ