Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সেবাবঞ্চিত কোটি মানুষ

মাঠ প্রশাসনে ইউএনও সঙ্কট

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ৩ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০১ এএম

মাঠ প্রশাসনে জেলা প্রশাসকের পরে উপজেলায় উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অবস্থান। সেখানে অনেক উপজেলায় উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) পদ ফাঁকা। সারা দেশে ৪৯২টি উপজেলার মধ্যে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা ইউএনও রয়েছেন ৪৭৩ জন। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি উপজেলায় ইউএনও ছাড়াই চলছে প্রশাসনিক কার্যক্রম। অনেক জেলায় স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং ডিসিরা উপজেলার ইউএনও চেয়ে চিঠি দিলেও পছন্দের কর্মকর্তা পাচ্ছেন না। আবার বিভিন্ন উপজেলায় উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিয়োগ না দিয়ে হঠাৎ করে স্ট্যান্ড রিলিজ করায় বিপাকে পড়েছে সংশ্লিষ্ট উপজেলার সেবাপ্রত্যাশী মানুষ। অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া ইউএনওকে নিয়ে টানাটানির ঘটনা ঘটছে। আবার অনেক উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তার সঙ্কট রয়েছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোথাও সংসদ সদস্য, কোথাও উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরোধ পছন্দের ব্যক্তি না পাওয়ায় এসব উপজেলায় ইউএনও নিয়োগে বিলম্ব হচ্ছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগ) মো. আনিছুর রহমান মিঞা পিএএ ইনকিলাবকে ফোনে বলেন, পদোন্নতি হওয়ার কারণে অনেক উপজেলায় উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) পদে কর্মকর্তা সঙ্কট রয়েছে। আমরা দ্রুত এগুলো দেব। যেসব জেলায় উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নেই সেগুলো হচ্ছে, কুড়িগ্রাম জেলা সদর ও উলিপুর উপজেলা, আদিতমারী এবং সদর উপজেলা লালমনিরহাট, উপজেলা ডিমলা নীলফামারী, রংপুর সদর উপজেলায় দায়িত্ব পালন করছেন ভারপ্রাপ্ত ইউএনও, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) (অঃদাঃ) ভাঙুড়া, জেলা পাবনা, কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) পালন করছেন। এছাড়া হোসেন পুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহকারী কমিনারেরও দায়িত্ব পালন করছেন। মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) দায়িত্বপালন করছেন। ফরিদপুর জেলার সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাসুদুল আলম একই তিন দায়িত্ব পালন করছেন এবং ফরিদপুর সালথা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহকারী কমিশনার (ভূমি) দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

জানা গেছে, মাঠ প্রশাসনে ডিসি ছাড়াও উপজেলা নির্বাহী অফিসারা কেন্দ্রীয় সরকারের সকল প্রকার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন এবং বিভিন্ন বিভাগের কাজের সমন্বয় সাধন করে থাকেন। এছাড়া সাধারণ প্রশাসন, রাজস্ব প্রশাসন, ফৌজদারি প্রশাসন ও উন্নয়ন প্রশাসন বিষয়ে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু তাদের পদে কর্মকর্তা না থাকার কারণে অনেক উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছে কর্মকর্তারা। এদিকে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদটি প্রায় তিন মাস ধরে শূন্য। এ পদে চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দায়িত্বগুলো হচ্ছেÑ আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তদারকিকরণ, সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন, সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ তদারকি ও বাস্তবায়ন, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় পূর্বপ্রস্তুতি ও পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন, ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন, আশ্রয়ণ প্রকল্প, আদর্শ গ্রাম, আবাসন প্রকল্প গ্রহণ ও তাদের বাস্তবায়ন, অসহায় মানুষদের বিভিন্ন আশ্রয়ণে সংস্থানকরণ, আবাসনবাসীদের ঋণ প্রদান ও তাদেরকে স্বাবলম্বীকরণ, উপজাতিয়দের ঋণ প্রদান তাদেরকে স্বাবলম্বীকরণ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়/প্রাথমিক বিদ্যালয়/ মাদরাসা পরিদর্শন ও তাদের শিক্ষার মান উন্নয়নকরণ, প্রাথমিক বিদ্যালয় মেরামত/সংস্কার ও আসবাবপত্র প্রদান, স্থানীয় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিকরণ, ইউনিয়ন পরিষদে ট্যাক্স আদায়ের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা, ভূমি উন্নয়ন কর আদায়, ঝাটকা ধরা বন্ধ করার লক্ষ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, কাজের বিনিময় খাদ্য কর্মসূচি, দুর্যোগকালীন ত্রাণসামগ্রী বিতরণ ও ভিজিডি, ভিজিএফ, অতিদরিদ্র কর্মসংস্থান কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সাধারণ অভিযোগ তদন্ত ও নিষ্পত্তি, রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট, ইমারত নির্মাণ ও সংস্কার, উপজেলার বিভিন্ন দফতরের সাথে সমন্বয় করে স্ব স্ব বিভাগীয় কার্যক্রম বাস্তবায়ন, সকল প্রকার পাবলিক পরীক্ষা পরিচালনা, খনিজ সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ, পতিত মজাখালবিল বেকারদের মধ্যে ইজারা প্রদান, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান, বয়স্কভাতা প্রদান, বিধবা ভাতা প্রদান, প্রতিবন্ধীদের ভাতা প্রদান, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা প্রদান, সরকার ঘোষিত বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠান উদযাপন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচন পরিচালনা করা, সাইক্লোন সেন্টার স্থাপন, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সম্মানী ভাতা এবং প্রচলিত আইন মোতাবেক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, স্থানীয় সংস্কৃতি উন্নয়ন, খেলাধুলার মান উন্নয়ন, সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখা, কৃষি উন্নয়ন, সারের ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ নিশ্চিতকরণ, অর্পিত সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা উপরোক্ত কার্যক্রমগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা ও বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অধীনে বাস্তবায়ন হয়ে আসছে। কিন্তু প্রায় ৩০টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার না থাকার কারণে এগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

অনেক উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। প্রায় প্রতিটি উপজেলায় সহকারী কমিশনারও (ভূমি) এসিল্যান্ড আছেন। বর্তমানে মাঠ প্রশাসনে তাদের কাজের পরিধি বাড়ছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ইউএনওদের সব কাজের সমন্বয় করতে হচ্ছে। কারোনাকালে স্থানীয় এমপি ও জনপ্রতিনিধিরা মাঠে না থাকলেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকতরা দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে গিয়ে গিয়ে দুস্থ, অসহায়, কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের তালিকা করছেন এবং করোনাভাইরাস মোকাবিলার পাশাপাশি অসহায় মানুষদের প্রধানমন্ত্রীর উপহার প্রদানের মাধ্যমে সহায়তা নিশ্চিত করছেন।

এদিকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিয়োগ না দিয়ে হঠাৎ করে স্ট্যান্ডরিলিজ করায় বিপাকে পড়েছে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার মানুষ। এদিকে বকশীগঞ্জের ইউএনওকে দেওয়ানগঞ্জে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়ায় কর্মস্থলে অনুপস্থিতের কারণে ভোগান্তিতে রয়েছে বকশীগঞ্জের মানুষ। ৭ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করেই স্ট্যান্ডরিলিজ করে দেওয়ানগঞ্জের ইউএনও এ.কে.এম আব্দুল্লাহ বিন রশিদকে। এরপর থেকে দেওয়ানগঞ্জ প্রশাসনিক শূন্যতা বিরাজ করে। পরবর্তীকালে বকশীগঞ্জের ইউএনও মুনমুন জাহান লিজাকে দেওয়ানগঞ্জের ইউএনও হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়ায় মুনমুন জাহান লিজা বেশিরভাগ সময়ই বকশীগঞ্জ কর্মস্থলে অনুস্থিত থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে বকশীগঞ্জের মানুষ। দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জের মধ্যে দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার হলেও অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে দুই উপজেলায় যাতায়াতে সময় ব্যয় হয় ঘণ্টারও বেশি। আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস, জলাতঙ্ক দিবস, ভোক্তা অধিকার দিবসসহ গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সভায় বকশীগঞ্জের মুনমুন জাহান লিজার অনুপস্থিতেই করা হয়েছে। এছাড়া কন্যা দিবসে বকশীগঞ্জে শুধু ফটোসেশন করেই দেওয়ানগঞ্জে যেতে হয়েছে ইউএনও লিজাকে। এদিকে দেওয়ানগঞ্জে গুরুত্বপূর্ণ সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদটিও দীর্ঘদিন শুন্য থাকায় কার্যত প্রশাসনিক শূন্যতা বিরাজ করছে দেওয়ানগঞ্জে।
এ বিষয়ে জামালপুর জেলা প্রশাসক মুর্শেদা জামান ইনকিলাবকে বলেন, দেওয়ানগঞ্জে বর্তমানে শেরপুর সদর উপজেলায় কর্মরত শেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফিরোজ আল মামুনকে বদলি করা হয়েছে। এই বদলি আদেশ কার্যকর হলে এই সমস্যা সমাধান হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাঠ প্রশাসন

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৮ ডিসেম্বর, ২০১৬

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ