Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হাড়িয়ে যাচ্ছে পাহাড়ে বন প্রাণী

খাগড়াছড়ি থেকে মো.ইব্রাহিম শেখ | প্রকাশের সময় : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:৪৬ পিএম

খাগড়াছড়ি পার্বত্য পাহাড়ি অঞ্চলের এখন আর চোখে পড়ে না বন্য প্রাণী এক সময় নানা প্রাণীর বিচরণ ছিল। হরিণ, হাতি, বন মোরগ, শিয়াল, গুইসাপসহ বিভিন্ন প্রাণী ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামে গভীর অরণ্যে। কিন্তু ‘ক্রমাগত বন ধ্বংস, বৃক্ষ নিধন এবং জুম চাষের জন্য পাহাড় পোড়ানোর কারণে ইতোমধ্যে হারিয়ে গেছে অনেক বনের পশু পাখি। শিকারীদের অপতৎপরতা আর এক সময়ের অভয়ারণ্য হারিয়ে যাওয়ায় বন্য প্রাণী শূন্য হয়ে গেছে এখানকার পাহাড়গুলো। বন বিভাগ বলছে, জনসংখ্যা বাড়ার কারণে বন কমছে, ফলে বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য দখল হওয়ায় তারা অন্যত্র ছুটছে।

স্থানীয় আদিবাসীরা জানায়, তারা দুই যুগ আগেও এসব পাহাড়ে দেখেছে হাতি, চিতাবাঘ ও ভাল্লুকের মতো প্রাণী। খুব কম সময়ের ব্যবধানে কেবল এসব প্রাণীই হারিয়ে যায়নি, হারিয়ে যেতে বসেছে খুব পরিচিত হরিণ, সজারু, বনরুই, খরগোশ, খেকশিয়ালও। এখন আর আগের মতো দেখা যায় না বানর, বন শুকর, বন হাঁস-মুরগি প্রভৃতি প্রজাতির জীবজন্তু।

দীঘিনালার রিজার্ভ ফরেস্টভুক্ত ইয়ারিংছড়ি এলাকার অংসা মামা ইনকিলাবকে জানান, এক সময় জঙ্গলে দেখা যেত হাতি, চিতা বাঘ, ভাল্লুকসহ বিভিন্ন জীব। এখন তো গোটা পাহাড় খুঁজে একটি হরিণ পাওয়াও দুঃসাধ্য। পানছড়ির লোগাং সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা সবিতা চাকমা কথা প্রসঙ্গে বললেন, 'আগের মতো হাতি, হরিণ, খরগোশ দেখি না। বসতির বিস্তৃতির সঙ্গে সঙ্গে বনের এসব জীবগুলো হয়ত আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।'

জেলার বিভিন্ন এলাকার পুরনো বাসিন্দারা জানায়, আগে বনে বনে ঢাকা ছিল পাহাড়ি অঞ্চল। অভিযোগ রয়েছে, বন বিভাগের সহযোগিতায় রিজার্ভ ফরেস্টের গাছ উজাড় শেষ করে এখন প্রাকৃতিক বন, পাহাড়ের অংশীদারিত্বমূলক বনের গাছ কাটা চলছে। ফলে আগের মতো পাহাড় ও বনের অস্তিত্ব নেই। খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক প্রদীপ চৌধুরী জানান, অব্যাহত বৃক্ষ নিধন ও বনের প্রাণীগুলোর প্রতি মানুষের নিষ্ঠুর আচরণের কারণে অভয়ারণ্য বিনষ্ট হয়েছে। ফলে প্রাণীরা পালিয়েছে। এতে পার্বত্য অঞ্চলের প্রাণবৈচিত্র্য হারিয়েছে।

বন বিভাগের দুর্বলতা ও দুর্নীতির কারণে আমাদের প্রিয় প্রাণী হারিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ওপাহারের এক কৃষক মোঃ রফিকু ইসলাম জানান, মূলত জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রাণীর সহজাত পরিবেশ নষ্ট হওয়ায় জীবজন্তুরা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। পাহাড়ের প্রাণীরা অভয়ারণ্যের খোঁজে চলে যাওয়ায় কেবল পরিবেশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, ইকো-সিস্টেম নষ্ট হয়েছে।বিশেষ করে চট্টগ্রামের পার্বত্যাঞ্চলে অতিথি আপ্যায়ন, উপঢৌকন প্রদান, শখ করে মাংস চেখে দেখা প্রভৃতি উদ্দেশ্যে এক শ্রেণীর বিবেকবোধহীন মানুষ শিকারিদের বড় অংকের টাকা অগ্রিম দিয়ে রাখে।
বর্তমানে বন্যপ্রাণী রক্ষা আইনে সবরকম বন্য পশুপাখি ধরা, হত্যা, পালন করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও বিশেষ করে আদিবাসীরা বনমোরগ-মুরগি ধরা অব্যাহত রেখেছে। তারা ফাঁদ পেতে এদের শিকার করে। আবার কখনো শস্যদানায় বিষ মিশিয়ে এদের খাইয়ে দেয়। বিষের যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে কখনো কখনো বনমোরগ নিজের ধারালো নখর দিয়ে নিজেরই শ্বাসনালী ছিড়ে আত্মহত্যা করে। আশল কথা হলো এখনো কিছু কিছু বনমোরগ-মুরগি পার্বত্য সংরক্ষিত বনাঞ্চল, গারো পাহাড়ে টিকে আছে। এদের রক্ষায় বন বিভাগের নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি সাধারণ মানুষ বিশেষ করে আদিবাসীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির বিকল্প নেই।
খাগড়াছড়ি’র বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সারওয়ার আলম ইনকিলাবকে বলেন খাগড়াছড়ির পাহাড়-জঙ্গলে বনের জীবজন্তুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হ্রাস পাওয়ার কথা স্বীকার করে জানান হরিণ, বানর আর শুকর ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো প্রাণী খুঁজে পাওয়া যাবে না। রাঙামাটি ও বান্দরবানে গুটিকয়েক হাতি থাকতে পারে। তিনি এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে বন কমে আসায় মূলত বন্য প্রাণী হারিয়ে যাচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন প্রাণী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ