Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শাহরুখ-পুত্রের মাদককান্ডে যা বলছেন নেটিজেনরা

সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ অক্টোবর, ২০২১, ১১:৪২ পিএম

শনিবার রাতে এক মাদক পার্টি থেকে বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা শাহরুখ খানের পুত্র আরিয়ান খানসহ আটজনকে আটক করে নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর কর্তারা। আরিয়ানের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য সেবন ও মাদক কেনা বেচার গুরুতর অভিযোগ এনেছে এনসিবি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জামিন আবেদন করা হলেও সেটা নামঞ্জুর করা হয়। বর্তমানে ব্যুরোর হেফাজতেই রয়েছেন আরিয়ান। তাকে সমানে জেরা করা হচ্ছে। এই জেরায় উঠে আসছে মাদক সংক্রান্ত ও ব্যক্তি-পারিবারিক বেশ কিছু বিষয়। এগুলো নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

এদিকে এই ঘটনায় শাহরুখ খানের পাশে দাঁড়িয়েছেন সালমান খানসহ অধিকাংশ বলিউড তারকারা। তারা শাহরুখ-পুত্রকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ট্রোল না করার অনুরোধ করেছেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় এ ইস্যুতে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। প্রচুর নেটিজেন আরিয়ান ও শাহরুখ খানের পক্ষে কথা বলছেন। আবার অনেককে বলছেন বিপক্ষে। করছেন সমালোচনা।

এ প্রসঙ্গে সাংবাদিক ও গবেষক মেহেদী হাসান পলাশ ফেইসবুকে লিখেছেন, ‘‘আমার বাবা শাহরুখ খান অত্যন্ত ব্যস্ততার মধ্যে থাকেন। এই মুহূর্তে একসঙ্গে তিনটি ছবির শুটিং করছেন উনি। আর বাবা এতটাই ব্যস্ত যে অনেক সময় ওনার সঙ্গে দেখা করার জন্য ম্যানেজার পূজার কাছে আমায় অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হয়।’- আরিয়ান (মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের জেরার মুখে শাহরুখ খানের ছেলের বক্তব্য)। ওয়েলথ, পাওয়ার প্রিভিলেজ এন্ড প্রেস্টিজ কি নেই বলিউড কিং শাহরুখ খানের জীবনে। সাফল্য দুই হাতে ধরা দিয়েছে তার। খুব সাধারণভাবে জীবন শুরু করা শাহরুখ খান শুধু ভারত নয়, বিশ্ব জুড়েই একজন সফল মানুষের প্রতিকৃতি। কিন্তু এত সাফল্যের পরও শাহরুখ খান একজন সফল বাবা হতে পেরেছেন কি? অর্থ ও যশের পেছনে দৌঁড়াতে গিয়ে সূর্যের নিচেই যে বিশাল অন্ধকার সৃষ্টি হয়েছে শাহরুখ খান দেখতে পাননি কোনদিন। পেশাগত সাফল্যে তিনি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে সন্দেহ নেই। কিন্তু ব্যক্তি জীবনে? তিনি কি পেরেছেন আদর্শ পিতা হতে? অর্থের জোরে হয়তো সন্তানকে বিদেশি ডিগ্রি এনে দেয়া যায়। কিন্তু মূল্যবোধ, সংস্কৃতি, নৈতিকতা- যে শিক্ষা পরিবার থেকে আসে সেই শিক্ষা কি শাহরুখ খান দিতে পেরেছেন তার সন্তানকে? এত সম্পদ এত যশ দিয়ে কি হবে যদি সন্তানই মানুষ না হয়?’’

চিত্রনায়ক সাইমন সাদিক লিখেছেন, ‘পৃথিবীতে কোন বাবাই খারাপ না। আর বাবার কাছে কোন সন্তান খারাপ, সেটা চিন্তাতেও আসে না। একজন বাবার কাছে সবচেয়ে খারাপ সময়টা হল, যখন তার সন্তান বিশাল বড় একটা দুঃসময় পার করে। শাহরুখ খান। শুধু ভারতবর্ষে নয়, সারা পৃথিবী জুড়ে আপনার যে সুনাম, আপনার যে মহত্ব, আপনার যে খ্যাতি, আপনার যে মানবিক দিক, সেটা হয়তো দুই/চার/দশ জনের আছে। আপনার নিজের সংসারের ছবির ফ্রেম অসাধারণ, চমৎকার, ভালোবাসার। নিজের সন্তানের দুঃসময়ে আপনি যেভাবে ভেঙে পড়েছেন এটা খুব স্বাভাবিক। তবে ভুলে গেলে চলবেনা, রাতের আকাশ ভোরের অপেক্ষায়। সকল জটিলতা কাটিয়ে ছেলে ফিরে আসুক ঘরে, আনন্দে ভরে উঠুক ভুবন। নিজের মত, নিজের ছেলের যত্ন নিন। ছেলের বন্ধুদের যত্ন নিন। শাসন, খেয়াল, আনন্দ আর ভালোবাসায় ভেসে যাক সব দুঃখ স্মৃতি।’

শিক্ষক ও সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্ট সাইয়েদ নাজমুস সাকিব লিখেছেন, ‘‘শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ান মাদক কেসে জড়ানোর আগে আরও অনেক সেলেব্রিটির সন্তানের সাথেও এমন ঘটনা ঘটেছে। একজনের নাম বলছি, যিনি স্টারডমে শাহরুখকেও ছাড়িয়ে। নাম তার- জ্যাকি চ্যান। ২০১৪ সালে জ্যাকি চ্যানের ছেলে জেসি মাদক সেবনের মামলায় আটক হন। নিজের ফ্ল্যাটে তিনি নিজের বন্ধু কোকাইয়ের সাথে মারিজুয়ানা সেবন করছিলেন। কোকাই নিজেও একজন তরুণ সুপারস্টার ছিলেন। এই সময়েই পুলিশ দুইজনকে গ্রেফতার করে। কোকাই যেখানে মাত্র ১৫ দিনের মাঝে জামিনে মুক্তি পেয়ে যান নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে, সেখানে জেসিকে ৩ বছরের সাজা শোনানো হয়। এর কারণ হল, জেসি শুধু নিজে ড্রাগ নেন নাই, নিজের ফ্ল্যাটে একজন মানুষকে রেখে ড্রাগ নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। আরেকটা ব্যাপার, সেই সময়ে জেসির বাবা জ্যাকি চ্যান চায়নার এন্টি ড্রাগ ক্যাম্পেইনের গুড উইল এম্বাসেডর ছিলেন। বাবা মাদকবিরোধী আলাপ করেন, আর তার ছেলে সম্পূর্ণ উল্টোপথের যাত্রী- হায় নিয়তি! জেসি এরেস্ট হওয়ার পর জ্যাকি চ্যান তার ছেলের সাথে দেখা করতে যান নি। এমনকি নিজের কোন অর্থ বা ক্ষমতাও ব্যবহার করেনি নি ছেলেকে জেল থেকে বের করে আনার জন্য। কোর্টের কোন শুনানিতেও জ্যাকি চ্যান যান নাই। ৬ মাস সাজা কাটার পর জেসি মুক্তি পান। যেদিন জ্যাকি চ্যানের ছেলের নাম মিডিয়ায় প্রকাশ পেল, জ্যাকি চ্যান চুপ থাকেন নি বা লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান নি। মিডিয়ায় সবার সামনে এসে তিনি ক্ষমা চান। তিনি আরও বলেন- এই ঘটনার জন্য অবশ্যই আমার ছেলে দায়ী, তবে বাবা হিসেবে আমারও দায় আছে। আমি হয়ত তাকে ঠিকঠাক নৈতিকতা শেখাতে পারি নাই। হয়ত আমার ভরণপোষণে কোন সমস্যা ছিল, তাই হয়ত সে এই রাস্তায় গেছে। আমি আপনাদের সবার কাছে ক্ষমা চাই। কখনোই ড্রাগসের দিকে যাবেন না, ড্রাগস সবার জন্যই খারাপ। আমার ছেলের এই কর্মকাণ্ডে আমি খুবই লজ্জিত। আমি এই সময়কার বাচ্চাদের বলব, তারা যেন আমার ছেলের কাজ দেখে শিক্ষা নেয়। এরকম কাজ যেন তারা না করে। বাবা হিসেবে আমি আজ ব্যর্থ। আর আমার ছেলের পক্ষ থেকে আমি ক্ষমা চাচ্ছি। জেল থেকে বের হওয়ার পর জ্যাকি চ্যান ছেলে সম্পর্কে অতিরিক্ত কোন উচ্ছ্বাস দেখান নাই। ছেলেও প্রচন্ড অভিমান করেছিল বাবার উপরে এই ব্যাপারে যে, এতদিন কেন আমাকে একবারও জেলে দেখতে যান নাই? তবে সময়ের সাথে সাথে ছেলে বুঝতে পারেন, বাবার এই ব্যবহারই সঠিক ছিল। সানফ্রান্সিসকো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে শাহরুখ খান গিয়েছিলেন অনেক বছর আগে। সেখানে তার মাই নেম ইজ খান সিনেমাটি দেখানো হয়। রাশ আওয়ার সিনেমার পরিচালকের সাথে বেশ ভাল একটা আড্ডা হয় খান সাহেবের। খান সাহেবকে চমকে দিয়ে ভিডিও কলে সেখানে হাজির হন জ্যাকি চ্যান। জ্যাকি চ্যানকে দেখে শাহরুখ বলেন- আমার ছেলে আরিয়ান যখন জন্ম নেয়, তখন তাকে প্রথমবারের মত দেখে আমার মনে হচ্ছিল- আমার ছেলে একদম জ্যাকি চ্যানের চেহারা পেয়েছে। চেহারায় হয়ত আসলেই মিল ছিল, কিন্তু কর্মে মিলটা আসেনি। নিজের ছেলেকে বাঁচানোর জন্য ইতিমধ্যে শাহরুখ নিজের সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছেন, যেকোনো বাবাই সেটা করবেন। সতীশ মানশিন্ডের মত উকিলকে নিয়োজিত করেছেন ছেলের জন্য, যিনি কিনা সঞ্জয় দত্ত, সালমান খান, গুলশান কুমার আর হালের রিয়া চক্রবর্তীর কেস লড়েছেন। পার শুনানিতে যিনি প্রায় ১০ লাখের মত চার্জ করেন। আরিয়ান খান হয়ত শাস্তি পাবেন বা মুক্তি পাবেন। তবে বাবা হিসেবে শাহরুখ খান নিজের জায়গাটা ক্লিয়ার করবেন কিনা জ্যাকি চ্যানের মত, বা সেরকম ‘জ্যাকি চ্যান’ টাইপের বাবা হওয়ার ইচ্ছা তার আছে কিনা- সেটা সময়ই বলবে।’’

আনজান কুন্দু লিখেছেন, ‘কিং খানের এইটুকু অন্তত খেয়াল রাখা উচিত ছিল যে, তার পিতা একজন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সম্মুখ যোদ্ধা, আর উনি নিজেও একজন ভারতের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত। সেই হিসাব করলে একজন আদর্শ পিতার দায়িত্ব পালন করতে পারে নি কিং খান। সব প্রাপ্তি ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছে তার বড় সন্তান আরিয়ান। অর্থ হয়তো বিলাসী জীবন আর যশ খ্যাতি এনে দিতে পারে, কিন্তু সামাজিক পদমর্যাদা ও আত্মসম্মান পুনরুদ্ধার করে দিতে পারে না।’

আবু হোসাইন লিখেছেন, ‘এই মুহুর্তে বাপকে আমাদের সহানুভুতি ছাড়া কিছু বলার নাই।’

এমডি মুনতাসির মামুন লিখেছেন, ‘অঢেল টাকা যশ খ্যাতি থাকলেই যে, মানুষ ভালো থাকতে পারে না, এটা তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।’

সারাজীবনের কামানো সম্মান শেষ শাহরুখের - শারমিন সিদ্দিকার মন্তব্য।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শাহরুখ-পুত্রের মাদককান্ড
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ