বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
এ থেকে আরও জানা যায় যে, ফেরাউনী জাদুকরদের জাদু ছিল এক প্রকার নজরবন্দি, যা মেসমোরিজমের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে যায়। তাদের লাঠি ও রশিগুলো দর্শকদের দৃষ্টিতে নজর বন্দির কারণে সাপ রূপে দৃষ্টিগোচর হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এগুলো সাপ হয়নি। অধিকাংশ জাদু এরূপই হয়ে থাকে।
উদ্ভূত পরিস্থিতি অবলোকন করে মূসা (আ.)-এর মধ্যে ভয় ও ভীতির সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু এ ভয়কে তিনি মনের মধ্যে গোপন রেখেছিলেন প্রকাশ হতে দেননি। এ ভয়টি যদি প্রাণের ভয় হয়ে থাকে, তাহলে মানবতার খাতিরে এরূপ হওয়া নবুওয়াতের পরিপন্থী নয়। কিন্তু বাহ্যত : বুঝা যায় যে, এটা প্রাণের ভয় ছিল না।
বরং তিনি আশঙ্কা করছিলেন যে, এই রাজকীয় বিরাট সমাবেশের মধ্যে যদি জাদুকররা জিতে যায়, তাহলে নাবুওয়াতের দাওয়াতের উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হতে পারবে না। এ কারণেই এর জওয়াবে আল্লাহ পাকের পক্ষ হতে ঘোষণা করা হয়েছে হে মূসা! তুমি ভয় করো না। এতে আশ্বাস দেয়া হয়েছে যে, জাদুকররা জিততে পারবে না। তুমিই বিজয় ও প্রাধান্য লাভ করবে। এভাবে মূসা (আ.)-এর উপরোক্ত আশঙ্কা দূরীভ‚ত করা হয়েছে।
তারপর হযরত মূসা (আ.)-এর বিজয়কে ত্বরান্বিত করে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, তোমার ডান হাতে যা আছে, তা নিক্ষেপ কর। এর দ্বারা মূসা (আ.)-এর লাঠিকে বোঝানো হয়েছে। কিন্তু তা পরিষ্কার উল্লেখ না করে ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে যে, তাদের জাদু অসার ও মূল্যহীন, এজন্য পরোয়া করার দরকার নেই। বরং তোমার হাতে যা আছে তাই নিক্ষেপ কর। এটা তাদের সাপগুলোকে গ্রাস করে ফেলবে। নির্দেশ মোতাবেক তাই হলো।
মূসা (আ.) তাঁর লাঠি নিক্ষেপ করতেই তা একটি বিরাট অজগর সাপ হয়ে জাদুর সাপগুলোকে গিলে ফেলল। তখন জাদুবিদ্যা বিশেষজ্ঞ জাদুকরদের বুঝতে বাকি রইল না যে, এ কাজ জাদুর জোরে হতে পারে না, বরং এটা প্রকৃতই মূসা (আ.) এর মুজেযা যা একান্তভাবেই আল্লাহপাকের কুদরতে প্রকাশ পায়। তাই তারা সেজদায় পড়ে গেল এবং ঘোষণা করল : আমরা মূসা (আ.) ও হারুন (আ.)-এর প্রতিপালকের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলাম। এই বলে তারা সেজদাহ-এ লুটিয়ে পড়ল। (তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন : ১/৮৫৮; সউদী আরব সংস্করণ ; ১৪১৩ হি:)।
স্মরণ রাখা উচিত যে, মহান আল্লাহ হচ্ছেন খালিক বা ¯্রষ্টা। তিনি ভালো-মন্দ, উত্তম-অধম বলতে যা বোঝায় এর সব কিছুই সৃষ্টি করেছেন। যা ভালো এবং উত্তম তা গ্রহণ করার জন্য তিনি হুকুম করেছে এবং যা মন্দ এবং অধম তা বর্জন করতে নির্দেশ করেছেন। এর জন্য বান্দাহকে আকল জ্ঞান, শক্তি-সামর্থও প্রদান করেছেন। এর দ্বারা বান্দাহকে পরীক্ষা করাই তার উদ্দেশ্য। আর জাদু কররা স্রষ্টা নয়। বরং তারা ফায়িল অর্থাৎ কাজের কর্তা ও কাসিব অর্থাৎ অর্জনকারী। তারা এমন বিষয় শিখে যা তাদের ও মানুষের ক্ষতিকর বা কল্যাণকর নয়। আর তারা ভালো করেই জানে যে, যারা মন্দ ও অধমকে পছন্দ করবে তাদের জন্য আখেরাতে কোনো অংশ নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।