Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হয়রানি রোগীদের

খুলনায় মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের দৌরাত্ম্য

খুলনা ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

রোববার, দুপুর দেড়টা। খুলনার জোড়াগেট এলাকায় ডায়াবেটিক সমিতির হাসপাতালে একজন চিকিৎসকের চেম্বার থেকে বের হলেন মহিলা রোগী। বের হওয়া মাত্র ৫/৬ জন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ তাকে ঘিরে ধরলেন। হাতের চিকিৎসা নির্দেশিকা বইটি এক প্রকার জোর করে নিয়ে নিলেন। দেখলেন চিকিৎসক কী কী ওষুধ লিখেছেন। মোবাইল ফোনে বইটির কয়েকটি পৃষ্ঠার ছবি তুললেন। মিনিট পাঁচেক পর সেই রোগীর নিষ্কৃতি মিললো। একইভাবে আরো কয়েকজন রোগীর চিকিৎসা বই দেখার নাম করে এক প্রকার হেনস্তা করলেন তারা।
অনেক অনুরোধের পর কথা বলতে রাজি হলেন একটি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের রিপ্রেজেন্টেটিভ। নাম বলা যাবে না এমন শর্তে তিনি জানালেন, আমরা সেলস বিভাগে কাজ করি। বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসকদের আমরা নানা উপঢৌকন দেই। আমাদের ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখলে বিশেষ উপহারের ব্যবস্থা রয়েছে চিকিৎসকদের জন্য। উপঢৌকন নেয়ার পরও চিকিৎসকরা আমাদের ওষুধ প্রেসক্রিপশানে লিখছেন কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমারা রোগীদের দাঁড় করিয়ে চিকিৎসা বই যাচাই করি। এটা চিকিৎসকরাও জানেন। তাই তারাও বাইরের কোন ওষুধ না লিখে আমাদেরই ওষুধ গুলোই রোগীদের খেতে নির্দেশনা দিয়ে থাকেন।
খুলনা ডায়াবেটিক সমিতি থেকে যাওয়া হলো খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানে সুন্দর করে লেখা রয়েছে ‘রোগী দেখার সময় কোনো মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ চিকিৎসকের কক্ষে প্রবেশ করবেন না’। কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানেও রয়েছে তাদের একই রকম দৌরাত্ম। সংখ্যায় কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ জন। হয়রানির শিকার হলেও রোগীদের প্রতিবাদ করার কোনো সুযোগ নেই।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সার্জারী ওয়ার্ডের ভর্তি রোগী রফিকুল ইসলামের স্বজন ও জলার পাইকগাছা উপজেলা থেকে আসা রেজাউল করীম জানালেন, কোনো প্রেসক্রিপশন নিয়ে ওষুধ কিনতে গেলে ওরা (মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ) ধরে বসে। হাসপাতালের ভিতরেও ধরে, বাইরে ওষুধের দোকানের সামনে ধরে। এটা খুবই বিরক্তিকর। কেউ তাদের কিছু বলে না।
খুলনার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আমিরুল ইসলাম বলেন, ওষুধ কোম্পানীর স্বার্থ রক্ষা করে ওষুধ লিখলে রোগীর স্বাস্থ্য বিপন্ন হতে পারে। সকল কোম্পানীর ওষুধের মান এক রকম নয়। ভালো আছে, মন্দও আছে। তাই রোগীর জন্য যেমন ওষুধ দরকার, একজন চিকিৎসকের ঠিক তেমন ওষুধ প্রেসক্রাইব’ করা উচিৎ। তাছাড়া মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের মন যোগাতে বিভিন্ন ফুড সাপ্লিমেন্টসহ বাড়তি ওষুধ লেখার প্রবনতা অনেক চিকিৎসকের রয়েছে। যা দু:খজনক।
এ বিষয়ে খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের হাসপাতালে প্রবেশের কোনো নিয়ম নেই। তারপরও মানবিক দিক থেকে তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে সপ্তাহে দু’দিন যাওয়ার মৌখিক অনুমতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া বর্হিবিভাগে যতক্ষণ রোগী থাকবে, সেই সময় তারা হাসপাতালগুলোতে ঢুকবে না-এমন নির্দেশনা দেয়া আছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তাদের প্রবেশে নিষিদ্ধ করে দেয়া হবে।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. জসিমউদ্দিন হাওলাদার বলেন, কোথাও কোনো হাসপাতালে রোগী হয়রানির শিকার হয়েছেন, এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে সেই হাসপাতালের পরিচালক, তত্বাবধায়কসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের দৌরাত্ম্য

২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ