বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
নবী কারীম (সা.)-কে আল্লাহ তাআলা অন্যান্য নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাতু ওয়াসসালাম থেকে অনেক বিষয়ে স্বাতন্ত্র্য দান করেছেন। তাঁকে বিশেষভাবে অনেক বৈশিষ্ট্য দান করেছেন।
সেসব বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট্য হলো, আল্লাহ তাআলা তাঁর মাধ্যমে নবুওত ও রিসালাতের ধারা সমাপ্ত করেছেন; তাঁকে ‘খাতামুন নাবিয়্যীন’ হওয়ার মর্যাদা দান করেছেন এবং এই উপাধিতে তাঁকে অভিষিক্ত করে কুরআনে কারীমে ঘোষণাও করে দিয়েছেন। তাঁর নবুওত ও রিসালাতকে ব্যাপক করে দিয়েছেন। বর্ণ, গোত্র, ভাষা ও ভূখণ্ড সবকিছু ছাড়িয়ে কিয়ামত অবধি সকলের জন্য তাঁকে রাসূল বানিয়েছেন। সবার ওপর তাঁর আনুগত্য ফরজ করেছেন। তাঁকে নবুওত দানের পর দুনিয়াবী সফলতা ও পরকালীন মুক্তিকে তাঁর প্রতি ঈমান ও তাঁর অনুসরণের মধ্যে সীমিত করে দিয়েছেন।
অন্য অনেক বৈশিষ্ট্য ও ফজিলতের মতো এই দুই বৈশিষ্ট্যও কুরআনে কারীমে স্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে যেমনিভাবে তাঁর খাতামুন নাবিয়্যীন হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তেমনি তাঁকে রাহমাতুল লিলআলামীন খেতাবও দান করেছেন। (দ্র. সূরা আহযাব : ৪০; সূরা আম্বিয়া : ১০৭)। আল্লাহ তাআলার স্পষ্ট ঘোষণা : আমি তো তোমাকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। (সূরা সাবা : ২৮)।
কুরআনে কারীমে বর্ণিত নবী (সা.)-এর অন্যান্য গুণ ও বৈশিষ্ট্যের আলোচনা যদি নাও করা হয় তবু শুধু এই দুই বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমেই তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব এবং ‘সায়্যিদুন নাস’ (অন্য শব্দে সায়্যিদু উল্দি আদাম এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন) হওয়া প্রমাণিত হয়ে যায়। কিন্তু এ নিবন্ধে এই বাস্তবতাটি কুরআন কারীম থেকে পেশ না করে হাদিস শরীফ, সাহাবায়ে কেরামের বাণী এবং ইজমা তথা মুসলিম উম্মাহর ঐকমত্যের আলোকে পেশ করব।
শরীয়তের যে কোনো দলিলের মাধ্যমে কোনো বিষয় সাব্যস্ত হয়ে গেলে মুমিন সেটাকে সত্য ও সঠিক বলে মেনে নেয়। গোমরাহ লোকদের মতো সে এই হঠকারিতা করে না যে, অমুক দলিলে প্রমাণিত হলে মানব, নতুবা মানব না। কেননা এ ধরনের হঠকারিতা কুফর। কুরআন যেসব বিষয়কে দ্বীন ও শরীয়তের দলিল সাব্যস্ত করেছে সবগুলোই দলিল। আর দলিলের মাধ্যমে প্রমাণিত সকল বিষয় সত্য এবং সঠিক। শরয়ী দলিলের মাধ্যমে প্রমাণিত কোনো বিষয়কে মিথ্যা বলাটাই স্বয়ং মিথ্যা এবং স্পষ্ট ভ্রষ্টতা।
হাদিসে বর্ণিত কিছু বৈশিষ্ট্য : ১. নবী (সা.) হলেন ইমামুন নাবিয়্যীন। সর্বপ্রথম তাঁরই সুপারিশের অনুমতি লাভ হবে এবং সর্বপ্রথম তাঁর সুপারিশই কবুল করা হবে। শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা (সা.) সমস্ত নবী-রাসূলের ইমামÑ এই বিষয়টি আল্লাহ তাআলা একবার মেরাজের রজনীতে প্রকাশ করেছিলেন। সে রাতে মসজিদে আকসায় সকল নবী তাঁর ইকতিদা করে নামাজ আদায় করেন। এই বিষয়টি বিভিন্ন সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
এই বিষয়টি আল্লাহ তাআলা দ্বিতীয়বার প্রকাশ করবেন সমস্ত বনী আদমের উপস্থিতিতে হাশরের ময়দানে। উবাই ইবনে কা’ব রা. থেকে শক্তিশালী সনদে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন : কিয়ামত দিবসে আমি সকল নবীর ইমাম হব। তাঁদের খতিব হব এবং শাফাআতকারীও হব। (এটা আল্লাহর নিআমত,) কোনো গর্ব নয়। (মুসনাদে আহমাদ : ২১২৪৫; জামে তিরমিযী : ৩৯৪১)।
এমনিভাবে নির্ভরযোগ্য সনদে জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন : আমি রাসূলগণের সরদার; কোনো গর্ব নয়। আমি সর্বশেষ নবী; কোনো গর্ব নয়। আমি সর্বপ্রথম সুপারিশকারী; কোনো গর্ব নয়। সর্বপ্রথম আমার সুপারিশই কবুল করা হবে; কোনো গর্ব নয়। Ñসুনানে দারেমী, খ. ১, পৃ. ২৪৩ (ফাতহুল মান্নান) হাদিস ৫১)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।