বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
দাওয়াতের প্রথম দিকের ওই ঘটনা তো আমাদের সবারই জানা আছে। সাফা পাহাড়ের ঘটনা। সহীহ বুখারিতে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, (কোরআন মাজীদে নিকটাত্মীয়দের দাওয়াতের আদেশ নাযিল হওয়ার পর) নবী (সা.) সাফা পাহাড়ে উঠলেন এবং উচ্চস্বরে বললেন, ‘ইয়া সাবাহাহ্!’ অর্থাৎ বিপদ! বিপদ! কোরাইশের লোকেরা পাহাড়ের সামনে উপস্থিত হলো। তিনি তাদের লক্ষ্য করে বললেন : আমি যদি তোমাদের বলি যে, একটি শত্রুদল এই পাহাড়ের ওপার থেকে তোমাদের ওপর আক্রমণ করবে তোমরা কি আমার কথা বিশ্বাস করবে?
সকলে বলল : আমরা আপনাকে কখনো মিথ্যা বলতে দেখিনি। তখন তিনি বললেন, আমি তোমাদের জন্য এক কঠিন আযাবের আগের সতর্ককারী। (সহীহ বুখারি : ৪৯৭১)। এই ঘটনায় অনেকগুলো বিষয় রয়েছে। তবে এখানে প্রাসঙ্গিক বিষয়টি হচ্ছে নবী (সা.) সম্পর্কে তার জাতির সাক্ষ্য : আমরা কখনো আপনাকে মিথ্যা বলতে দেখিনি।
ইমাম বুখারি রাহ. সহীহ বুখারিতে হিরাক্লিয়াসের সাথে আবু সুফিয়ানের সাক্ষাৎ ও কথোপকথনের বিখ্যাত ঘটনা বর্ণনা করেছেন, আবু সুফিয়ান তখনো ইসলাম কবুল করেননি। তিনি ব্যবসার উদ্দেশ্যে শামে গিয়েছিলেন। শাম ওই সময় বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল, সম্রাট কোনো কারণে শামে অবস্থান করছিলেন।
রাসূলে কারীম (সা.) এর আগমনের সংবাদ তার নিকট পৌঁছেছিল। তিনি বিষয়টি সম্পর্কে আরো জানতে চাচ্ছিলেন। তো আদেশ দিলেন, এখানে যদি আরবের কেউ থাকে তাকে আমার কাছে নিয়ে আস, আমি আরবের নবী সম্পর্কে কিছু জানতে চাই। আবু সুফিয়ান শামে ছিলেন, তাকে হিরাক্লিয়াসের সামনে হাজির করা হলো। হিরাক্লিয়াস অনেকগুলো প্রশ্ন করলেন। এর মধ্যে একটি প্রশ্ন ছিল : তিনি নবুওতের দাবি করার আগে তোমরা কি কখনো তাকে মিথ্যাকথনে অভিযুক্ত করেছ?
আবু সুফিয়ান বলেন, আমি উত্তরে বললাম, না, এমন অভিজ্ঞতা আমাদের কখনো হয়নি; আমরা তাকে মিথ্যাবাদিতার অভিযোগে অভিযুক্ত করতে পারিনি। হিরাক্লিয়াস যে বিষয়গুলো জানতে চেয়েছিলেন সে সম্পর্কে আবু সুফিয়ানের উত্তর শোনার পর তিনি নিজেই একে একে সেই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো বিশ্লেষণ করেছেন।
সত্যবাদিতা সংক্রান্ত প্রশ্নের ব্যাপারে বললেন, আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি, তোমরা কি তাকে নবুওত দাবির আগে মিথ্যাবাদিতার অভিযোগে অভিযুক্ত করতে পেরেছ? তুমি বলেছ, অভিযুক্ত করতে পারোনি। এ থেকে আমি বুঝতে পেরেছি, তিনি সত্য নবী। কারণ যে ব্যক্তি মানুষের ব্যাপারে মিথ্যা বলেন না, তিনি আল্লাহর ব্যাপারেও মিথ্যা বলতে পারেন না। (পুরো কথোপকথনটি সহীহ বুখারিতে (হাদীস নং ৭) আছে। যে কেউ তা দেখে নিতে পারেন)।
এটি হচ্ছে তাঁর সম্পর্কে এমন এক ব্যক্তির সাক্ষ্য, যিনি ঐ সময় পর্যন্ত তাঁর প্রাণের দুশমন ছিলেন এবং তার মর্যাদাহানীর সুযোগ খুঁজছিলেন। রাসূলে কারীম (সা.) এর উম্মত ও অনুসারী হিসেবে আমাদের কর্তব্য, জীবনের সকল ক্ষেত্রে সত্যবাদিতাকে অবলম্বন করা। তিনি নিজেও ছিলেন শ্রেষ্ঠ সত্যবাদী আর তাঁর শিক্ষা ও সাহচর্যে গড়ে উঠেছিল সত্যবাদী ও সত্যনিষ্ঠদের এক মহান জামাত-সাহাবায়ে কেরাম।
কীভাবে রাসূলে কারীম (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে সত্যবাদিতার শিক্ষা দান করেছেন। কীভাবে তাদের তরবিয়াত করেছেন সেটাও নবী-জীবনের আরেক উজ্জ্বল অধ্যায়। আল্লাহপাক যদি তাওফীক দান করেন তাহলে ইনশাআল্লাহ অন্য অবসরে এই বিষয়ে কিছু বলার চেষ্টা করব। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে এই মহান গুণ অর্জন করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।