Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুড়িগ্রামের একই বিদ্যালয়ের ৮৫ শিক্ষার্থী বাল্যবিবাহের শিকার

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:০২ পিএম

দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৮৫ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিবাহ হয়েছে। এর ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে এবং শিক্ষকদের মধ্যে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি- দরিদ্রতা, যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতাসহ নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে এ উপজেলায় বাল্যবিবাহের হার বেড়েই চলেছে। জরিপ করে প্রকৃত বাল্যবিবাহ এবং শিশুশ্রমে যাওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা নির্ণয় করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে শিক্ষা কর্মকর্তারা বলেন।

আজ সোমবার সকালে উপজেলার বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গেলে বাল্যবিবাহের বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক মুহা. মতিউর রহমান খন্দকার জানান, তার বিদ্যালয়ের মোট ৩৪৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮৫ জনের বাল্যবিবাহ হয়েছে। এই বিষয়টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি। ওই বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ২, সপ্তম শ্রেণির ১১, অষ্টম শ্রেণির ১৭, নবম শ্রেণির ২৮, দশম শ্রেণির ১৪ ও চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী ১৩ জন বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। করোনা মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার আগে এই বিদ্যালয়ে প্রতিদিন গড়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিলো ৭০-৯০ শতাংশ। বর্তমানে উপস্থিতি ৪০-৫০ শতাংশ।

বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, তারা ১২ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় খোলার প্রথম দিনেই তাদের ১৭ জন বান্ধবীর বিয়ে হওয়ার খবর শুনে। এরপর তাদের সবার মন খারাপ হয়ে যায়। অনেকদিন পর বিদ্যালয় খোলার আনন্দের চেয়ে মন খারাপই বেশি ছিল তাদের। একই প্রতিষ্ঠানের নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়, অনেকদিন পর স্কুল খুললো, সব বান্ধবীর সঙ্গে মজা করবো, আনন্দ করবো। কিন্তু সেটা আর হলো না। স্কুল এসে দেখলাম আমার ২৮ জন বান্ধবী স্কুলে আর আসলো না। খুবই মন খারাপ হলো। পরে জানতে পারি আমার ২৮জন বান্ধবীসহ আমার স্কুলের ৮৫ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিবাহ হয়ে গেছে।

বাল্যবিয়ের শিকার নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর বাবা জানান, আমরা গরীব মানুষ। ভ্যান চালিয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করি। গরীব মানুষের দোষ বেশি। ভালো একটা সম্বন্ধ পেয়ে মেয়েটার বিয়ে দিয়েছি। একই প্রতিষ্ঠানের বাল্যবিবাহের শিকার আরেক শিক্ষার্থীর বাবা জানান, মানুষের সাইকেল মেরামত করে যা পাই তাই দিয়ে কোনরকমে সংসার চলে। দেশে করোনা আসার পর আমরা খুব কষ্টে ছিলাম। কোন সহযোগিতা পাইনি। দেখতে দেখতে মেয়েটাও বড় হয়ে গেল। দুশ্চিন্তার যেন শেষ নেই। তাই একটা ভালো সম্বন্ধ পাওয়ায় আর দেরি করিনি। সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটার বিয়ে দিয়েছি।

এ ব্যাপারে বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহা. মতিউর রহমান খন্দকার সাংবাদিকদের জানান, বিদ্যালয় খোলার পর শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম থাকায় আমরা প্রতিটি শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছি। যেসব শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে গেছে আমরা তাদের বাড়িও যাচ্ছি। ঐসব শিক্ষার্থীরা যাতে স্কুলে আসে সে ব্যাপারে তাদের অভিভাবকদের সচেতন করছি। করোনার কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তারা পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে পড়েছিল। এই সুযোগে পরিবার তাদের বাল্যবিবাহ দিয়েছে। তিনি আরও জানান, আমরা শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করার জন্য কাজ করছি। করোনার আগেই গত দেড় বছরেই স্কুলের ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছি। কিন্তু করোনাকালে খবর না পাওয়ায় গোপনে স্কুলের ৮৫ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিবাহ দেয় তাদের পরিবার।

বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. খয়বর আলী গণমাধ্যমকে জানান, করোনার কারণে আমার ইউনিয়নে বাল্যবিবাহ বেড়েছে। আমরা এজন্য পদক্ষেপ নিচ্ছি। প্রশাসনের সহযোগিতায় পাড়ায়-মহল্লায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে মতবিনিময়সহ সচেতনমূলক প্রচার চালানো হবে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই জানান, বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাল্যবিবাহের তথ্যটি পেয়েছি। এ উপজেলায় মোট ৭৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনসচেতনতা বাড়াতে শিক্ষকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমন দাস বলেন, বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮৫ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিবাহের বিষয়টি শুনেছি। বাল্যবিবাহ কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়, সে বিষয়ে সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন ধরনের প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে আমরা কাজ শুরু করেছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাল্যবিবাহ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->