Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভেস্তে যেতে বসেছে পাঁচ কোটি টাকার সড়ক বাতি

স্টাফ রিপোর্টার, মাদারীপুর থেকে : | প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

ভেস্তে যেতে বসেছে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়ক বাতি। মাদারীপুরের রাজৈর পৌরসভায় ৫ শতাধিক সৌরবাতি স্থাপন করলেও জনগণের কোনই উপকারে আসছে না। অধিকাংশ বাতি অকেঁজো হয়ে পড়ে আছে কয়েক বছর ধরে। আবার কাগজে-কলমে বাতি থাকার কথা থাকলেও সেখানে বাতির অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এতে রাতের আধারে বাড়ছে চুরি ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড। তবে পৌর মেয়রের দাবি জনবল সঙ্কটের কারণে রক্ষণাবেক্ষণ করা যাচ্ছে না সড়ক বাতিগুলো।
রাজৈর পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের অর্থায়নে প্রায় ৫ শতাধিক স্থানে সৌরবাতি স্থাপন করে পল্লী-দারিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এতে রাজৈর পৌরসভার বিভিন্ন সড়কের পাশে ৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫১৭টি সৌরবাতি স্থাপন করা হয়। স্থাপনের ৫ থেকে ৬ মাস পর থেকেই বাতিগুলো নষ্ট হতে থাকে। এরইমধ্যে বেশ কিছু সড়কের বাতি ভেঙ্গে পড়ে রয়েছে। সৌরবাতি ঠিকমত জ্বলছে কি-না মাঝে মাঝে তা পরীক্ষা করার কথা থাকলেও স্থাপনের পর কোন খোঁজই রাখেনি প্রতিষ্ঠান নির্মাতা প্রতিষ্ঠানসহ রাজৈর পৌরসভা। ফলে সন্ধ্যা হলে আঁধার নেমে আসে পৌরসভার সড়কগুলোতে। যে উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি নেয়া হয়েছিল, তা কার্যত ভেস্তে যেতে বসেছে। এতে ক্ষোভের অন্ত নেই পৌরবাসীর। তারা দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবী করেন।
পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কুন্ডুপাড়া এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইট-সুরকির তৈরি রাস্তার পাশে বেশ কয়েকটি সৌরবাতির খুঁটি মাটিতে পড়ে আছে। খুঁটির সাথে বাতি, তার ও আনুষাঙ্গিক অন্যান্য যন্ত্রাংশও পানি-কাঁদার সাথে লেপ্টে আছে। দেখে বোঝার উপায় নেই, এসব খুঁটিতে বাতিগুলো জ্বলেছে। কিছু খুঁটি দাড়িয়ে থাকলেও সেখানে বাতি অকোঁজে হয়ে পড়ে আছে।
কোনটাতেই আলো জ্বলার ব্যবস্থা নেই। এ এলাকায় সৌরবাতি নির্মাণের কিছুদিন পর থেকেই আর বাতি জ্বলেনি। এলাকাবাসী পৌরসভাকে বার বার জানালেও তারা কোনই ব্যবস্থা নেইনি বলে অভিযোগ তাদের। এ বাতিগুলোর মতোই পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডে একই চিত্র।
এ ব্যাপারে পৌরসভার মজুমদারকান্দি এলাকার পলাশ ফরাজী বলেন, ‘আমাদের রাজৈর পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে সৌরবাতির খুঁটি পড়ে আছে। কোথাও সৌরবাতির খুঁটি চুরি হয়ে গেছে। পৌরসভার সাবেক মেয়র শামীম নেওয়াজ মুন্সির আমলে কাজটি হয়েছে। এটা কিভাবে হলো আমরা বুঝি না।’
পৌরসভার দীঘিরপাড় এলাকার রিপন মিয়া জানান, বিভিন্ন স্থানে রাস্তার পাশে সৌরবাতির খুঁটি পড়ে থাকতে দেখছি। কেউ কোন দিন খোঁজ খবরও নেয় নাই কেন এসব এভাবে পড়ে আছে।
নাঈম হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় মোড় আছে। অন্ধকারে মোড়গুলো দেখা যায় না। যার ফলে মাঝে মাঝেই দুঘর্টনা ঘটে। যদি মোড়ে মোড়ে বাতিগুলো ঠিক মতো থাকতো, তাহলে অনেক দুঘর্টনা কম হতো। এছাড়া চুরি-ডাকাতিও বেড়ে গেছে।
রাজৈর পৌরসভার সচিব মো. মাসুদ আলম জানান, ‘২০১৫ সালের ৩০ জুনের মধ্যে সববাতি লাগানো হয়েছিল। তারপরের দুইবছর নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের মেরামতের দায়িত্ব ছিল। এরপর রাজৈর পৌরসভার তত্ত্ববধানে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব। তবে ৬০ শতাংশ বাতি সচল আছে আর ৪০ শতাংশ বাতি প্রকৃতি দুর্যোগের কারণে হয়ত নষ্ট হয়ে গেছে। যা মেরামতের চেষ্টা চলছে।’
অভিযোগে বিষয়ে রাজৈর পৌরসভার মেয়র নাজমা রশিদ জানান, ‘বতমানে রাজৈর পৌরসভায় জনবলের অভাব রয়েছে। তবে আমি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই স্থানীয়দের মাধ্যমে বাতিগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের চেষ্টা করেছিলাম। তাতেও তেমন কোন ফল আসেনি।’ মেয়র নাজমা রশিদ আরো বলেন, ‘যে কোম্পানি এই বাতিগুলো স্থাপন করেছিলো আমরা তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তাদের টেকনিশিয়ান দিয়ে নষ্ট হওয়া বাতিগুলো ঠিক করা যায় কি না। তবে আমি নতুন ভাবে সড়কবাতি স্থাপন করার জন্য আরো একটি প্রকল্প দিয়েছি। এটা কার্যকর হলে রক্ষণাবেক্ষণে আর সমস্যা থাকবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ