বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
দোজাহানের বাদশাহ নবী মোহাম্মাদ (সা.) সারা জাহানের নবী, বিশ্ব নবী। এই হাকীকতটি মহান আল্লাহপাক এভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে : (হে প্রিয় হাবীব (সা.)! নিশ্চিয়ই আমি আপনাকে বিশ্ব মানবের জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি, কিন্তু অধিকাংশ লোক তা’ জানে না। (সূরা সাবা : ২৯)। এই আয়াতে কারীমায় উল্লেখিত ‘কাফ্ফাতান্’ শব্দের দ্বারা বুঝা যায় যে, পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) সমগ্র জ্বিনজাতি, সমগ্র মানবজাতি, আরবি এবং আজমি, অতিতের, বর্তমানের এবং ভবিষ্যতের সকলের জন্যই তিনি নবী। (আল্লামা মোজাদ্দেদে মিল্লাত আশরাফ আলী থানুবী (রহ:)।
রাসূলে পাক (সা.) এর নাবুওয়াত ও রিসালাতের ব্যাপ্তি ও পরিধিকে মহান রাব্বুল আলামীন এভাবে তুলে ধরেছেন। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : হে প্রিয়নবী (সা.)। ‘নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সাক্ষ্যদানকারী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। এবং নির্দেশক্রমে তাঁর পথে আহ্বানকারী ও প্রোজ্জল প্রদীপরূপে। আপনি মুমিনদের শুভসংবাদ দিন যে, তাদের জন্য মহান ফজিলত ও অনুগ্রহ রয়েছে।’ (সূূরা আহযাব : আয়াত ৪৫-৪৭)। এই আয়াতে কারীমায় সাইয়্যেদুল মুরসালীন মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে সিরাজাম মুনীরা’ অর্থাৎ প্রোজ্জল প্রদীপরূপে বিশেষিত করা হয়েছে। এই বিশেষণটি আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত বিশ্ব জগতের কোনো কিছুর ক্ষেত্রেই ব্যবহার করেননি। কারণ, এই বিশেষণটি হাবীবে কিবরিয়া মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) এরই প্রাপ্য। তিনিই হলেন আল্লাহপাকের গুণাবলির মূর্ত প্রকাশ। তিনিই মানুষকে শিখিয়েছেন : ‘তোমরা আল্লাহর গুণাবলি অবলম্বন করো’। তাই, মানুষ তার সীমিত মানবীয় পরিমণ্ডলের মধ্যে থেকেও তার যাবতীয় মানবীয় দূর্বলতা সাথে নিয়ে আল্লাহর যতসব আখলাক ও গুণের প্রতিচ্ছবি সিরাজাম মুনীরার মাধ্যমে নিজের মধ্যে সৃষ্টি করতে সক্ষম। মানুষ কখনো আল্লাহ হতে পারবে না। কিন্তু পৃথিবীর সিরাজাম মুনিরার পরশ পেয়ে আল্লাহর গুণাবলির প্রকাশ ঘটাতে পারবে। এই সক্ষমতাটুকু সিরাজাম মুনীরার পরস্পর ধন্য প্রতিনিধিদের মাঝে বিদ্যমান আছে। আল্লাহপাকের সাচ্চা প্রতিনিধিশীল দায়িত্ব ও কর্তব্য নিষ্পন্ন করার এটাই একমাত্র উপায়। এভাবে মানুষ যদি প্রকৃতই নিজেকে আল্লাহর প্রতিনিধি মনে করতে থাকে এবং আল্লাহর গুণাবলিকে সিরাজাম মুনীরার প্রোজ্জল প্রদীপের কিরনে খুঁজতে থাকে ও একে নিজের জীবনের মানদণ্ড বানিয়ে নেয়, তাহলে তার উন্নতী, অগ্রগতির ক্রম ধারা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে এবং তার প্রতিনিধিত্বের আমলে পৃথিবীর সুখ ও প্রাচুর্যের রূপ কেমন হবে, তা’ কল্পনার তুলিতে ফুটিয়ে তোলা যাবে না। আর যাবে না বলেই, আল কোরআন মানুষকে আল্লাহর প্রতিনিধি, এই পৃথিবীর পরিচালনায় আল্লাহর স্থলাভিষিক্ত এবং এই বৃহত্তর ওয়াকফ স্টেটের মুতাওয়াল্লী ঘোষণা করেছে। মানুষের সম্মান ও মানবতার উত্থান এরচেয়ে অধিক আর কিছু হতে পারে না। এই বিশেষত্বটিই আল্লাহর বাণী সিরাজাম মুনিরার মাঝে মূর্ত হয়ে ফুটে উঠেছে। একটি প্রোজ্জল প্রদীপের সংস্পর্শে এসে লক্ষ-কোটি আলোহীন প্রদীপ সমুজ্জল হয়ে উঠলে অথবা হতে থাকলে প্রোজ্জল প্রদীপের আলোর মাঝে কোনো কালেই কমতি দেখা যায় না। এজন্যই পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) কে সিরাজাম মুনিরা বিশেষণে অলঙ্কৃত করা হয়েছে। তাই তো মরমী কবি শেখসাদী (রাহ.) দরদ ভরা কণ্ঠে উচ্চারণ করেছেন : ‘বাদ আজ খোদা বুযুর্গ তু-ই কিসসা মুখতাছার’।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।