বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর ফারুক (রা.) একদিন মদীনার মসজিদে নাবুবীতে অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামের সাথে কোরআনুল কারীমের ফাজায়েল সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। তাদের মধ্যে একজন বললেন সূরা বারাআতের শেষাংশ সর্বোত্তম।
আর একজন বললেন-কা-ফ হা-ইয়া-আইন-সোয়াদ ও ত্বা-হা সর্বোত্তম। এভাবে প্রত্যেকেই আপন আপন জানা অনুসারে বিভিন্ন উক্তি করেন। এই মজলিসে হযরত উমর বিন মায়দী কারব (রা.) ও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন : হে আমীরুল মুমেনীন! আপনারা বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম-এর বিস্ময়কে ভুলে গেছেন দেখছি। আল্লাহর কসম! বিসমিল্লাহ-এর মধ্যে এক অত্যাশ্চার্য শক্তি নিহিত আছে।
একথা শুনে খলীফা হযরত উমর বিন খাত্তাব (রা.) সোজা হয়ে বসলেন এবং বললেন : হে আবু মাছুর? আপনি আমাদের কাছে বিস্মিল্লাহ-এর বিস্ময়কর বিষয়টি খুলে বলুন। সুতরাং হযরত উমর বিন মায়দী কারব (রা.) বর্ণনা আরম্ভ করলেন : হে আমীরুল মুমেনীন! জাহেলিয়াতের যুগে একবার আমরা ভীষণ দুর্ভিক্ষের শিকার হই। সে সময় একদিন আমি রুজীর সন্ধানে ঘোড়ায় চড়ে জঙ্গলে যাই। এভাবে আমি কিছু দূর গমন করার পর আমার সামনে একটা ঘোড়া, কিছু গবাদি পশু ও একটা তাঁবু নজরে পড়ল। আমি তাঁবুর কাছে পৌঁছলাম। তাঁবুতে একজন সুন্দরী মলিহাকে দেখতে পেলাম। তাঁবুর সামনে এক বৃদ্ধকে হেলান দিয়ে পড়ে থাকতে দেখলাম। আমি বৃদ্ধকে বললাম, তোমার কাছে যা কিছু আছে তা’ আমাকে দিয়ে দাও। তোমার মা তোমাকে ধ্বংস করুক।
বৃদ্ধটি বলল, তুমি যদি আতিথেয়তা চাও, তাহলে নেমে এস। আর যদি সাহায্য চাও তাহলে বল, আমরা তোমাকে সাহায্য করব। আমি বললাম-তোমার মাতা তোমাকে ধ্বংস করুক। তোমাদের জিনিসপত্র সব আমাকে দিয়ে দাও?
তখন সে এমন দুর্বল বৃদ্ধের মতো উঠল, সে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। তারপর বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম বলতে বলতে আমার দিকে এগিয়ে এলো এবং আমাকে ধরে এমন জোরে টান দিলো যে আমি নিচে পড়ে গেলাম এবং সে আমার বুকের ওপর চড়ে বসল। তখন সে বলল, তোকে ছেড়ে দেব নাকি মেরে ফেলব? আমি বললাম, আমাকে ছেড়ে দাও। সুতরাং সে আমার ওপর থেকে উঠে গেল।
আমি মনে মনে ভাবলাম, আমি মরু আরবের এক বিখ্যাত বীর। এই বৃদ্ধটি থেকে পালিয়ে যাওয়ার চাইতে আমার মরে যাওয়াই ভালো। সুতরাং আমার মন-মগজ পুনরায় আমাকে লড়াই করার জন্য উত্তেজিত করে তুলল। আমি বৃদ্ধটিকে লক্ষ্য করে বললাম, তোমার মাতা তোমাকে ধ্বংস করে দিক। তোমাদের মাল-পত্রগুলো আমাকে দিয়ে দাও। তারপর পুনরায় সে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম বলতে বলতে আমার দিকে তেড়ে আসল এবং আমাকে এমন জোরে টান দিলো যে আমি তার নিচে চলে গেলাম এবং সে আমার বুকের ওপর চড়ে বসল।
বলল, বল, তোমাকে হত্যা করব নাকি ছেড়ে দেব? আমি বললাম, ছেড়ে দাও। সুতরাং সে আমাকে ছেড়ে দিলো। পুনরায় পরাজয়ের গ্লানি আমাকে ধিক্কার দিতে লাগল, আমি ক্ষীপ্ত হয়ে বললাম, তোমার মাতা তোমাকে খতম করে দিক। তোমার যাবতীয় মাল সম্পদ আমাকে দিয়ে দাও? সে পুনরায় বিসমিল্লাহ পড়তে পড়তে আমার দিকে ধেয়ে আসল। আমি শিউরে উঠলাম। সে এমন জোরে আমাকে টান দিলো যে আমি তার নিচে গিয়ে পড়লাম। তখন আমি সবিনয়ে বললাম, এবারেও আমাকে ক্ষমা করে দাও।
সে বলল, তিন বারের মাথায় আমি তোমাকে ছেড়ে দেব না। তারপর বলল, ওহে বাঁদী? তীক্ষèধার তরবারিটি নিয়ে এস? বাঁদী তরবারিটি বুড়োর হাতে তুলে দিলো। বুড়ো আমার মাথার টিকি কেটে দিলো এবং ছেড়ে দিলো।
হে আমীরুল মুমেনীন! জাহেলিয়াতের যুগে আমাদের মাঝে এই রীতি ছিল যে, কেউ মাথার টিকি কেটে দিলে পুনরায় টিকি না উঠা পর্যন্ত আমরা বাড়ি ফিরতে লজ্জা বোধ করতাম। কাউকে মুখ দেখাতেও চাইতাম না। নীরবে নিভৃতে সময় কাটাতাম। বৃদ্ধ লোকটি আমাকে বলল, উমর! টিকি কাটা অবস্থায় কোথাও না গিয়ে বরং এক বছর যাবত তুমি আমার খেদমত করবে, আমার সাথে থাকবে। লোক লজ্জার হাত হতে রেহাই পাবে। অগত্যা আমি এই প্রস্তাব মেনে নিলাম এবং এক বছর যাবত বুড়োর সেবা করতে রাজি হয়ে গেলাম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।