পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইমিগ্রেশন এবং পাসপোর্ট অধিদফতরের একজন সহকারী পরিচালকের কতই বা আর বেতন? সর্বসাকুল্যে ৪৫ হাজার টাকা। উপ-পরিচালকের বেতনও খুব বেশি নয়, ৫৫ হাজার থেকে ৬৫ হাজার টাকা। পরিচালকের বেতন ৭৫ হাজার টাকা থেকে ৮৫ হাজার টাকা। পাসপোর্টের একজন কর্মকর্তা যদি সহকারী পরিচালক থেকে ১৫ বছরে পরিচালক পদে পদোন্নতি পান তাতেও তার অন্তত কোটিপতি হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু পাসপোর্ট পরিচালক (ঢাকা বিভাগ) মোহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম খান এমনই এক আলাদীনের প্রদীপ হাতে পেয়েছেন। চাকরিজীবনের দেড় দশকে তিনি হয়ে গেছেন অন্তত শত কোটি টাকার মালিক। তার সম্পদের ফিরিস্তি দেখে ভিড়মি খাচ্ছেন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন, এমনকি তদন্ত সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক)। সবার একটাই প্রশ্ন-কি করে তিনি এতো সম্পদের মালিক হলেন? এখনও তার প্রকৃত সম্পদের পরিমাণের ‘তল’ খোঁজা হচ্ছে। তবে এ পর্যন্ত হাতে যা এসেছে তাতেই সংশ্লিষ্টদের আক্কেল গুড়ুম।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০০৪ সালে সহকারী পরিচালক হিসেবে পাসপোর্ট অধিদফতরে যোগদান করেন তৌফিকুল ইসলাম খান। প্রথম পোস্টিং যশোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে। সেখানে ২ মাস যেতেই পোস্টিং হয় ঢাকার সাভার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে। চাকরি জীবনে তিনি নোয়াখালী, গোপালগঞ্জ, সিলেট, কুমিল্লা, ঢাকার যাত্রাবাড়ি, ঢাকাস্থ হেড অফিস, খুলনা এবং বর্তমানে ঢাকা সদর দফতরে অবস্থিত ঢাকা বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে পরিচালক হিসেবে রয়েছেন। এর মধ্যে তিনি সহকারী পরিচালক ছিলেন ৭ বছর, উপ-পরিচালক ছিলেন ৮ বছর এবং উভয়পদে মোট ১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার ৩ মাসের মধ্যে পরিচালক পদে পদোন্নতি পান। এ সময় তিনি সর্বসাকুল্যে যথাক্রমে- ৫৫ হাজার টাকা, ৬৫ হাজার টাকা এবং এখন ৭৫ হাজার টাকা করে বেতন তুলছেন। সরকারি হিসেবের এই অর্থ গ্রহণ করেও তিনি কি করে এতো অর্থ-বিত্তের মালিক হলেন?
দু’বছর আগে রাষ্ট্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থা পাসপোর্ট পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম খান সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন। সে অনুযায়ী, পাসপোর্টের এই পরিচালকের নামে রয়েছে ঢাকার উত্তরায় ১৫শ’ বর্গফুটের ফ্ল্যাট। কেনা হয় ১ কোটি ১০ লাখ টাকায়। ধানমন্ডিতে ২ হাজার বর্গফুটের প্লট। কেনা হয় ২ কোটি টাকায়। ধামন্ডির গ্রিন রোডে সাড়ে ১২শ’ বর্গফুটের ৩টি ফ্ল্যাট। একেটির মূল্য ৮০ লাখ টাকা। লালমাটিয়ায় ১৩শ’ বর্গফুটের ফ্ল্যাট। মূল্য ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। ইন্দিরা রোডে একটি ফ্ল্যাট কেনেন ৬৫ লাখ টাকায়। ঘনিষ্ট বন্ধুর নামে বুকিং এবং অবশিষ্ট মূল্য পরিশোধ করেন। শান্তিনগরে বিশাল ফ্ল্যাট। এটি কেনা হয় ১ কোটি ২৬ লাখ টাকায়। এটির মূল্য তৌফিক তার ভাইয়ের নামে ‘পরিশোধ’ দেখান। রাজধানীর নীলক্ষেতে আছে ২টি দোকান। একত্রে কেনা হয় ২ কোটি ২০ লাখ টাকায়। বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর রয়েছে ৬৪ লাখ টাকার।
তৌফিক প্লট কিনেছেন যখন যেখানে ইচ্ছে। এর মধ্যে মিরপুর রূপনগর (সম্প্রসারিত) প্রকল্পে ২ কাঠার প্লট কেনেন ১ কোটি ১০ লাখ টাকায়। উত্তরায় ৩ কাঠার প্লটটি কেনেন ১ কোটি ৫০ লাখ দিয়ে। এখন বাজার দর ২ কোটি। রাজধানীর বনশ্রীতে রয়েছে সাড়ে ৩ কাঠার প্লট। শাশুড়ির নামে ওটা ৩ কোটিতে কেনা। হালের বাজার মূল্য সাড়ে ৩ কোটি। নিজ জেলা নেত্রকোনায় ১৪.৫৭ শতাংশের ওপর দোতলা বাড়ি। নিচে দোকান। এটি ২ কোটি ১০ লাখে কেনা। নেত্রকোনায় রয়েছে আরেকটি ৬ তলা বাড়ি। এটি পৌনে ৪ শতাংশ জায়গার ওপর। কিনেছেন ২ কোটি টাকায়। নেত্রকোনা নিজ গ্রামে একটি দাগে কিনেছেন ৪ একর কৃষি জমি। এটির আনুমানিক দাম ১ কোটি ৮০ লাখ। মোহনগঞ্জে কেনেন একসঙ্গে ১৩ একর ৮০ লাখ টাকায়।
মোট নগদ অর্থ রয়েছে ৪ কোটি ১০ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের ব্যাংকে রয়েছে ৬৫ লাখ টাকা। স্বর্ণালঙ্কার আছে ৪৫ ভরি। মূল্য ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পারিবারিক ব্যবহারের জন্য কিনেছেন ২টি গাড়ি। একটি ফিল্ডার। একটি নোয়াহ। মূল্য ২২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। নগদ রয়েছে ৩ হাজার মার্কিন ডলার। ৭শ’ সিঙ্গাপুরী ডলার। ইউরো রয়েছে ৯ হাজার। কোথায় কোন উপলক্ষে কত খরচ করেছেন তারও উল্লেখ রয়েছে।
মিলেছে উপ-পরিচালক থেকে পরিচালক হওয়ার পেছনের খরচাপাতির ফর্দও। সচিবকে (সুরক্ষা ও প্রশাসন) দিয়েছেন ৭৫ লাখ টাকা। তার পিএসকে দেন ১৫ লাখ টাকা। এক যুবলীগ নেত্রীকে দিয়েছেন ৮ লাখ। উপ-পরিচালক হিসেবে কুমিল্লায় বদলি হওয়ার জন্য তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক (বর্তমানে মৃত) রফিকুল ইসলামকে দিয়েছেন ৪০ লাখ টাকা। সিঙ্গাপুর গিয়ে ক্যাসিনো খেলে হারিয়েছেন ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কয়েকটি মাদরাসায় সাহায্য করেছেন ১ কোটি ১৬ লাখ টাকা। কালো টাকা সাদা করতে লগ্নি করেন পুঁজিবাজারে। সেখানে লোকসান গোনেন ২ কোটি ৩১ লাখ টাকা। কৃষিতে বিনিয়োগ করেন সবচেয়ে কম- ২ লাখ টাকা। গাড়ি কেনায় লোকসান দেখান ২০ লাখ টাকা। আড়াই লাখ টাকায় পিস্তল কিনেছেন। ভাই ও শ্বশুরকে আর্থিক সহায়তা করেছেন ২২ লাখ টাকা। পাঁচ তারকা হোটেলে বিয়েবার্ষিকী উদযাপন করেছেন ১০ লাখ টাকা খরচ করে। বিভিন্ন জনকে ঋণ দিয়েছেন ১৮ লাখ টাকা। ধানমন্ডির একটি ফ্ল্যাটের সৌন্দর্যবর্ধনে খরচ করেছেন ৩৯ লাখ টাকা। নেত্রকোনা শহরের বাসার শোভাবর্ধনে খরচ করেন ১১ লাখ টাকা। বিদেশে চোখের চিকিৎসায় ব্যয় করেন ১০ লাখ টাকা। সপরিবারে বিদেশ ভ্রমণে খরচ করেন ৪০ লাখ টাকা। বিভিন্নজনকে দান করেন সাড়ে ৪ লাখ টাকা। এভাবে ৯ কোটি ১৮ লাখ টাকার ব্যয়-বিবরণী রয়েছে তৌফিকের। তবে প্রকৃতপক্ষে তার সম্পদের পরিমাণ আরও বেশি। এটি অর্ধশত কোটি টাকা কিংবা তারচেয়েও অধিক হতে পারে। কেবল দুর্নীতি দমন কমিশনের যথাযথ অনুসন্ধানে প্রকৃত তথ্য জানা যেতে পারে।
সংস্থার প্রতিবেদনে তৌফিকুল ইসলাম খানের ঘুষ-দুর্নীতি সিন্ডিকেট এবং তাদের কার্যক্রমের ফিরিস্তিও রয়েছে। কোথায়, কোন অফিসের কার কাছ থেকে তিনি নিয়মিত মাসোয়ারা পেতেন, পাসপোর্টের উপরস্ত কোন কর্মকর্তাকে কত হারে তিনি মাসোয়ারা দিতেন তা উল্লেখ রয়েছে। কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলায় প্রাইজ পোস্টিং এবং পদোন্নতি লাভে কাকে কত টাকা দিয়েছেন অকপটে তৌফিক তা নিজেই স্বীকার করেছেন। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক ঘুষ-বাণিজ্যে পাসপোর্টের পাঁচ কর্মকর্তার সমন্বয়ে তার একটি বিশ্বস্ত সিন্ডিকেট ছিলো। এই সিন্ডিকেটে পরিচালক আবু সাইদ, মাজহারুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল মামুন, উপ-পরিচালক মাসুদ এবং রাজ আহমেদের নাম রয়েছে। এছাড়া ঘুষ বাণিজ্যের সহযোগী হিসেবে রয়েছেন পাসপোর্টর আকিকুল ইসলাম, জুবায়ের, দুলদুল, জসিম এবং পিএ মাজহার।
দুদক সূত্র জানায়, তৌফিকসহ ‘জি-২৫’ ভুক্ত পাসপোর্টের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের বিষয়ে দু’বছর আগে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অনুসন্ধানের বর্তমান পর্যায়ে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কয়েকজনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে মামলার প্রস্তুতি চলছে। উপ-পরিচালক আবু বকর সিদ্দিকের নেতৃত্বে একটি টিম বিষয়টি অনুসন্ধান করছে। তবে দুর্নীতিতে চৌকষ পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম উচ্চ পর্যায়ে তদবির করে নিজের অনুসন্ধানটির কর্মকর্তা পরিবর্তন করেছেন বলে জানা গেছে। দুদক থেকে দায়মুক্তি পেতে নিজ এলাকা নেত্রকোনায় বাড়ি এমন একজন সহকারী পরিচালকের কাছে স্থানান্তরের আদেশ করিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপ-পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক বিষয়টি ‘অনুসন্ধানাধীন’ বিবেচনায় কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদককে বলেন, দুদক আমাদের বিষয়ে কি অনুসন্ধান করছে জানা নেই। সেটির আপডেট দুদকই বলতে পারবে। আমার কাছে কোনো খবর নেই। তিনি বলেন, আমাদের (পাসপোর্ট) কাউকে কাউকে দুদক তলব করেছে। হয়তো আমাকেও করবে। এর বেশি আমার জানা নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।