Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আরো তিনজন গ্রেফতার রিমান্ড শুনানি আজ

রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ড রোহিঙ্গা কমিউনিটি ছেড়ে আন্তর্জাতিক কমিউনিটিতেও তোলপাড় হত্যাকাণ্ডের বিচার ও দ্রুত প্রত্যাবাসন দাবি জোরদার

শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার থেকে | প্রকাশের সময় : ৩ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০০ এএম

রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় আরো তিনজন রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা। গতকাল শনিবার ভোররাতে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তারা হলোÑ লম্বাশিয়া ক্যাম্প ১-ইস্টের বাসিন্দা জকির আহমদের ছেলে জিয়াউর রহমান (৩২), শওকত ও মৃত মকবুল আহমেদের ছেলে আব্দুস সালাম (২৯)। হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত চার রোহিঙ্গাকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

অন্যদিকে মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আন্তর্জাতিক কমিউনিটিতে তোলপাড় চললেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে কেউ কথা বলছেন না। অথচ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে জোরালো ভূমিকা রাখার কারণেই হত্যা করা হয়েছে মুহিবুল্লাহকে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার ও দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দাবি জোরদার হয়ে উঠেছে স্থানীয়দের মাঝে। এখনও পর্যন্ত সাধারণ রোহিঙ্গাদের মাঝে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। রোহিঙ্গারা তাদের ঘর থেকে আগের মতো বের হচ্ছে না। এপিবিএন বলছে ক্যাম্পসহ নিহতের পরিবারের নিরাপত্তায় টহল জোরদার করা হয়েছে।

উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) গাজী সালাহ উদ্দিন বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সন্দেহভাজন আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তারা এ বিষয়ে এখনো কিছু স্বীকার করেনি। গতকাল তাদের আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এদের মধ্যে লম্বা সেলিম ও শওকতকে ৭ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। আজ রোববার রিমান্ড শুনানির তারিখ ধার্য করা হয়েছে।

১৪-এপিবিএন’র পুলিশ সুপার নাঈমুল হক বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আরো দুইজন রোহিঙ্গাকে আটক করে থানায় সোপর্দ করা হয়। এর আগে মোহাম্মদ সেলিম প্রকাশ লম্বা সেলিম নামে একজনকে আটক করা হয়।
তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই ক্যাম্পে জেলা পুলিশ ও এপিবিএন এর টহল বাড়ানো হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে আইনশৃংখলা বাহিনী তৎপর রয়েছে।

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) সভাপতি মুহিবুল্লাহকে গত বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় উখিয়া কুতুপালং লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকার ইস্ট-ওয়েস্ট ১ নম্বর ব্লকে তার নিজ অফিসে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা গুলি করে হত্যা করে। এদিকে মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি রোহিঙ্গা কমিউনিটি ছাড়াও আন্তর্জাতিক কমিউনিটিতেও ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। এই হত্যাকাণ্ডের বিষয় নিয়ে ইতোমধ্যেই কথা বলেছেন আমেরিকার পররাষ্ট্র দফতর, জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। পৃথক পৃথক বিবৃতিতে আমেরিকার পররাষ্ট্র দফতর, জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মুহিবুল্লাহর পরিবার ও রোহিঙ্গা কমিউনিটির প্রতি সমবেদনা জানিয়ে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে নিহত মুহিবুল্লাহর ভাই হাবিবউল্লাহ বাদী হয়ে উখিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার এজাহারে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারের আরাকানে সেদেশের সেনা নির্যাতনের কারণে ২০১৭ সালের পর ব্যাপকহারে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বাংলাদেশ সরকার মানবিক কারণে সে সময় ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে কক্সবাজার এর উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় দেয়। এত বড় রোহিঙ্গা বোঝা বাংলাদেশের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয় বিধায় শুরু থেকেই বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক কমিউনিটির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণভাবে তাদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

কিন্তু মিয়ানমারের অযৌক্তিক কিছু শর্ত এবং দেশি-বিদেশি কিছু এনজিওদের ষড়যন্ত্রের কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এই পর্যন্ত ঝুলে আছে। রোহিঙ্গারাও সম্মানজনকভাবে যত দ্রুত সম্ভব তারা নিজেদের দেশে ঘরে বাড়িতে ফিরে যেতে পারলে খুশি। তাই রোহিঙ্গাও বাংলাদেশ সরকারের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়ে আসছে। রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ ছিলেন প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় অগ্রণী ভূমিকা পালনকারীদের অন্যতম। তাই প্রত্যাবাসন বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে তাকে নির্মমভাবে প্রাণ দিতে হলো।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের খবর নিয়ে জানা গেছে, শুধু মুহিবুল্লাহ নয় ইতোপূর্বে কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতাকে প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করায় হত্যা করেছে ওই ষড়যন্ত্রকারী সন্ত্রাসীরা। তাই মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদক চোরাচালান ও এর সাথে জড়িত এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িতসহ সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার চায় নিরীহ রোহিঙ্গারা। এদিকে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের বিষয় নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে স্থানীয় কমিউনিটিতে। স্থানীয়দের দাবি যত দ্রুত সম্ভব এই হত্যাকাণ্ডসহ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা হোক এবং যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এর প্রক্রিয়া শুরু করা হোক। এই দাবিতে শনিবার ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানবাধিকার নেতা আতাউল্লাহ খানের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত ওই মানববন্ধনে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরীসহ কক্সবাজারের স্থানীয় কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। তারা দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার দাবি জানান।



 

Show all comments
  • Ghum Kutum ৩ অক্টোবর, ২০২১, ৩:৫৮ এএম says : 0
    তাকে যারা হত্যা করেছে তারা রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ হস্তগত করতে চায় ও বিশেষ স্বার্থ হাসিল করতে চায়। তাদেরকে বাংলাদেশ সরকার কেন খুঁজে পাচ্ছে নাহ? তাহলে আমরা এটা বলতে পারি কী? যে বা যারা এই হত্যা কান্ড ঘটিয়েছে তারা বাংলাদেশ সরকারকে বুড়ো আঙ্গুল দেখানোর মত শক্তি বাংলাদেশের মধ্যেই অর্জন করে ঘাটি গেড়েছ? যার মোকাবিলা করার ক্ষমতা বাংলাদেশ সরকারের নাই? এ বিষয়ে কোনরূপ ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ সরকার বার্থ?
    Total Reply(0) Reply
  • Faisal Ahmed ৩ অক্টোবর, ২০২১, ৩:৫৯ এএম says : 0
    তাদের ছাড় দিলে ভবিষ্যতে রোহিঙ্গা শিবিরের নিয়ন্ত্রণ তাদের হয়ে যাবে। প্রশাসনের প্রবেশ নিষিদ্ধ হবে। আর প্রত্যাবাসন এর কথা ভুলে যেতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Monir Ahmad ৩ অক্টোবর, ২০২১, ৩:৫৯ এএম says : 0
    মহিবুল্লাহ হত্যাকান্ড রোহিঙ্গাদের আভ্যন্তরীন সমস্যা বাংলাদেশের এর মধ্যে জড়ানোর সুযোগ নেই। মানবাধিকার সংগঠন এবং উন্নত রাষ্ট্রগুলোর উচিত হবে মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করে রোহিঙ্গাদের তাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানো।
    Total Reply(0) Reply
  • Khorshed Alam ৩ অক্টোবর, ২০২১, ৪:০০ এএম says : 0
    রোহিঙ্গারা নেতা হারাল, এখন এরা মাঝি চাড়া নৌকার মত।
    Total Reply(0) Reply
  • Mahin Raj ৩ অক্টোবর, ২০২১, ৪:০১ এএম says : 0
    যে দেশ হতে দিন দুপুরে মানুষ হাওয়া হয়ে যায় সে দেশে অজ্ঞাত নামা লোকজনের বিরুদ্ধে কি একশন নিবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ