পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে ভাটা। বিভিন্ন সেক্টরে নানা ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনায় আর্থিক খাতের নাজুক অবস্থা। এই সময়ে দেশের বিনিয়োগকারীদের কাছে একমাত্র আশার আলো শেয়ারবাজার। জবাবদিহিতার অভাবে গত ১০ বছরেও বাংলাদেশের শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। তবে দীর্ঘদিনের অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা কাটিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আইনের শাসন এবং জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করায় পুঁজিবাজারে ক্রমান্বয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। বাজারের ধারাবাহিক উত্থানে গত মে মাসে বিশ্বে শীর্ষ অবস্থানে ছিল দেশের পুঁজিবাজার। এরই ধারাবাহিকতায় অন্য বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে ফিরতে শুরু করেছেন।
দীর্ঘদিন থেকে দেশের পুঁজিবাজার ঊর্ধ্বমুখী। তাই দীর্ঘদিন পর পুঁজিবাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীরা খুশি। একই সঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ডিএসই’র ইতিহাসে সাড়ে ১১ বছরের মধ্যে এই প্রথম ৭ হাজার পয়েন্ট অতিক্রম করেছে। করোনার প্রভাব কাটিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসায় ফিরতে শুরু করেছে এবং এর প্রেক্ষিতে পুঁজিবাজারের সূচক আরো উঠবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। আর এ অবস্থায় নিজেদের কাজ সঠিকভাবে না করে বিএসইসি’র কাজে হস্তক্ষেপ করতে চাচ্ছে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের তদারকি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংক। কিছু পলিসিগত বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি’র মতবিরোধের কারণে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে, যা পুঁজিবাজারের চলমান প্রবৃদ্ধি থমকে দেয়ার একটি প্রচেষ্টা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অথচ ব্যাংকগুলোকেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। আবার শেয়ারাবাজারে ছড়ি ঘোরানের চেষ্টা করছে। ঋণ জালিয়াতি, অর্থপাচার ও নানা অনিয়মে জর্জরিত দেশের ব্যাংকিং খাতের এসব অনিয়ম রোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা খুব একটা চোখে পড়ছে না। এমনকি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তদারকির দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অভিযোগ। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের কাজে ক্ষোভ জানিয়েছেন উচ্চ আদালত। আর তখন নিজেদের স্বাভাবিক কাজ বাদ দিয়ে দীর্ঘদিন পর উড়তে থাকা শেয়ারবাজারে নজর পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের।
বিভিন্ন রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষের বিক্ষিপ্ত সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে বিএসইসি’র সাবেক চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, সকল কর্তৃপক্ষকে সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। না হলে এসব বিক্ষিপ্ত সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করবে।
জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আবু আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিন পর সবাই উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে শেয়ার কিনছে। নতুন অনেক বিনিয়োগকারী আসছে।
সূত্র মতে, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ব্যাংক কোম্পানি আইনের বাধা থাকায় তফসিলি ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড এবং ক্যাশ ডিভিডেন্ড পরিশোধের ক্ষেত্রে বিএসইসি’র নির্দেশনা পরিপালন করতে পারবে না। বিএসইসি গত জুনে আইন করে, পুঁজিবাজারের জন্য স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড গঠন করা হবে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অবণ্টিত ও অদাবিকৃত ডিভিডেন্ড দিয়ে। প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকার এই ফান্ড ব্যবহার হবে পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তায়। বিএসইসি’র সাবেক চেয়ারম্যান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এই উদ্যোগে কোনো সমস্যা দেখছেন না। তিনি বলেন, অদাবিকৃত ডিভিডেন্ড বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ব্যবহার করা একটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, তফসিলি ব্যাংকগুলো বিএসইসি’র এই নির্দেশনা অনুসরণ করতে পারবে না।
ডিএসই’র তথ্য মতে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স সম্প্রতি প্রথমবারের মতো ৭ হাজার পয়েন্ট অতিক্রম করে। তখন বিনিয়োগকারী ও বিশ্লেষকরা আলোচনা শুরু করেছিলেন, করোনার প্রভাব কাটিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসায় ফিরতে শুরু করেছে এবং এর প্রেক্ষিতে পুঁজিবাজারের সূচক আরো উঠবে। এমনকি গত ১২ সেপ্টেম্বর ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয়েছিল ৭ হাজার ২৫৮ পয়েন্ট দিয়ে। এরপর ভাবা হয়েছিল নতুন উচ্চতায় যাবে ডিএসইএক্স সূচক। অথচ গতকাল বুধবার লেনদেন শেষে সূচকের অবস্থান ছিল ৭ হাজার ২৪১ পয়েন্টে।
দীর্ঘদিন পর পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। তবে উড়তে থাকা পুঁজিবাজারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি’র মতবিরোধের কারণকে দায়ী করছেন অনেকেই। এমনকি পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও গতিশীলতার লক্ষ্যে যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে দাবি জানিয়েছে বিনিয়োগকারীরা। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে এ দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ। পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়Ñ দীর্ঘ দিনের মন্দাভাব কাটিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে পুঁজিবাজার। বর্তমান বিএসইসি’র সুযোগ্য নেতৃত্ব ও সব অংশীজনের সহযোগিতায় পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়তে শুরু করেছে। বাজার উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংক সব সময়ই বর্তমান বিএসইসিকে সহায়তা করে আসছে। ফলে পুঁজিবাজারের তারল্য সঙ্কট দূর হয়েছে এবং স্থিতিশীল অবস্থায় আছে। এই সহযোগিতা আরো সুদূরপ্রসারী হবে এটাই আমাদের কাম্য। তাই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে পুঁজিবাজার বিষয়ক যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে বিএসইসি বা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পরামর্শ নেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জোর দাবি জানানো হয়েছে। এতে পুঁজিবাজার আরো গতিশীল হবে এবং সরকারের ভাবমর্যাদাও উজ্জ্বল হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।