Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বেদখল ও বিক্রি হচ্ছে বৃহত্তর বগুড়ার পৌনে ২শ’ ওয়াকফ এস্টেটের ভূ-সম্পত্তি

সুষ্ঠু তদারকি নেই ওয়াকফ প্রশাসনের-রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

প্রকাশের সময় : ৯ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে

সুষ্ঠু তদারকির অভাবে জয়পুরহাট ও বগুড়ার ওয়াকফ এস্টেটগুলোর মূল্যবান কাঠামো ও শত শত বিঘার ভূ-সম্পত্তি একের পর এক বেদখল হচ্ছে। তবে যাদের উপর এসব রক্ষার দায়িত্ব সেই ওয়াকফ এস্টেট মোতওয়াল্লীরাও ক্ষেত খাওয়া বেড়া হয়ে এসব বেদখলে মুখ্য ভূমিকায় রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। মোতয়াল্লীদের সহযোগিতা নিয়ে এক শ্রেণির ভূমিদস্যূও ওয়াকফ সম্পত্তিগুলো নামকাওয়াস্তে কেনার নামে মূলত জোর করে দখলও করছে। এরা সরকারকে ফাঁকি দিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকার রাজস্ব। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়া ও জয়পুরহাটে ওয়াকফ’ এস্টেট এর সংখ্যা ১ হাজার ১৮৮টি। ওয়াকফ করা জমির পরিমাণ ৪২ হাজার একর। এর মধ্যে প্রজাবিলি পদ্ধতিতে ওয়ারিশদের মধ্যে বিতরণ করা জমির পরিমাণ ৩৫ হাজার একর। বাকি ৭ হাজার একর জমি ধর্মীয়, সামাজিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে রাখা জমির মধ্যে দুই হাজার একরেরও বেশি বেদখল হয়ে গেছে। ওয়াকফ সম্পত্তির সরকারিভাবে প্রদেয় রাজস্বের অংশের অন্তত ৪০ লাখ টাকা পাওনা পড়ে আছে। এ ব্যাপারে ওয়াকফ প্রশাসনের বক্তব্য যথেষ্ট লোকবলের অভাবে সুষ্ঠু তদারকি সম্ভব হয় না। ধীর গতিতে হলেও তদারকিতে অনিয়ম পাওয়ার পর মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু সরকারি নিয়ম উপেক্ষা করে বিক্রয় অযোগ্য ওয়াকফ সম্পত্তি বেচাকেনার বিষয়ে তাদের কোন সদুত্তর নেই। এই ধরনের বেচাকেনায় ওয়াকফ প্রশাসন কোন মামলা করেছে এমন নজির প্রশাসন দিতে পারেনি। অথচ আইনানুগভাবে সকল ওয়াকফ সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে। তদারকির দায়িত্ব পালন করে সরকারের ওয়াকফ প্রশাসন। মাঠপর্যায়ে একজন পরিদর্শকের অধীনে হাতেগোনা কয়েকজন কর্মচারী নিয়ে চলছে নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম। বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলার ওয়াকফ ভূমি তদারকি করেন একজন মাত্র পরিদর্শক। জানা যায়, ভূমিগ্রাসি চক্রের সঙ্গে ওয়াকফ প্রশাসনের এক শ্রেণির কর্মচারীর সখ্যতা রয়েছে। তারাই বলে দেয় কিভাবে কোন ফাঁকফোকর দিয়ে ওয়াকফ সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে হবে। বগুড়া সদরের এরুলিয়া এলাকায় পীর আজিজুল্লাহ (রহ.) মাজার ওয়াকফ এস্টেটের তিনটি পুকুরসহ প্রায় ১৭ বিঘা জমি বেদখল হয়ে আছে বহুদিন ধরে। দুপচাঁচিয়ার হারুঞ্জা এলাকার দমশের তালুকদার ওয়াকফ এস্টেটের ৬৩ একর জমির মধ্যে প্রায় ২৬ একরই বেদখল রয়েছে বহুদিন যাবত। অভিযোগ রয়েছে, যাদের কাছে সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তারাই দখল করেছে এসব নামে/বেনামে। এই এস্টেটে সরকারি অংশের প্রদেয় রাজস্ব বকেয়া রয়েছে প্রায় চার লাখ টাকা। অবশ্য অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সম্প্রতি এই এস্টেটের মোতওয়াল্লিশীপ বাতিল করে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। গাবতলীর গোড়াদহ এলাকায় ছমির উদ্দিন সরকার ওয়াকফ এস্টেটের ৬১ একর সম্পত্তির মধ্যে প্রায় ৪৫ একরই বেদখল হয়ে গেছে। বগুড়া শহরের বৃন্দাবনপাড়ায় মুন্সি নাসির উদ্দিন মওলা ওয়াকফ এস্টেটের অর্ধেক ভূমিই চলে গেছে দখলদারদের হাতে। তবে সবচেয়ে বেশি দখলের রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে বগুড়ার ঐতিহাসিক নবাব এস্টেটের ওয়াকফ ভূমি ও স্থাপনা। এই এস্টেট তদানীন্তন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী বগুড়ার পূর্বপুরুষের। বংশানুক্রমে তাদের পরিবারের সদস্যরা মোতওয়াল্লীর দায়িত্ব মোটামুটিভাবে পালন করলেও মোহাম্মদ আলী বগুড়ায় ইন্তেকালের পর তার বৈমাত্রীয় ভাই ওমর আলী চৌধুরীর সময়ে শুরু হয় বেচাকেনার পালা। তার মৃত্যুর পর মোহাম্মদ আলীর তিন ছেলে ও এক মেয়ে দায়িত্ব পান মোতওয়াল্লীর। ওয়াকফ এস্টেট বেচাকেনার পালার পর তাদের বসতভিটার অংশ বেচাকেনা শুরু হয়। বসতভিটার ধারে যে বিশাল ভূমি ওয়াকফ করা আছে তার সবই নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিক্রি হয়েছে। দুজন বিড়ি ব্যবসায়ী, একটি এনজিও সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রানার প্রোপারটিজ নামে ঢাকার বড় একটি ব্যবসায়ী গ্রুপ ওয়াকফ জমি কিনে বহুতল মার্কেট নির্মাণ করেছে। গ্রুপটি ২০১০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ৫০ শতাংশ ওয়াকফ ভূমি কিনেছে। জনশ্রুতি আছে, এই ভূমির দাম অন্তত ৫০ কোটি টাকা। দলিল হয়েছে মাত্র ৬ কোটি টাকার। সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিতেই মূলত জমির বিক্রয় মূল্য কম দেখানো হয়েছে। তবে মোহাম্মদ আলী বগুড়ার তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে এক ছেলে মাহমুদ আলীও এক মেয়ে মাহমুদা তাদের বসতভিটার যে অংশটুকু এখনও টিকে আছে তা রক্ষায় সরকারকে অধিগ্রহণের আবেদন জানিয়েছেন। তাদের আবেদনের পাশাপাশি বগুড়ায় সর্বস্তরের মানুষের আন্দোলনের মধ্যেও বগুড়ার তিন নব্য ধনী ব্যক্তি মাত্র ২৭ কোটি টাকায় নওয়াব প্যালেসটি গোপনে কমিশন বসিয়ে কিনে নেন। তবে এর বিরুদ্ধে আবার তীব্র প্রতিবাদ ও আন্দোলন গড়ে উঠলে সরকার এটি গেজেট নোটিফিকেশন করে প্রতœতত্ত্ব¡ অধিদপ্তরের মাধ্যমে অধিগ্রহণ করে নেয়। তবে অধিগ্রহণের পরও এই ঐতিহ্যবাহী নবাব প্যালেসটি তথাকথিত ক্রেতা তিন নব্য ধনীর দখলেই রয়ে গেছে এই ঐতিহ্যবাহী প্যালেসটি সত্যিকার অর্থেই প্রতœতত্ত্ব¡ অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য বগুড়াবাসী প্রধাণমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বেদখল ও বিক্রি হচ্ছে বৃহত্তর বগুড়ার পৌনে ২শ’ ওয়াকফ এস্টেটের ভূ-সম্পত্তি
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ