বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
দেশের প্রায় সর্বত্রই নৈতিক অবক্ষয়ের ভয়াবহ চিত্র অব্যাহতভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। তার ব্যাপকতা ও বিশালতার শেষ নেই। জাতীয় সামাজিক পর্যায়ের রন্ধ্রে রন্ধ্রে স্তরে স্তরে নিত্য তা স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছে। জীবনের প্রথম থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত এমন সব মহাপাপ সংঘটিত হচ্ছে, যার বিবরণ দান করা যেমন কঠিন, অনেক ঘৃণ্য অপরাধের কথা কলমে ধারণ করাও অত্যন্ত লজ্জাস্কর। এসব কিসের আলামত? এককথায় এর জবাব, সমাজ তথা জাতীয় জীবনে ধর্মীয়-নৈতিক অবক্ষয়ের চরম কলঙ্কজনক পরিণতি। সামাজিক অপরাধপ্রবণতার এ করুণ দশা রাতারাতি জন্মলাভ করেনি। সামাজিক অসতর্কতা, অসচেতনতা, অবহেলা, উদাসীনতা এবং ধর্ম-চিন্তার অভাব-অবজ্ঞা প্রভৃতির সুযোগ এবং লাগামহীনতার কারণে এর উদ্ভব ঘটেছে।
এ পর্যায়ে আমরা কোরআন ও হাদীসের আলোকে নৈতিক অবক্ষয়ের বিষয়টি তুলে ধরতে চাই, যাতে প্রমাণিত হবে যে, নৈতিক অবক্ষয় রোধ করে সমাজে নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে সমাজের ভূমিকা কি হওয়া উচিত? প্রত্যেকে যার যার স্থান থেকে ইতিবাচক ভূমিকা সক্রিয়ভাবে পালন করলে তার সুফলের আশা যেমন করা যায়, তেমনি কেউ নেতিবাচক ভূমিকা রাখলে তার কুফলও দেখা দিতে বাধ্য।
এ কথা স্বীকৃত যে, সীমাবদ্ধ জীবন নিয়েই মানুষ। তাই সামাজিক দায়িত্ববোধের পরিচয় সকলকেই দিতে হবে। অপরাধমুক্ত সমাজ গঠন করতে হলে ইসলামের নৈতিকতা ও নীতিমালা অনুসরণ অপরিহার্য। এ সর্ম্পকে কোরআনে যেমন বহু আয়াত রয়েছে, অনুরূপ অসংখ্য হাদীসও বিদ্যমান।
কোরআনের সূরা তাহরীমে আল্লাহ বলেন, ‘হে মোমেনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা কর অগ্নি হতে।’ (আয়াত-৬)। তোমাদের পরিবার-পরিজন বলতে স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, চাকর-নওকর সবাইকে বুঝানো হয়েছে।
একটি বর্ণনা হতে জানা যায়, আয়াতটি নাজিল হবার পর হযরত উমর (রা.) আরজ করলেন : হে আল্লাহর রসূল, নিজেদেরকে জাহান্নামের অগ্নি হতে রক্ষা করার ব্যাপারটি তো বুঝে আসে (যে, আমরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকব এবং খোদায়ী বিধি-বিধান পালন করব) কিন্তু পরিবার-পরিজনদের আমরা কিভাবে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করব?
রসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, এর উপায় এই যে, আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে যেসব কাজ করতে নিষেধ করেছেন, তোমরা তাদেরকে সেসব কাজ করতে নিষেধ করো এবং যেসব কাজ করতে আদেশ করেছেন, তোমরা পরিবার-পরিজনকেও সেগুলো করতে আদেশ করো। এই কর্মপন্থা তাদেরকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে রক্ষা করতে পারবে।
রুহুল মা’আনী এর বরাতে মা’আরেফুল কোরআনে আরো বলা হয়েছে, স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিকে ফরজ কর্মসমূহ এবং হালাল ও হারামের বিধানাবলি শিক্ষা দেয়া এবং তা পালন করানোর চেষ্টা করা প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর ফরজ ।একই সূত্রের বরাতে বলা হয়েছে, জনৈক বুযর্গ বলেন, ‘সেই ব্যক্তি কিয়ামতের দিন সর্বাধিক আজাবে থাকবে, যার পরিবার-পরিজন ধর্ম সর্ম্পকে মূর্খ ও উদাসীন হবে।’
বর্ণিত আয়াতের ব্যাখ্যা হতে স্পষ্ট প্রমাণিত স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি এবং পরিবার-পরিজন ছাড়াও অধীনস্থ চাকর-বাকর তথা অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারী অজ্ঞ-অশিক্ষিত হলে মুসলমান মালিক কর্তৃপক্ষের কর্তব্য, তাদের ইসলামী অনুশাসনগুলো মেনে চলার জন্য উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত করা এবং অন্যায় কর্মকাণ্ড হতে বিরত রাখার চেষ্টা করা। পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের অগ্নি হতে রক্ষা করার প্রথম দায়িত্ব পরিবার প্রধানের এবং পর্যায়ক্রমে অন্যান্যের। সুতরাং, পরিবার-পরিজনকে শুরু থেকে সঠিক তালীম-তারবিয়াত ও দেখভাল করার মূল দায়িত্ব তাদের ওপরেই বর্তায়। তাদেরকে নেক ও সৎ হবার জন্য দোয়া করার পরামর্শও আছে ইসলামে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।