Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দাওয়াত এসেছে নয়া যমানার

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:৫২ এএম

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ব মুসলিম সমাজের অধঃপতিত রূপ অবলোকন করে অত্যন্ত দরদ ভরা কণ্ঠে গেয়েছিলেন ‘বাজিছে দামামা, বাঁধরে আমামা, শির উঁচু করি মুসলমান! দাওয়াত এসেছে নয়া যমানার ভাঙা কিল্লায় উড়ে নিশান।’ বিদ্রোহী কবির মানস পটে নয়া যমানার যে রূপ রেখা ফুটেছিল, তার শুভ সংবাদ তিনি দিয়ে গেছেন। এই নয়া যমানার বেশকিছু নিদর্শনাবলি কালের খাতায় ইতিহাসের পাতায় জ্বল জ্বল করে জ্বলছে। আরো কিছু নিদর্শন অচিরেই প্রকাশ পাবে।

এর জন্য মুসলমানদেরকে শির উঁচু করে মাথায় পাগড়ি বেঁধে আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে বিশ্বকে কাঁপিয়ে তুলতে হবে। জনৈক মরমী কবি কত সুন্দরইনা বলেছেন : ‘বইসা থাকার দিন গিয়াছে ভাইরে, বইসা থাকার দিন গিয়াছে ভাই’। বসে থাকার দিন ফুরিয়ে গিয়েছে। আর বসে থাকা মুমিন মুসলমানদের জন্য উচিত হবে না। আল কোরআনে মুমিনদের বিজয়-বৈজয়ন্তীর ঘোষণা এভাবে প্রদান করা হয়েছে।

ইরশাদ হচ্ছে : মুমিনগণ সফলকাম ও বিজয়ী হয়ে গেছে। যারা নিজেদের নামাজে বিনয় নম্র। যারা অনর্থক কথা বার্তায় নিলিপ্ত। যারা যাকাত (আদায়ের) পথেই পরিলিপ্ত এবং যারা নিজেদের গোপন অঙ্গকে সংযত রাখে, তবে তাদের স্ত্রী ও মালিকানা ভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না। অতঃপর কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা সীমালঙ্ঘনকারী বলে চিহ্নিত হবে এবং যারা আমানত ও অঙ্গীকার সম্পর্কে হুঁশিয়ার থাকে। এবং যারা তাদেরকে নামাজ সমূহের হেফাজত করে। তারাই (আল্লাহর পক্ষ হতে) উত্তরাধিকার লাভে ধন্য হবে। (শুধু তাই নয়) তারা শীতল ছায়াময় উদ্যানের (জান্নাতুল ফেরদাউসের) উত্তরাধিকার লাভ করবে। (২৩ নং সূরা মু’মিনুন : আয়াত-১-১১)।

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে : মুমিনদের বক্তব্য কেবল এ কথাই, যখন তাদের মধ্যে ফায়সালা করার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে তাদেরকে আহŸান করা হয়, তখন তারা বলে আমরা শুনলাম ও আদেশ মান্য করলাম। তারাই সফলকাম ও বিজয়ী। (২৪ নং সূরা নূর : আয়াত-৫১)।
প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্যকে পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) এভাবে তুলে ধরেছেন। (ক) হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ আমি তার কাছে তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি এবং অন্যান্য মানুষের চেয়ে প্রিয় না হব। (সহীহ বুখারী : হাদীস ১/১৫)।

(খ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত আকাক্সিক্ষত মানের মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না তার নিজের প্রবৃত্তি (খেয়াল খুশি) আমার আনিত আদর্শের অনুসারী হয়। (মিশকাতুল মাসাবিহ : হাদীস ১/১৫)। (গ) হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : মুমিনদের মধ্যে সে ব্যক্তিই ঈমানের পূর্ণতা লাভ করেছে যে নৈতিক চরিত্রের দিক থেকে তাদের মধ্যে সর্বোত্তম। (সুনানে আবু দাউদ : হাদীস ৪/৪৬৮২)।

বস্তুত : মুমিনগণ সৌভাগ্যবান এবং তারা ভালোবাসার প্রতীক। তাদের পরিচিতি প্রদান করে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : (ক) হযরত সুহাইব (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুমিনের অবস্থা বিস্ময়কর প্রকৃতির হয়ে থাকে। তার সকল অবস্থা ও কাজই কল্যাণকর। আর এই সৌভাগ্য মুমিন ছাড়া আর কেউ লাভ করতে পারে না। সে যদি সুখে থাকে তাহলে শুকরিয়া আদায় করে। এ অবস্থা তার জন্য উত্তম। সে যদি দরিদ্র, অসুস্থতা এবং দুঃখ-কষ্টে পতিত হয়, তাহলে ধৈর্য ধারণ করে। এটাও তার জন্য কল্যাণকর। (সহীহ মুসলিম : হাদীস ৪/২৯৯৯)।

(খ) হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : মুমিন প্রকৃতই মহব্বত ও দয়ার প্রতীক। ঐ ব্যক্তির মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই, যে কারো সাথে মহব্বত রাখে না এবং মহব্বত প্রাপ্ত হয় না। (মোসনাদে আহমাদ : হাদীস ১/১৮০)।

আল্লাহর প্রতি সর্বদাই মুমিনের ভয় ও শঙ্কা অব্যাহত থাকে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : মুমিন ব্যক্তি তার গোনাহ সম্পর্কে এতদূর ভীত-সন্ত্রন্ত হয়ে থাকে যে, সে মনে করে যেন কোন পাহাড়ের পাদ দেশে বসে আছে। প্রতিটি মুহূর্তে সে এই ভয় করে যে, পাহাড় তার উপর ভেঙে পড়তে পারে। কিন্তু আল্লাহ দ্রোহী ও পাপিষ্ট লোক গোনাহকে মনে করে একটা মাছির মত, যা তার নাকের ডগার উপর দিয়ে উড়ে গেছে (এবং সে তাকে হাতের ইশারায় তাড়িয়ে দিয়েছে) এই বলে হাদীস বর্ণনাকারী আবু শিহাব নাকের ওপর হাত দ্বারা ইশারা করলেন। (সহীহ বুখারী : হাদীস ৮/৬৩০৮)।

সুতরাং মুমিন মুসলমানদের অযথা সময় নষ্ট করা সমীচীন নয়। দ্বীন ইসলামের খেদমতে জান ও মাল সহযোগে আত্মনিয়োগ করাই এখন সময়ের দাবি। আল্লাহপাক আমাদেরকে তাওফীক এনায়েত করুন, আমীন !

 



 

Show all comments
  • বুলবুল আহমেদ ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:৫৬ এএম says : 0
    নিজে ঈমান আনা এবং শরীয়ত মতো চলা যেমন ফরজ, তেমনি যারা দ্বীন ও শরীয়ত সম্পর্কে অনবহিত, ঈমান ও তাকওয়ার আলোকিত পথের বিষয়ে যারা অনবগত, তাদেরকেও যথাসম্ভব দ্বীন সম্পর্কে অবগতি দান করা এবং সামর্থ অনুসারে দ্বীনের উপর চালানোর চেষ্টা করা সবার উপর ফরজ।
    Total Reply(0) Reply
  • হেদায়েতুর রহমান ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:৫৮ এএম says : 0
    অন্তর্দৃষ্টি ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন অনেক ওলী বুযুর্গের মত হলো, কয়েক যুগ ধরে মুসলমানদের উপর যে বিপদ-মুসীবত আসছে, যে লাঞ্ছনা ও গঞ্জনা তাদের উপর আপতিত হচ্ছে এবং শত দুআ-কালামের পরও যার কোনো প্রতিকার মিলছে না, তার একটি বড় কারণ হলো, আমরা দ্বীনের খেদমত ও দাওয়াত এবং মানুষের এসলাহ ও হেদায়েতের কাজ ছেড়ে দিয়েছি। অথচ এ-কাজের জন্য আমরা বিশেষভাবে আদিষ্ট এবং নবুওয়তের ধারা বন্ধ হওয়ার পর এই কাজের পূর্ণ দায়িত্ব আমাদের কাঁধেই সমর্পিত!
    Total Reply(0) Reply
  • গিয়াস উদ্দীন ফোরকান ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:৫৮ এএম says : 0
    আল্লাহ পাক সকলকে বোঝার তাওফীক দান করুন এবং আসুন, আমরা আজ থেকে আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াত ও খেদমত করার শপথ গ্রহণ করি। তাহলে আল্লাহ পাকও আমাদের সহায় হবেন। কোরআন শরীফে আল্লাহ পাক সাহায্য আর মদদের ওয়াদা করে বলেন, وَلَيَنْصُرَنَّ اللَّهُ مَنْ يَنْصُرُهُ যারা আল্লাহর দ্বীনের খেদত করে, অতি অবশ্যই আল্লাহ পাক তাদেরকে সাহায্য করবেন। সূরা হজ্ব ২২/৪০
    Total Reply(0) Reply
  • পলাশ ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:৫৯ এএম says : 0
    দাওয়াতের কাজ করার ফায়দা এবং না করার ক্ষতি সম্পর্কে বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এক হাদীসে এসেছে, مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى، كَانَ لَهُ مِنَ الْأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ، لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا যে ব্যক্তি মানুষকে সঠিক পথের দাওয়াত দেয়, নেক কাজের প্রতি আহ্বান জানায়, তার কথায় যত মানুষ যত নেক আমল করবে, সে একা সবার সকল আমলের সমান সওয়াব লাভ করবে। অবশ্য এই কারণে আমলকারীর ভাগে কোনো কম পড়বে না। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৭৪
    Total Reply(0) Reply
  • আরমান ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৪:০০ এএম says : 0
    মুমিন মুসলমানদের অযথা সময় নষ্ট করা সমীচীন নয়। দ্বীন ইসলামের খেদমতে জান ও মাল সহযোগে আত্মনিয়োগ করাই এখন সময়ের দাবি। আল্লাহপাক আমাদেরকে তাওফীক এনায়েত করুন, আমীন !
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দাওয়াত

২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন