বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
এ ব্যাপারে অধিকতর সঠিক কথা হল এই যে, দুটি বস্তুর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পূর্ব শর্ত হলো উভয়ের মধ্যে মিল হওয়া ও পারস্পরিক সহযোগিতা স্থাপিত হওয়া। যাদুকরদের বদ আমলের জন্য জ্বিন ও শয়তানেরা তাদেরকে সাহায্য করে এবং তাদের কাজ সমাধা করে দেয়। যাদুর সবটাই শয়তানী কাজ কারবার। এহেন শয়তানী কার্যক্রম যতই প্রসার লাভ করবে, মানুষের ঈমান ও আমল ততই বিনষ্ট হতে থাকবে। এহেন ক্ষতিকর পন্থার বিলুপ্তি যতই তাড়াতাড়ি হবে ততই মঙ্গল।
যাদু মূলত : তামার ওপর স্বর্ণের রং তুল্য প্রতারণা ও ফাঁকিবাজি কাজ-কারবার। ধোকা দেয়া, কল্পনায় প্রভাব ফেলাই হলো-এর প্রধান বৈশিষ্ট্য। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মতে যাদুর অস্তিত্ব আছে। অধিকাংশ উম্মত এ মতই পোষণ করেন। কিন্তু যাদুর আমল করা, অন্যের ওপর যাদু করা কুফুরি কর্ম। ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেছেন : যাদু কল্পনায় প্রভাব বিস্তার করে, প্রতারণা করে, অসুস্থ করে তোলে, কোনো কোনো সময় প্রাণ নাশ করে। (তাফসীরে বাগাভী : ১/৯৯)।
মোটকথা, যাদু ও দৃষ্টিদোষ সত্য। এর দ্বারা মৃত্যু পর্যন্ত সংঘটিত হতে পারে। যাদুর দ্বারা সুস্থ মানুষ অসুস্থ হতে পারে। যাদু মানুষের অন্তরে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে মানসিক গতি ও ঝোক পরিবর্তন করতে পারে। এমনকি যাদুর দ্বারা অন্যকে হত্যা করাও সম্ভব।
যাদুর কতিপয় কুফুরি বাক্য খুবই ক্রিয়াশীল। অনেক সময় শুধু যাদুর বাক্যের ধাক্কাতেই মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। আল্লামা বাগাভী (র.) লেখেন, যাদুর বাক্যে কিছু লোক প্রাণ পর্যন্ত হারিয়েছে। যাদুর কিছু কফুরি মন্ত্র কঠিন রোগের মতো মানুষের দেহে দারুণভাবে প্রভাব বিস্তার করে।
আল কোরআনের ২০ নং সূরা ত্বাহা-এর মধ্যে ইরশাদ হয়েছে : তারা (যাদুকররা) বলল : হে মূসা! হয় তুমি নিক্ষেপ করো, না হয় আমরা প্রথমে নিক্ষেপ করি। মূসা বলল : বরং তোমরাই নিক্ষেপ করো। তাদের যাদুর প্রভাবে হঠাৎ তাঁর মনে হলো যেন তাদের রশিগুলো ও লাঠিগুলো ছুটাছুটি করছে। অতঃপর মূসা মনে মনে কিছুটা ভীতি অনুভব করল। (আল্লাহ বলেন) আমি বললাম : ভয় করো না, তুমিই বিজয়ী হবে। তোমার ডান হাতে যা আছে (লাঠি) তা তুমি নিক্ষেপ করো। এটা যা কিছু যাদুকররা করেছে তা গ্রাস করে ফেলবে। তারা যা করেছে, তাতো কেবল যাদুকরের কলা কৌশল। যাদুকর যেখানেই থাকুক, কখনো সফল হবে না। অতঃপর যাদুকররা সেজদায় পড়ে গেল। তারা বলল : আমরা হারুন ও মূসার পালনকর্তার প্রতি ঈমান আনয়ন করলাম। (সূলা ত্বাহা : আয়াত ৬৫-৭০)।
উল্লিখিত আয়াতে কারীমাগুলোর অর্থ ও মর্ম হতে সুস্পষ্টভাবে জানা যায় যে, যাদু দেহের ওপর রোগব্যাধি, মরণ ও মস্তিষ্ক বিকৃতি ইত্যাদি রূপে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এর দ্বারা দেহ ও মনের ওপর কথা বা মন্ত্রের তাছির বা প্রভাব পতিত হয়। মানুষ অনাকাক্সিক্ষত কিছু দেখে বা শুনে জ্বরাক্রান্ত হয়ে পড়ে। কিছু কিছু লোক যাদুকরদের উচ্চারিত কুফুরী বাক্যের ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছে। সুতরাং যাদু এমন অদৃশ্য বস্ত ও রোগ স্বরূপ যা মানব দেহে ক্রিয়াশীল হয়ে থাকে। (তাফসীরে বাগাভী : ১/৯৯)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।