বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সৃজিত কয়েক লাখ শিশু গাছের বেশিরভাগই ছত্রাকবাহী মড়কে মরে যাচ্ছে। বন বিভাগ ও বন গবেষণা ইনস্টিটিউট এসব গাছ রক্ষায় এখনো তেমন টেকসই ও সহজসাধ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্টসহ বঙ্গোপসাগর থেকে ধেঁয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় প্রতিরোধ ব্যবস্থা ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। গত দেড় দশকে ‘সিডর, আইলা, মহাসেন, বুলবুল ও ইয়াশ’ এর তান্ডবে উপকূলীয় এলাকায় সৃজিত প্রায় সোয়া ২ লাখ হেক্টর বনভূমি ইতোমধ্যে ক্ষত-বিক্ষত।
সংক্রমণ রোধে বন বিভাগ থেকে নতুন করে শিশু গাছ রোপন বন্ধসহ সাধারণ মানুষকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। ‘ফুজরিয়ান সুলাবিন’ নামের এক ধরনের ছত্রাকবাহী রোগ থেকে শিশু গাছসমূহ রক্ষায় কঠিন কিছু পদ্ধতি অনুসরণের পাশাপাশি এককভাবে শিশুগাছের বাগান উত্তোলনকে নিরুৎসাহিত করার কথা বলেছে বন গবেষণা ইনস্টিটিউট।
ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ১২ হাজার কিলোমিটার উপকূলীয় বাঁধসহ বিভিন্ন ধরনের রাস্তার ধারে কয়েক লাখ বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগিয়েছে বন বিভাগ। এছাড়া উপকূলে জেগে ওঠা নতুন চরসহ পুরনো চরাঞ্চলে প্রায় সোয়া ২ লাখ হেক্টর জমিতে বনায়নের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা ঝড় জলোচ্ছ্বাসের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক ঢাল তৈরি করা হয়েছে। এসব বনভূমির কারণে দেশের বিশাল উপকূলীয় এলাকায় ইতোমধ্যে অনেক ভূমি উদ্ধার ছাড়াও ঐসব এলাকায় বসবাসরত মানুষের টেকসই জীবন জীবিকা অনেকটাই নিরাপদ করাও সম্ভব হয়েছে। অনেক চরাঞ্চল মূল ভূখন্ডের সাথেও যুক্ত হয়েছে ইতোমধ্যে। তবে পরিবেশবিদদের মতে ভূখন্ড উদ্ধারের চেয়েও এসব সৃজিত বনভূমি সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে বঙ্গোপসাগর থেকে ধেঁয়ে আসা ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে উপকূলসহ দক্ষিণাঞ্চলের জানমাল রক্ষায়।
গত ১৫ বছরে একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় বনভূমি ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে। সাথে উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী প্রকল্পের আওতায় ১২ হাজার কিলোমিটার বেড়িবাঁধসহ দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক হাজার কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, উপজেলা ও জেলা সংযোগসহ পল্লী যোগাযোগ অবকাঠমোর রাস্তার ধারের শিশু গাছ ছত্রাকবাহী মড়কে মরে যাচ্ছে।
বিষয়টি বন বিভাগকেও ভাবাচ্ছে। এ ব্যাপারে পটুয়াখালী উপকূলীয় বনোৎপাদন বিভাগের বন কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন শিশু গাছের মড়কের কথা স্বীকার করে জানান, আমরা সরেজমিনে এসব গাছের সংখ্যা যাচাই বাছাই করছি। আগামী দিন পনেরোর মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন হলে জেলা পরিবেশ কমিটির সভায় বিষয়টি উপস্থাপনের পাশাপাশি বন অধিদফতরকেও তা জানিয়ে দিক নির্দেশনা চাওয়া হবে।
বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের বরিশাল প্লান্টেশন ট্রায়াল ইউনিটের বিভাগীয় কর্মকর্তার সাথে শিশু গাছের মড়ক নিয়ে আলাপ করা হলে বিষয়টি নিয়ে বন বিজ্ঞানীরাও উদ্বিগ্ন বলে জানান তিনি। ইনস্টিটিউটের একজন বিজ্ঞানী বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছেন। গবেষণার প্রাথমিক ফলাফলে ‘ফুজারিয়ান সুলাবিন’ নামের এক ধরনের ছত্রাককে এ মড়কের জন্য চিহ্নিত করে কোন একক শিশু গাছের বাগান না করাসহ রাস্তার ধারেও এক নাগাড়ে এ ধরনের গাছ রোপন না করার পরামর্র্শ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি এখনো জীবিত শিশুগাছসমূহ ছত্রাক থেকে রক্ষায় কীটনাশক প্রয়োগের কথাও জানিয়েছেন ওই বন বিজ্ঞানী। তবে আক্রান্ত গাছ রক্ষার কোন পদ্ধতি এখনো উদ্ভাবন করা যায়নি বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে বন অধিদফতরের উপক‚লীয় বন সংরক্ষক মো. হারুন আর রশিদ জানান, উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী প্রকল্পসহ বিভিন্ন সময়ে দক্ষিণাঞ্চলে যে বিপুল সংখ্যক শিশু গাছ রোপন করা হয়েছিল, তার বেশিরভাগই মড়কে মরে যাচ্ছে। এ সঙ্কট নিরসনে বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরামর্শে কাজ করছে বন বিভাগ। পাশাপাশি নতুন করে শিশুগাছ রোপনকে সম্পূর্ণভাবে নিরুৎসাহিত করার কথাও জানান তিনি। ইতোমধ্যে বন বিভাগের নার্সারিসমূহে শিশুগাছের চারা উত্তোলন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন বন সংরক্ষক।
উল্লেখ্য, বঙ্গোসাগরের কোল ঘেঁষে ৭১০ কিলোমিটার উপকূলীয় তটরেখার ১৯টি জেলার ৪৮টি উপজেলার প্রায় এক কোটি মানুষের বাস। এ বিশাল মানব গোষ্ঠীসহ হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষায় সৃজিত উপকূলীয় বনভূমি এবং উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী ‘প্রাকৃতিক ঢাল’ হিসেবে কাজ করছে। পরিবেশবিদদের কাছে এসব বনভূমি ‘প্রাকৃতিক ভারসাম্যের রক্ষাকবজ’ হিসেবেও বিবেচিত। কিন্তু ঝড়-ঝঞ্ঝার বিরুদ্ধে লড়াই করে উপকূলীয় বনভূমি বিনষ্টসহ দক্ষিণাঞ্চলের শিশুগাছের মড়ক পরিবেশকে ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
এদিকে দক্ষিণাঞ্চলসহ উপকূলীয় এলাকায় শিশুগাছের পরিবর্তে তাল গাছ রোপনের একটি নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে বন গবেষণা ইনস্টিটিউট। তালগাছ ঝড়-ঝঞ্ঝার বিরুদ্ধে যেমনি টেকসই, তেমনি তা বজ্রপাতের হাত থেকেও জানমাল রক্ষায় অধিকতর কার্যকরী বলে ইনস্টিটিউটের বরিশাল গবেষণা কেন্দ্রর বিভাগীয় কর্র্মকর্তা জানিয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।