Inqilab Logo

বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিদেশগামী কর্মীরা হতাশ

টিকার এসএমএস পাচ্ছে না অনেকেই : ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ৫ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০১ এএম

বিদেশগামী কর্মীদের করোনা মহামারির টিকা সঙ্কট এখনো পুরোপুরি দূর হয়নি। এক মাস দু’মাস আগে টিকার জন্য নিবন্ধন করেও অনেক বিদেশগামী কর্মী এসএমএস পাচ্ছে না। এতে তারা চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। টিকা না পাওয়ায় হাজার হাজার সউদীগামী কর্মীর ভিসার মেয়াদ শেষ হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সউদী সরকার অনুমোদিত টিকার জন্য প্রবাসী কর্মীরা দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। অনেক প্রবাসী কর্মী চীনা টিকার দু’ডোজ নিয়েও সউদী যেতে পারছে না। তারা বুস্টার ডোজ দেয়ার জন্য প্রবাসী মন্ত্রণালয়ে ধরনা দিচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ভুক্তভোগি এতথ্য জানিয়েছেন।
আগামী এক মাসের মধ্যে সউদীর ভিসাপ্রাপ্তদের টিকা দেয়া সম্ভব না হলে হাজার হাজার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। রিক্রুটিং এজেন্সি ফ্রেন্ডস এসোসিয়েটস রাফা-সাউথ-এর মহাসচিব ও আমান এন্টারপ্রাইট (আরএল-৭২৪) এর স্বত্বাধিকারী মো. রফিকুল ইসলাম পাটওয়ারী এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। গতকাল সোমবার তিনি ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে বলেন, বিদেশগামী কর্মীদের এখনো করোনার টিকা সঙ্কট নিরসন হয়নি। আগামী এক মাসের মধ্যে অনুমোদিত টিকা দেয়া সম্ভব না হলে শুধু সউদী আরবেরই প্রায় ৫০ হাজার ভিসা মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাবে। এতে অনেকেই সউদী গমনে অনিশ্চয়তার মুখে পড়বেন। তিনি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিদেশগামী কর্মীদের সউদী অনুমোদিত করোনার টিকা দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এদিকে, রোববার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমদ মনিরুছ সালেহীন তার দপ্তরে করোনার টিকা সঙ্কট সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশগামী কর্মীদের স্বার্থ রক্ষায় সর্বাত্মক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। সচিব বলেন, বিদেশগামী কর্মীরা যাতে অগ্রাধিকারভিত্তিকে করোনার টিকা পায় সে ব্যাপারে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। সচিব বলেন, সউদী সরকার অনুমোদিত করোনা টিকার নতুন চালান দেশে আসছে। বিদেশগামী কর্মীদের টিকার আর কোনো সঙ্কট থাকবে না বলেও সচিব আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
গত মাসের শেষের দিকে দেশের মানুষের জন্য করোনার ভ্যাকসিন কিনতে ৮ থেকে ৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। আর এসব টিকা প্রয়োগ করতে সরকারের ‘কয়েক হাজার কোটি’ টাকা ব্যয় হবে। একারণে ভ্যাকসিন কার্যক্রম আগামীতে আরও ভালো হবে বলেও দাবি করেন তিনি। শ্যামলীতে ২৫০ শয্যা টিবি হাসপাতালে ওয়ান স্টপ টিবি সার্ভিস সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ভ্যাকসিনে আমাদের দেশ বেশ ভালো করেছে দাবি করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা তো ভ্যাকসিন তৈরি করি না। যেসব দেশে ভ্যাকসিন তৈরি হয়, তারা হয়তো আরও বেশি দিয়েছে। কিন্তু জোগাড় করেছি আমরা। প্রধানমন্ত্রীকে আমরা বলেছি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে টিকা ক্রয় করে নিতে হবে- উনি এক মুহূর্ত দেরি করেনি। বলেছেনÑ অর্ডার দিয়ে দাও। আমরা চীন থেকে ছয় কোটি টিকা কিনেছি। উনি এক মুহূর্ত দেরি করেনি, বলেছেন অর্ডার দিয়ে দিতে। কাজেই এই দুই অর্ডারে প্রায় ১৬ কোটি ভ্যাকসিন কেনা হবে।
গত মাসের শেষের দিকে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ফাইজার-মডার্নার টিকার দাবিতে বিক্ষোভ করছেন প্রবাসী কর্মীরা। টিকার দাবিতে তারা সেøাগান দিতে থাকেন। এ সময় প্রবাসীরা হাসপাতালের সামনের সড়কও অবরোধ করেন। এতে কিছু সময়ের জন্য সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেন। বিক্ষোভরত প্রবাসীরা জানান, টিকার এসএমএস পাওয়ার পর তারা সেখানে টিকা নিতে আসেন। কিন্তু সেখানে ফাইজার কিংবা মডার্নার টিকা না থাকায় সিনোফার্মের টিকা দেয়া হচ্ছে। এই টিকা নিলে সউদী আরবে প্রবেশ করা যাবে না।
এদিকে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে, এখন আমরা কী করব? আমরা অনেক টাকা খরচ করে টিকার জন্য গ্রাম থেকে এসেছি। তারা টিকা কবে পাবেন সে বিষয়ে কথা বলতে বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে পাঁচজন ও পুলিশ কর্মকর্তারা হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে এক ঘণ্টা আলোচনা করেন। এরপরও প্রবাসীরা তাদের বিক্ষোভ চালিয়ে যান। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. খলিলুর রহমান প্রবাসীদের জানান, এই মুহূর্তে তাদের কাছে ফাইজার ও মডার্নার টিকা নেই। তাই এখন সিনোফার্মের টিকা দেয়া হচ্ছে। টিকার সরবরাহ না থাকলে আমরা আপনাদের কীভাবে দেবো।
সম্প্রতি বিদেশগামী কর্মীদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে ফাইজারের টিকা দেয়া শুরু হয়েছে। সঙ্কট থাকায় প্রবাসীদের ফাইজারের টিকা দান বন্ধ ছিল। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এ টিকা দেয়া শুরু হয়েছে। প্রবাসী কর্মীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ফাইজারের ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারা জানায়, ফাইজারের পাশাপাশি সিনোফার্মের প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ এবং মডার্নার দ্বিতীয় ডোজ দেয়া চলমান রয়েছে।
ঢামেক হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক আশরাফুল আলম বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ফাইজারের ভ্যাকসিন (প্রথম ডোজ) দেয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘এখানে দুটি টিকা কেন্দ্রের মধ্যে একটি চালু রয়েছে। নিবন্ধনকৃতদের মধ্যে যারা এসএমএস পেয়েছেন, তারা ব্যতীত কেউ টিকা নিতে পারবেন না।’ রাফার মহাসচিব ফরিদ আহমদ মজুমদার গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, বিদেশগামী কর্মীদের অনেকেই টিকার এসএমএস পাচ্ছে না। টিকার সার্ভারের গোড়ায় সিন্ডিকেট চক্র গড়ে উঠেছে। যেসব প্রবাসী কর্মীরা টিকার এসএমএস পাচ্ছে না তাদের কেউ কেউ ঘুষ দিয়ে এক ঘণ্টার মধ্যেই এসএমএস পাচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। তিনি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিদেশগামীদের টিকা দেয়ার জোর দাবি জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ