বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সকল ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর, বিশ্বপ্রকৃতি তার হুকুমেই চলে, আল্লাহর রহমত ছাড়া মানুষ চরম অসহায়। আল্লাহ সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান। ইল্লাল্লাহা আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর। পবিত্র কোরআনে বহুবার এ কথাটি এসেছে। এ বিশ্ব প্রকৃতি সৃষ্টিজগত আল্লাহর নির্দেশে তার নিঁখুত ব্যবস্থাপনায় প্রতিনিয়ত চলছে। মানুষের ধারণা ও কল্পনার চেয়েও বড় এবং সুনিপুন সৌরজগত, মহা বিজ্ঞানময় অনুপম এই পৃথিবীর প্রতিটি কণা, অণু-পরমাণু আল্লাহর হুকুমে বিবর্তিত হয়। ইউসাব্বিহু লাহূ মা ফিস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ। আকাশ মণ্ডলী ও বিশ্ব চরাচরে যা কিছু আছে, সবই আল্লাহর গুণগান ও পবিত্রতা বর্ণনার তসবিহ পড়ে। আল্লাহ পরম ক্ষমতাশালী, মহাপ্রজ্ঞা ও কৌশলময়। (সূরা হাশর : ২৪)।
তুরস্কে সর্বকালের বড় দাবানল দেখা গেছে ২০২১ এর জুলাই ও আগস্টের দশ পনেরো দিন। তুরস্ক বিশাল একটি রাষ্ট্র। এর পার্বত্য বনাঞ্চল ও উপকূলীয় পর্যটন এলাকায় শত শত জায়গায় একই সাথে দাবানল জ্বলে ওঠে। এর ভয়াবহতা ছিল ভাবনাতীত। মাইলের পর মাইল বন ও পাহাড়ি গ্রাম পুড়িয়ে আগুনের লেলিহান শিখা সমুদ্রপার পর্যন্ত চলে যায়। পর্যটন রিসোর্ট জ্বলতে থাকে। আগুন লাফিয়ে চলে নতুন এলাকায় দাবানল হয়ে জ্বলে।
বাতাসের গরম তেজ ও আগুনের কালো ধোঁয়ায় আকাশ ঢাকা পড়ে। মানুষ নিঃশ্বাস নিতে না পেরে দৌড়াতে থাকে। নিজের পরনের কাপড়টুকু নিয়েই মানুষ পালাতে শুরু করে। কিছু মানুষ টাকা পয়সা গয়নাগাটি আর ব্যবহারের সামান্য বস্ত্রাদি নিয়ে বাড়িঘর আগুনের মুখে রেখে পালাতে থাকে। গ্রামের নারী পুরুষদের দেখা যায় নিজেদের গবাদি পশুগুলোকে হাঁকিয়ে সমুদ্র তীরে নিয়ে যেতে। আগুনের হাত থেকে আত্মরক্ষার আর কোনো উপায় তাদের ছিল না।
একাধারে দুই সপ্তাহ দাবানল জ্বলতে এবং নতুন নতুন জায়গায় ছড়াতে থাকে। পাশ্ববর্তী অঞ্চল ইজরায়েলে এ দাবানল দেখা গেছে। বিশেষ করে গ্রিসের অনেক অঞ্চল দাবানলের শিকার হয়। তবে তুরস্কের ব্যাপক এলাকাজুড়ে শত শত দাবানল একই সাথে জ্বলতে শুরু করলে দেশটিতে বিপুল আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সতর্কতা ও অব্যাহত নির্বাপন চেষ্টায় প্রাণহীন কম হলেও মানবিক বিপর্যয় ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি বিপুল আকার ধারণ করে।
একসময় তুরস্ক সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে তওবা ও দোয়ার ঘোষণা দেয়। সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে রহমত ও নাজাত কামনা করার, দাবানল নির্বাপন, আবহাওয়ার তাপদাহ, চরম উষ্ণতা, সূর্যালোকে আগুনের হল্কাময় বাতাস আর্দ্রতায় পরিণত করাসহ মুষলধারায় রহমতের বৃষ্টি কামনা করে ইসতিসকার নামাজ এবং জাতীয় পর্যায়ে দোয়া মুনাজাতের ব্যবস্থা নেয়। এতে সে দেশের সেক্যুলার মহল ঠাট্টা বিদ্রুপ শুরু করে। সরকারের এ ঘোষণা নিয়ে স্যোশাল মিডিয়াতেও আল্লাহর শক্তিতে অবিশ্বাসী ধর্মহীনতায় বিশ্বাসী নাস্তিক্যবাদী গোষ্ঠি ব্যাপক ট্রল আরম্ভ করে।
এক পর্যায়ে গত ৬ আগস্ট-২১ তুরস্কের ধর্ম বিষয়ক ডাইরেক্টরেট দিয়ানাত এর প্রধান এবং প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানের ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আলী এরবাশ জাতীয় পর্যায়ে ইসতিসকার নামাজের ব্যবস্থা করেন এবং নিজেই এতে ইমামতি ও দোয়া মুনাজাত করেন। স্থানীয়ভাবেও উপদ্রুত প্রতিটি এলাকায় ইসতিসকা ও তাওবার নামাজ পড়া হয়।
আল্লাহর রহমত নাজিল হয়। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস ছিল আগামী ২০ দিন আনাতোলিয়া অঞ্চলে তাপদাহ চলবে। বৃষ্টিপাতের কোনোই সম্ভাবনা নেই। বাস্তব অবস্থা, আলামত এবং ধারণা মিথ্যা প্রমাণিত করে নামাজের সাথে সাথে তুরস্কে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। দাবানল দুর্বল হয়ে আসে। ৯৮% দাবানল নিভে যায়। সারাদেশে নেমে আসে স্বস্তি। একই সময়ে বিশ্ব মিডিয়া তুরস্কের রহমতের বৃষ্টির সংবাদ প্রচারের সাথে মন্তব্য করে যে, পার্শ্ববর্তী গ্রিসে এসময় একফোঁটা বৃষ্টিও হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।