পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ বিন আল-হুসেইন যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে ৭ কোটি পাউন্ডের (১০ কোটি ডলার) গোপন সম্পদের এক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন বলে উঠে এসেছে প্যান্ডোরা পেপার্সে ফাঁস হওয়া তথ্যে। এসব আর্থিক নথিতে বাদশাহর মালিকানাধীন কয়েকটি অফশোর কোম্পানির একটি গোপন নেটওয়ার্ককে চিহ্নিত করা হয়েছে। ১৯৯৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ১৫টি বাড়ি কিনেছেন দ্বিতীয় আবদুল্লাহ।
ক্রিকেটের মাস্টার-ব্লাস্টার সচিন টেন্ডুলকারের নাম এসেছে প্যান্ডোরা পেপার্সে। রাজ্যসভার সাংসদ সচিন তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জের (বিভিআই) একটি অফশোর সম্পত্তির মালিক ছিলেন। ২০১৬ সালে ওই সম্পত্তি লিকুইডেট হয়েছিল। জানা গেছে, সচিন তার স্ত্রী অঞ্জলি টেন্ডুলকর ও তার শ্বশুর আনন্দ মেহতা ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জের (বিভিআই) একটি অফশোর সম্পত্তির মালিক ছিলেন। তাঁদের সংস্থার নাম ছিল সাস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। পানামিয়ান ল ফার্ম থেকে এ তথ্য মিলেছে। প্যান্ডোরা রেকর্ডে সচিন ও তার স্ত্রী, শ্বশুরের নামের ওই সংস্থা সাসের প্রথম রেফারেন্সটি মেলে ২০০৭ সালে। সংস্থার মালিকদের আর্থিক সুবিধাসহ যাবতীয় নথি মেলে সংস্থাটি হস্তান্তরের সময় ২০১৬ সালের জুলাই মাস থেকে।
এতে নাম এসেছে ভারতের তিন শতাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির, যাদের মধ্যে রয়েছেন ধনকুবের অনিল আম্বানি, বলিউড অভিনেতা জ্যাকি শ্রফ প্রমুখ। নাম এসেছে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তারও।
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত তিনটি ব্যাংকের সঙ্গে ঝামেলার জেরে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে লন্ডনের একটি আদালতে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করেন ভারতীয় ধনকুবের অনিল আম্বানি। এর তিন মাস পর ব্যাংগুলোকে ৭১ কোটি ৬০ লাখ ডলার পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয় তাকে। কিন্তু আদালতে আম্বানি জানান, তার সেই সক্ষমতা নেই। বিশ্বের কোথাও কোনো সম্পত্তি নেই বলেও এসময় দাবি করেন রিলায়েন্স এডিএ গ্রুপের চেয়ারম্যান।
কিন্তু এবার সেই আম্বানিরই বিপুল গোপন সম্পত্তির তথ্য ফাঁস করেছে প্যানডোরা পেপারস। তাদের দাবি, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, জার্সি ও সাইপ্রাসে মোট ১৮টি অফশোর কোম্পানির মালিকানা রয়েছে ভারতীয় এ ব্যবসায়ীর। ২০০৭ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে চালু করা এসব কোম্পানি ১৩০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ নিয়েছে বা বিনিয়োগ করেছে। প্যানডোরা পেপারসে নাম এসেছে পলাতক হীরা ব্যবসায়ী নীরব মোদীর। বলা হচ্ছে, ২০১৮ সালে নীরব ভারত থেকে পালানোর মাত্র এক মাস আগে তার বোন পুরবী মোদী ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে একটি ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন, যা সিঙ্গাপুরের একটি কোম্পানির মাধ্যমে গঠিত ট্রাস্টের ‘করপোরেট প্রটেক্টর’ হিসেবে কাজ করে।
প্যানডোরার তালিকায় নাম রয়েছে ভারতের কোটিপতি উদ্যোক্তা কিরণ মজুমদার শয়ের স্বামী জন ম্যাককালাম মার্শাল শয়ের। তিনি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান বায়োকন লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ চেয়ারপারসন। প্যানডোরা জানিয়েছে, একাধিক অফশোর ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে শেয়ার বিক্রি করেছে বায়োকন।
প্যানডোরার তালিকায় নাম এসেছে বলিউড অভিনেতা জ্যাকি শ্রফেরও। জানা গেছে, শ্রফ নিউজিল্যান্ডে তার শাশুড়ির প্রতিষ্ঠিত একটি ট্রাস্টের প্রধান সুবিধাভোগী এবং ওই ট্রাস্টে ‘উল্লেখযোগ্য অবদান’ রয়েছে তার। সুইস ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে এ ট্রাস্টের এবং সেটি ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে নিবন্ধিত একটি অফশোর কোম্পানিরও মালিক।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস’ (আইসিআইজে) প্রথমে এসব নথি হাকে পায়। ১১৭টি দেশের সাড়ে ছয়শ’র বেশি সাংবাদিক সেসব নথি বিশ্লেষণ ও তদন্ত করে এখন ধারাবাহিকভাবে তথ্য প্রকাশ করছেন। এর নাম দেওয়া হয়েছে প্যানডোরা পেপার্স। ৯৫ হাজার অফশোর ফার্মের ফাঁস হওয়া এ ১ কোটি ২০ লাখ গোপন নথি থেকে বিশ্বনেতা, রাজনীতিবিদ এবং ধনকুবেরদের গোপন সম্পদ এবং লেনদেনের তথ্য বেরিয়ে আসছে।
ফাঁস হওয়া ওই তথ্যের বরাতে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ম্যালিবু এবং যুক্তরাজ্যের অ্যাসকট ও লন্ডনে এসব বাড়ি কিনেছেন বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ। তবে বাদশাহর আইনজীবীরা বলছেন, ব্যক্তিগত সম্পদ ব্যবহার করেই তিনি এসব বাড়ি কিনেছেন এবং এ ক্ষেত্রে অফশোর কোম্পানিকে কাজে লাগানোয় ‘অনুচিত’ কিছু ঘটেনি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন দেশ থেকে মোটা অংকের আন্তর্জাতিক সহায়তা পায় জর্ডান। তাদের বড় অঙ্কের অর্থ সহায়তা দেয়া দেশগুলোর একটি যুক্তরাজ্য। জর্ডানকে দেয়া সহায়তা তহবিল দ্বিগুণ বাড়িয়ে ২০১৯ সালে ৬৫ কোটি পাউন্ড দিয়েছিল যুক্তরাজ্য। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহকে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে নমনীয় সম্পর্ক রাখতে দেখা যায়। তবে নিজ দেশে তার বিরুদ্ধে কর্তৃত্ববাদী শাসনের অভিযোগ রয়েছে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাজেট ছাঁটাই এবং কর বাড়ানোর প্রতিবাদে দেশটিতে বিক্ষোভও হয়েছে।
প্যান্ডোরা পেপার্সে দেখা যাচ্ছে, সম্পদের প্রতি জর্ডানের বাদশাহর আকাক্সক্ষা প্রবল হয়েছে ২০০৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে। ২০১২ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে তিনি ওয়াশিংটন ডিসির ব্যয়বহুল এলাকা জর্জটাউনে চারটি অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন। ১ কোটি ৬০ লাখ ডলার ব্যয়ে এসব অ্যাপার্টমেন্ট কেনার সঙ্গে সে সময়ে জর্জটাউন ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা করা ক্রাউন প্রিন্স হুসেইনের সম্পর্ক থাকতে পারে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে ধারণা দেয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে বাদশাহর আটটি গোপন সম্পত্তির তথ্য এসেছে প্যান্ডোরা পেপার্সের ফাঁস হওয়া নথিতে। এর মধ্যে ওয়াশিংটন ডিসির অভিজাত এলাকা কেনসিংটন এবং বেলগ্রেভিয়া স্ট্রিটে ছয়টি বাড়ি রয়েছে। এছাড়া যুক্তরাজ্যের সারে কাউন্টির অ্যাসকটে দুটি বাড়ি এবং ওয়াশিংটন ডিসির জর্জটাউনে রয়েছে চারটি ফ্ল্যাট। বাদশাহ আবদুল্লাহ তার এসব সম্পদের মালিকানার তথ্য গোপন রাখতে পেরেছিলেন কারণ তিনি এসব কেনার ক্ষেত্রে অফশোর কোম্পানিগুলোকে ব্যবহার করেছিলেন।
বিশ্বের সাবেক ও বর্তমান ৩৫ রাষ্ট্রপ্রধান এবং ৯০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের ৩ শতাধিক রাজনীতিক, সামরিক কর্মকর্তা, প্রায় একশ’ ধনকুবেরের গোপন সম্পদ ও লেনদেনের তথ্য ফাঁস করে বিশ্বজুড়ে হইচই ফেলে দিয়েছে প্যান্ডোরা পেপার্স। তারা দেখিয়েছে কীভাবে বিশ্বের ৯০টিরও বেশি দেশ ও ভূখন্ডের ৩০০ রাজনীতিক অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে গোপনে দেশের বাইরে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন-
রাষ্ট্রপ্রধান : ১. জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ বিন আল-হুসাইন, ২. ডোমিনিকান রিপাবলিকের প্রেসিডেন্ট লুইস আবিনাদের, ৩. আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ, ৪. মন্টিনিগ্রোর প্রেসিডেন্ট মিলো শুকানোভিস, ৫. কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াত্তা, ৬. ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট গিলার্মো লাসো, ৭. কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট ডেনিস সাসো এনগুয়েসো, ৮. গ্যাবনের প্রেসিডেন্ট আলী বনগো অনডিম্বা, ৯.চিলির প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান পিনেরা, ১০. কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল-থানি, ১১. ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভেøাদিমির জেলেনোস্কি।
সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান : ১. প্যারাগুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোরাসিও কার্টেস, ২. কলম্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট সিজার গাভিরিয়া, ৩. পেরুর সাবেক প্রেসিডেন্ট পেদ্রো পাবলো কুকজিনস্কি, ৪. হন্ডুরাসের সাবেক প্রেসিডেন্ট পোরফিরিও লোবো সোসা, ৫. পানামার সাবেক প্রেসিডেন্ট রিকার্ডো মার্টিনেলি, ৬. কলম্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস পাস্ত্রানা, ৭. পানামার সাবেক প্রেসিডেন্ট আর্নেস্তো পেরেজ বাল্লাডারেস, ৮. পানামার সাবেক প্রেসিডেন্ট জুয়ান কার্লোস ভেরেলা।
বর্তমান সরকার প্রধান : ১. আইভরি কোস্টের প্রধানমন্ত্রী প্যাট্রিক আচি, ২. চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেজ বাবিচ, ৩. সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের আমির শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম, ৪. লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি।
সাবেক সরকার প্রধান : ১. যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার, ২. ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বার্লুসকোনি, ৩. হংকংয়ের সাবেক প্রধান নির্বাহী তুং চি-ওয়া, ৪. হংকংয়ের সাবেক প্রধান নির্বাহী লিউং চুন-ইং।
রাজনীতিক : ১. হন্ডুরাসের রাজধানী টেগুসিগাল্পার বর্তমান মেয়র নাসরি আসফুরা, ২. জেরুজালেমের সাবেক মেয়র এবং নেসেটের বর্তমান সদস্য নীর বরকত, ৩. ব্রাজিলের সেন্ট্রাল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট রবার্তো ক্যাম্পোস নেটো, ৪. মেক্সিকোর যোগাযোগ ও পরিবহন মন্ত্রী জর্জ আর্গানিস দিয়াজ লিয়াল, ৫. আর্জেন্টিনার সাবেক প্রেসিডেন্ট মরিসিও ম্যাক্রির পরামর্শক জাইম ডুরান বারবা, ৬. ব্রাজিলের অর্থমন্ত্রী পাওলো গুয়েডেস, ৭. নেদারল্যান্ডসের অর্থমন্ত্রী এবং ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক আপিলের নেতা ওপকে হোয়েকস্ত্রা, ৮. বেলগ্রেডের সাবেক মেয়র ও অর্থমন্ত্রী সিনিসা মালি, ৯. আর্জেন্টিনার সাবেক ফার্স্ট লেডি ও সাবেক প্রেসিডেন্ট কার্লোস মেনেমের মেয়ে জুলেমা মারিয়া ইভা মেনেম, ১০. আর্জেন্টিনার সাবেক প্রেসিডেন্ট নেস্টর কিরচনার সচিব ড্যানিয়েল মুনোজ, ১১. ইসরায়েলের সাবেক ভাইস প্রধানমন্ত্রী ও নেসেটের সাবেক সদস্য হাইম রামন, ১২. মেক্সিকোর সাবেক প্রেসিডেন্ট ম্যানুয়েল লোপেল ওব্রাডোরের সাবেক উপদেষ্টা জুলিও স্কেরারা ইবারা, ১৩. পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী শওকত তারিন, ১৪. মালয়েশিয়ার সাবেক অর্থমন্ত্রী দাইম জয়নুদ্দিন, ১৪. ফিলিপাইনের পরিবহনমন্ত্রী আর্থার তুগাদে, ১৫. ফিলিপাইনের নির্বাচন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান এবং সুশাসন সংক্রান্ত প্রেসিডেন্ট কমিশনের চেয়ারম্যান আন্দ্রেস ডি. বাতিস্তা, ১৬. কাজাখস্তানে নিযুক্ত ফিলিপাইনের কনসাল এবং ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের সহযোগী ব্যবসায়ী ডেনিস, ১৭. শ্রীলঙ্কার পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশনবিষয়ক সাবেক উপমন্ত্রী নিরুপমা রাজাপাকসে। সূত্র : বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।