মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
মনসারামের নাম খুব বেশি মানুষ শুনেছেন বলে মনে হয় না। কিন্তু রাজস্থানের মরুশহর বিকানেরের মনসারাম একটা কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছেন। দিন কয়েক আগে রাজস্থানে শিক্ষক নিয়োগের প্যানেল তৈরির জন্য পরীক্ষা ছিল। তাতেই মনসারাম উচ্চ প্রযুক্তির সাহায্যে এমন একটা টোকাটুকির পন্থা উদ্ভাবন করেছেন, যা আগে কখনো ভারতে অন্তত দেখা যায়নি। মনসারাম একটা চটি তৈরি করেছেন, যার সোলের খাঁজে লুকিয়ে আছে মোবাইল ও ব্লুটুথের যন্ত্র। পরীক্ষার আগে যাতে তা চালু করা যায়, তার ব্যবস্থাও করেছেন। এবার যিনি পরীক্ষা দিতে যাবেন, তিনি শুধু যে ওই চটি পরবেন তাই নয়, কানে লাগাবেন একটা রিসিভার। ছোট রিসিভার লুকিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া রাজস্থানের মতো ঢিলেঢালা রাজ্যে খুব একটা শক্ত কাজ নয়। রিসিভার কানে লাগিয়ে নেবেন। তারপর পরীক্ষা শুরু হলেই, প্রশ্নের জবাব এসে যাবে। রিসিভারে জবাব শুনে পরীক্ষার্থী লিখে যাবেন।
প্রশ্ন হলো, বাইরে বসে কী করে জানা যাবে যে কী প্রশ্ন এসেছে। তার ব্যবস্থাও করা ছিল। প্রশ্নপত্র পরীক্ষা শুরুর ঘণ্টা দেড়েক আগেই ফাঁস হয়ে যাবে। ফলে কোনো অসুবিধাই নেই। দুই থেকে ছয় লাখ টাকায় এই চপ্পল ও রিসিভার বিক্রি করেছিলেন মনসারাম ও তার সঙ্গীরা। মোট ৫০টা বিশেষ প্রযুক্তির চপ্পল বিক্রি করে তাদের আয় মন্দ হয়নি। প্রথমে সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। প্রশ্নপত্রও যথাসময়ে ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তাও শেষ রক্ষা হরলো না। কারণ, পরীক্ষার দিন সকালে বিকানের থেকে পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের জেরা করে এই ঘটনার কথা জানতে পারে তারা। তারপর রাজস্থানের পাঁচটি শহর থেকে ওই চপ্পল পরা পাঁচজন পরীক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১২ ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দেয়া হয় ইন্টারনেট পরিষেবা। হাই টেক দুর্নীতি রুখতে এই পন্থাই নিতে হয়েছিল পুলিশকে।
ভারতে পরীক্ষার হলে হাই টেক দুর্নীতি নতুন নয়, তবে তার রূপবদল হয়েছে। ২০১৩ সালে মধ্যপ্রদেশে ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষায় হাই টেক দুর্নীতি হয়েছিল। সেখানে পরীক্ষার্থীর বদলে কোনো পেশাদার চিকিৎসক বা ডাক্তারি পড়ছে এমন কোনো মেধাবী ছাত্র গিয়ে পরীক্ষা দিয়ে আসত। বোর্ডের দুর্নীতিগ্রস্ত অফিসার ও কর্মকর্তারা পরীক্ষার্থীর এডমিট কার্ডে ছবি বদল করে দিতেন। পরীক্ষা হয়ে গেলে আবার সেই ছবি বদল করে পরীক্ষার্থীর ছবি বসানো হতো। শুধু তাই নয়, কিছু ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থী নিজেই পরীক্ষা দিত। যে উত্তর তারা জানে সেই উত্তর দিত। পরে বোর্ডের কর্মকর্তারা সেই খাতায় বাকি ঠিক উত্তরগুলি বসিয়ে দিত। এই ভাবে খুব ভালো নম্বর নিয়ে সে পরীক্ষায় পাস করে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেত। কিছু পরীক্ষার্থীকে প্রশ্নপত্র ফাঁসও করে দেয়া হতো। আর এসবই করা হতো বিপুল অর্থের বিনিময়ে। এর সঙ্গে দালাল, রাজনীতিক, আমলা সহ বিপুল চক্র কাজ করতো। এই কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর অনেকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। সরকারি মতে সংখ্যাটা ২৫ থেকে ৪০-এর মতো। বেসরকারি মতে সংখ্যাটা একশর মতো। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, দুর্নীতিবাজদের ক্ষমতা কতটা।
পরীক্ষার ক্ষেত্রে ভারতে আরেকটি হাই টেক দুর্নীতি কিছু বছর আগে ধরা পড়েছিল। পরীক্ষার্থীরা বিশেষ কলম নিয়ে যেত। সেই কলম দিয়ে প্রশ্নপত্র স্ক্যান করে ব্লুটুথ ব্যবহার করে পাঠিয়ে দিত বাইরে। কিছুক্ষণ পর জবাব এসে যেত তাদের কাছে। এখন তাই পরীক্ষার হলে মোবাইল নিয়ে যাওয়া বন্ধ। কলেজ শিক্ষকদের প্যানেলে নাম তোলার জন্য নেট পরীক্ষা এখন দিতে হয় কম্পিউটারে। অন্য অনেক পরীক্ষাও তাই। এখানে কম্পিউটারই উত্তরপত্র চেক করে। এই পদ্ধতির নাম হলো অপটিক্যাল মার্ক রেকগনিশন বা ওএমআর। শুধু নিজের এডমিট কার্ড ও পরিচয়পত্র ছাড়া কিছুই পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যেতে দেয়া হয় না।
কিন্তু প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যেমন নিত্যনতুন উদ্ভাবন হচ্ছে, তেমনই প্রযুক্তি ব্যবহার করে দুর্নীতির নতুন নতুন পন্থাও গজিয়ে উঠছে। আর যেহেতু কিছু পরিবার চাকরির জন্য, ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির জন্য লাখ লাখ টাকা খরচ করতে রাজি, তাই শিক্ষাক্ষেত্রে হাই টেক দুর্নীতির রমরমা। এর বাইরে হাই টেক দুর্নীতির শিকার হলেন সাধারণ মানুষ, যারা হঠাৎ দেখেন, তাদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে কয়েক লাখ টাকার কেনাকাটা হয়ে গেছে। দিন দুই আগে আমারই এক প্রতিবেশীর ক্রেডিট কার্ড থেকে আড়াই লাখ টাকার জিনিস কেনা হয়েছে। তার কাছে জিনিস কেনার মেসেজ আসার পর তিনি হতবাক। যে বা যারা জালিয়াতি করেছে, তারা পিন নম্বর ব্যবহার করে জিনিস কিনেছে। কী করে তারা পিন পেল তা ব্যাংক বা পুলিশ কেউই জানায়নি। পুলিশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এক মাসের মধ্যে তারা টাকা উদ্ধার করবে। ব্যাংক তাকে বলেছে, তিন মাসের মধ্যে তিনি টাকা ফেরত পাবেন। কিন্তু আগে তো জালিয়াতরা ধরা পড়ুক। পুলিশ বা ব্যাংক এত তৎপর হলে তো এই ধরনের জালিয়াতি করার সাহসই হতো না।
মাঝখানে দিল্লিতে এটিএম মেশিনে ক্যামেরা বসিয়ে দিত জালিয়াতেরা। সেখানে আপনি ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে টাকা তুললেই কার্ড নম্বর, পিন নম্বর সব ধরা পড়ে যেত ক্যামেরায়। তারপরেই জালিয়াতরা তা ব্যবহার করে টাকা তুলে নিত। যে সব ব্যাংকের এটিএমে গার্ড নেই, সেখানে এই জালিয়াতি বেশি হতো।
ফলে রিজার্ভ ব্যাংককে লাগাতার বিজ্ঞাপন দিতে হয়, দয়া করে কাউকে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের পিন শেয়ার করবেন না। তাহলে বিপদ। কিন্তু এখন তো দেখা যাচ্ছে, পিন শেয়ার না করেও টাকা বাঁচানো যাচ্ছে না। তা হলে উপায়? একদিকে ডিজিটাল পেমেন্টের জন্য উৎসাহ দিচ্ছে সরকার। অন্যদিকে ডিজিটাল পেমেন্টের পথে জালিয়াতির ফাঁদ পাতা। মানুষ যায় কোথায়? প্রতিবেশীর তো ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি করে আড়াই লাখ টাকার জিনিস কিনে নিয়েছে জালিয়াতরা। এরপর তিনি যদি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার বন্ধ করে দেন, তা হলে?
এখন যেমন প্রযুক্তির ফাঁদ পাতা ভুবনে, তেমনই পাতা রয়েছে জালিয়াতদের ফাঁদও। জেনে-না জেনে সেই ফাঁদে বিস্তর মানুষ পা দিচ্ছেন বা অজান্তেই ফাঁদে পড়ছেন। ফলে সাধু সাবধান। যে সাবধানতা নেয়ার দরকার তা নিন। তারপরেও উচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করে জালিয়াতরা আপনার পকেট ফাঁকা করবে কি না, করলে সেই টাকা কবে পাবেন, আদৌ পাবেন কি না, সেসব বড় গোলমেলে প্রশ্ন, যার উত্তর সহজে পাওয়া যায় না। তাই একটা নিয়ম করা খুবই জরুরি, এভাবে টাকা গেলে গ্রাহকদের টাকা দিতে বাধ্য থাকবে ব্যাংক। না হলে, সাধারণ মানুষ এই জালিয়াতদের কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত হবেন। সূত্র : ডিডব্লিউ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।