বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কোনো কোনো পিতামাতা তাদের জীবদ্দশায়ই তাদের সম্পদ শুধু মৌখিক বা লিখিত আকারে বণ্টন করে দেন। যেমন ওই জমি এই ছেলের নামে, অমুক দোকান ওই ছেলের নামে, অমুক ফ্ল্যাট এই মেয়ের নামে, অমুক প্লটটি অমুক মেয়ের নামে ইত্যাদি। কিন্তু প্রত্যেকের অংশ পৃথক পৃথক করে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে উপরোক্ত মৌখিক বা লিখিত ঘোষণার পরও সম্পদ পিতামাতার কব্জাতেই থাকে। এমনও হয় যে, একটি বণ্টনযোগ্য সম্পদ একাধিক সন্তানের নামে লিখে দেওয়া হয়।
যেমন- একটি বড় দোকান বা বাড়ি দুই-তিন সন্তানের নামে লিখে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু প্রত্যেকের অংশ তার কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। মনে রাখতে হবে যে, হস্তান্তর করা ছাড়া শুধু মৌখিক বা লিখিত বণ্টনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা শরীয়তে নেই এবং এভাবে তাদের মালিকানাও প্রতিষ্ঠিত হয় না; বরং তা যথারীতি পিতার সম্পদ বলেই গণ্য হয়। সুতরাং পিতার মৃত্যুর পর মীরাছ বণ্টনের নিয়ম অনুযায়ী পুনরায় তা বণ্টন করতে হবে।
তাই জীবদ্দশায় সম্পদ বণ্টন করতে চাইলে সঠিক পদ্ধতি এই যে, প্রথমে বণ্টনযোগ্য সকল সম্পদ পৃথক পৃথক করে ভাগ করবে। এরপর সন্তানদের হাতে তা হস্তান্তর করবে। আর সম্পদ বিভিন্ন ধরনের হলে কমপক্ষে এসবের চাবি, ডকুমেন্ট বা মালিকানা সার্টিফিকেট ইত্যাদি হস্তান্তর করতে হবে। আরো সহজ ও উত্তম পন্থা এই যে, যিনি জীবদ্দশায় তার সকল সম্পদ বণ্টন করতে চান তিনি প্রথমে মুফতীর কাছ থেকে তার করণীয় বুঝে নিবেন। এরপর সে নিয়মে বণ্টন করবেন। যেন তার এই বণ্টনটি শরীয়তের দৃষ্টিতেও গ্রহণযোগ্য হয়।
যাইহোক, মেয়েকে তার প্রাপ্য হিস্যা থেকে কম দেওয়া বা একেবারেই না দেওয়া শরীয়তের দৃষ্টিতে জুলুম ও নাজায়েয। হাদীস শরীফে আছে, যে ব্যক্তি তার ওয়ারিশকে মীরাছ থেকে বঞ্চিত করে আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের অংশ থেকে বঞ্চিত করবেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা : ১৬/২১৫)।
নারীর প্রতি এই অবিচার মূলত জাহেলি যুগ থেকে চলে আসা ভ্রান্ত চিন্তারই কুফল। জাহেলি যুগে আরবের কাফিররা কন্যাসন্তানকে কোনো কিছুই মনে করত না। এমনকি তাদেরকে বাঁচার অধিকারটুকু দিতেও প্রস্তুত ছিল না। আর এখন মুসলমানরাও মেয়েদেরকে মীরাছ থেকে বঞ্চিত করে। এমনকি জীবদ্দশায় সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রেও তাদেরকে বঞ্চিত করে।
বিয়েশাদিতে প্রথাগত সামান্য কিছু ব্যয় করেই মনে করে যে, তাদের হক আদায় হয়ে গেছে। এখন অবশিষ্ট সম্পদে তাদের কোনো অধিকার নেই, এতে শুধু পুত্রদের অধিকার। এই চিন্তা ও রীতি সম্পূর্ণ ভুল; বরং পিতার সম্পদে পুত্র-কন্যা উভয়ের অধিকার রয়েছে। সুতরাং তাদের সাথে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করা জরুরি।
আর আগেও বলা হয়েছে যে, সন্তানের প্রয়োজনের কারণে হাদিয়া-উপহারের ক্ষেত্রে কম-বেশি করতে কোনো দোষ নেই। তাই কোনো মেয়ে যদি অভাবী হয়, যার আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন, আর ছেলে স্বচ্ছল, প্রয়োজনের সকল কিছুই তার আছে, এ অবস্থায় পিতা যদি মেয়েকে কিছু বেশি দেন তাহলে কোনো দোষ নেই। তবে সকলেই যদি অভাবী হয় কিংবা আর্থিক দিক থেকে সকলের অবস্থা এক ধরনের হয় তাহলে তাদের মাঝে সমতা রক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে কম-বেশি করবে না।
মোটকথা, শরীয়তের অনেক বিধান রয়েছে, যে সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান খুবই সীমিত। এজন্য ইলমে দ্বীন অর্জনের চেষ্টা করা সকলের জন্য অপরিহার্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।