বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
এ পর্যন্ত আমরা জাদু ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলির যে বিবরণ উপস্থাপন করেছি, তার একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে সহৃদয় পাঠক ও পাঠিকাগণকে ‘আসন্ন দাজ্জাল’ সম্পর্কে সচেতন করা।
দাজ্জালের সকল কর্ম-কাণ্ডই হবে জাদুর খেলা। দাজ্জাল হবে বিখ্যাত জাদুকর। তার জাদুর বেষ্টনী ছিন্ন করে বেরিয়ে আসা অনেকের পক্ষেই অসাধ্য হয়ে পড়বে। বিশেষ করে ইয়াহুদী খৃস্টান, মূর্তিপূজারী ও ইসলাম বিদ্বেষী শ্রেণির লোকেরা দাজ্জালের পক্ষ অবলম্বন করবে এবং নিজেদের শক্তি সামর্থ দ্বারা দাজ্জালকে বিজয়ী করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাবে। সুতরাং এই সঙ্কটময়কালে বিশ্বের সকল মুসলমানের উচিত নিম্নে বর্ণিত বিষয়গুলো ভালোভাবে অনুধাবন করা ও নিজেদেরকে বিপথগামী না করা। অন্যথায় ঈমান হারা বেঈমান হয়ে চিরস্থায়ী জাহান্নামের ইন্ধন হওয়া ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর থাকবে না।
আমাদের সমাজে তাবীজ ব্যবহার করার রীতি বহুকাল ধরে চলে আসছে। তবে, স্মরণ রাখা দরকার যে, তাবীজ এমন জিনিস দ্বারা ভরাট করা যা নাপাক এবং তাবীজ ব্যবহার করাতে যদি শয়তানের সাহায্য কামনা করা হয়ে থাকে, শয়তানের নিকট আবেদন নিবেদন করে করা হয়ে থাকে, তবে তাও শিরক বলে গণ্য হবে।
উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে, সপ্ত সিতারাকে অথবা অন্য নক্ষত্রকে আহ্বান করা, তাদের নিকট আবেদন নিবেদন করা, তাদের উদ্দেশ্যে মানানসই পোষাক সীল, আংটি, চিহ্ন ইত্যাদি ব্যবহার ও অবলম্বন করা কিংবা উল্লেখিত কর্ম জাতীয় কোনো কাজ করাও কুফরী। এটা শিরকের একটা সুবৃৎ দরওয়াজা। কাজেই তা রোধ করা বরং এর মূলোৎপাটন করা একান্ত জরুরি। (তাফসীরে কাবীর : ১/৬১৯ ; আকীদায়ে তাহভিয়্যা ব্যাখ্যা সহ পৃ: ৫০৫)।
আর জাদু ও তাবীজ ব্যবহৃত শব্দাবলি যদি দ্ব্যর্থবোধক হয় বা অস্পষ্ট হয়, যার পরিষ্কার অর্থ-বোধগম্য না হয়, তবে এতে শয়তানের নিকট সাহায্য কামনার সম্ভাবনা থাকায় এটিও নিষিদ্ধ ও হারাম বলে গণ্য হবে। কেননা, যে সকল বাক্যের অর্থ বুঝা যায় না বা যে সকল বাক্য সরল ও পরিচিত নয়, তা না বলাই উচিত। কারণ তাতে গুপ্ত ও লুপ্ত শিরক থাকার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। (আকিদায়ে তাহাভিয়্যা ব্যাখ্যাসহ : পৃ: ৫০৫)।
তবে তাবীজ লিখন ও গড়নে যদি বৈধ বিষয়ের অবলম্বন করা হয় কিন্তু এর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য যদি অবৈধ হয়, তাহলে তাও হারাম ও অবৈধ বলে পরিগণিত হবে। কেননা, খারাপ উদ্দেশ্য বা ক্ষতি সাধনের জন্য জাদু করার নিন্দাজ্ঞাপন করে আল কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, জাদুকরদের ঘৃণ্য কাজের একটি নমুনা হলো এই যে, তারা হারূত-মারূত ফিরিস্তাদ্বয়ের নিকট হতে এমন জিনিস শিক্ষা লাভ করে যার দ্বারা স্বামী-স্ত্রীতে বিচ্ছেদ ও ব্যবধান রচনা করা যায়। (সূরা আল বাকারাহ : আয়াত-১০২)।
মোটকথা, বৈধ উদ্দেশ্যে বৈধ পদ্ধতিতে যদি নেক আমলের মাধ্যমে তাবীজ, ঝাড়-ফুঁক ইত্যাদি কাজে লাগানো হয়ে থাকে, তবে তা বৈধ ও যায়েজ। এতে দ্বিমত পোষণের কোনো অবকাশ নেই। এতদসম্পর্কে বহু প্রমাণ পাওয়া যায়।
যথা (ক) হযরত আমর বিন শোয়াইব তার পিতা, তিনি তার দাদা হতে বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : তোমাদের মধ্য হতে কেউ যদি স্বপ্নে কিছু দেখে ভয় পায় তবে, সে যেন নিম্নের দোয়াটি পাঠ করে ‘বিছমিল্লাহি আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত্ তাম্মাতি মিন্ গাদ্বাবিহি ওয়া ছুয়ি ইকাবিহি ওয়া মিন্ শাররি ইবাদিহি ওয়া মিন শাররিশ্ শাইয়াতীন’। এই দোয়া পাঠ করার পর সে ব্যক্তির কোনো প্রকার ক্ষতি সাধিত হবে না। হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) তার প্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানকে এই দোয়াটি শিখাতেন। আর লিখার বস্তুতে লিখে অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানদের গলায় ঝুলিয়ে দিতেন। (মেশকাতুল মাসাবিহ: ১/২১৭)।
(খ) বিপদ গ্রস্ত ও রোগাক্রান্ত ব্যক্তির জন্য কোরআনুল কারীমের কিছু অংশ অথবা আল্লাহর যিকির পবিত্র বা মুবাহ কালিতে লিখে তা’ ধৌত করত: এর পানি পান করানো যায়েজ। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.) এবং অন্যান্য ইমামগণ এ ব্যাপারে প্রমাণ পেশ করেছেন। (ফাতোওয়ায়ে ইবনে তায়মিয়াহ : ১৯/৬৪)।
(গ) শরীয়ত গ্রাহ্য পন্থায় গলায় তাবিজ ধারণ করা, কাউকে ঝাড়-ফুঁক দেয়া, পাক হস্ত দ্বারা মাসেহ করে দেয়া যায়েজ হওয়ার পক্ষে অনেক হাদীস ও আছার পাওয়া যায়। সুতরাং তা’ যায়েজ হওয়ার দিকটিই অধিকতর সঠিক ও অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য। (ফাতাওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়্যাহ : ১৯/৬৪-৬৫; মিরকাত শরহে মিশকাত : পৃ: ৩১৮-৩২১; ফাতহুল বারী শরহে বুখারী : ১০/১৯৫; শরহুল মাকাসিদ : ৩/৩৩৪)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।