Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

কু-প্রস্তাবের রাজি না হলেই মহিলা শিক্ষিকাদের বিতাড়ন! রূপগঞ্জে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ

প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোঃ খলিল সিকদার রূপগঞ্জ থেকে : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া পূর্ণবাসন কেন্দ্রের নবকিশলয় হাই স্কুল এন্ড গার্লস কলেজের প্রধান শিক্ষক নজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগ উঠেছে। শুধুই তাই নয়, নজিবুর রহমানের কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বেশ কয়েকজন মহিলা শিক্ষিকাকে প্রতিষ্ঠান থেকে বিতাড়িত হতে হয়েছে। বিভিন্ন অভিযোগে শিক্ষা শিক্ষার্থী, শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও এলাকাবাসী নজিবুর রহমানের অপসারণ দাবি করলেও প্রভাবশালীদের মদদে এখনও তিনি বহাল তবিয়তে রয়েছেন। নজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বেশ কয়েকটি অভিযোগ করা করা হলেও তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লেখা-পড়া মান কমে গেছে। প্রধান শিক্ষকের ব্যবহারে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। এছাড়া বেশ কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারী না থাকলেও নামে-বেনামে কাগজে-কলমে তাদের হাজিরা দেখানো হয়েছে। এদের নামে প্রধান শিক্ষক লাখ লাখ উত্তোলন করে আতœসাত করেছেন।
জানা গেছে, ১৯৭৪ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙ্গা ভূমিহীন, ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভাসমান ও ছিন্নমুল জনগণকে ওয়াসার জমিতে পূর্ণবাসন করা হয়। আর চনপাড়া পূর্ণবাসন কেন্দ্রের ৪০ হাজার জনগণের জন্য ১৯৭৫ সালে নবকিশলয় হাই স্কুল এন্ড গার্লস কলেজ নামে একটি বে-সরকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। আর এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠাতা করেন, ওয়ার্ল্ড ভিশন অব বাংলাদেশ নামে একটি বিদেশী সাহায্য সংস্থ্যা। প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে প্রথম প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন, মালেক মিয়া। এর পরে ছিলেন মল্লিকা বাউল নামে অপর আরো এক জন শিক্ষক। ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত নবকিশলয় হাই স্কুল এন্ড গার্লস কলেজ নামে প্রতিষ্ঠানটি ভালো চলছিলো। পরে ১৯৮২ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন নজিবুর রহমান।
অভিযোগ রয়েছে, নজিবুর রহমান যোগদানের পর থেকেই বিভিন্ন ভাবে অনিয়ম ও দূর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মহিলা শিক্ষিকাদের তিনি কু-প্রস্তাব দিতে শুরু করেন। তার দেয়া কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ২০০২ সালে বিতারিত করা হয় তখনকার সহকারী প্রধান শিক্ষিকা আছমা বেগমকে। ২০১২ সালে চাকুরি থেকে বিদায় নিতে হয় সহকারী শিক্ষিকা আফরোজা পারভিনকে, ১৯৮৮ সালে বিদায় নিতে হয় সহকারী শিক্ষিকা জাসমিন আক্তারকে। নিজের পছন্দ মতো ও তার অনুগত শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে। বর্তমান সহকারী প্রধান শিক্ষিকা আখতারুন নেছারকেও বিভিন্ন ভাবে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছেন। এতে করে আখতারুন নেছাও এর এসবের প্রতিবাদ জানান। এতে করে এখন আখতারুন নেছাকে স্কুল থেকে বিতারিত করার বিভিন্ন ভাবে পায়তারা করা হচ্ছে। এসব ব্যপারে শিক্ষিকা আখতারুন নেছা শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরের অভিযোগও দায়ের করেছেন।
প্রধান শিক্ষক নজিবুর রহমানের যোগসাজসে প্রায় ২২ বছর আগে তার মনোনীত লোকদের দিয়ে গঠন করা হয়েছিলো নবকিশলয় হাই স্কুল এন্ড গার্লস কলেজের পরিচালনা কমিটি। গত ২২ বছরে আর কোন কমিটি গঠন করা হয়নি। ওই কমিটি দিয়ে তেমন কোন কার্যক্রম চলছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন করে কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকসহ এলাকাবাসী।
এছাড়া নাসরিন আক্তার নামে একজন শিক্ষিকাকে দেখিয়ে বেতন-ভাতা উঠিয়েছেন। অথচ এই নামে কোন শিক্ষক ছিলোনা। আজিজা বেগম নামে এক শিক্ষিকা স্কুল থেকে চলে যায়। কিন্তু নাসরিন আক্তারকে হাজিরা দেখিয়ে ১০ বছরের বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন নজিবুর রহমান। হালিম মোল্লা ও জনু মোল্লা নামে দুই এনজিও কর্মীকে স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী দেখিয়ে বেতন-ভাতা উত্তোলন করা হয়। আনোয়ার হোসেন নামে এক চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীকে স্কুল থেকে বের করে দিয়ে তার স্বাক্ষর জাল করে বেতন-ভাতা উঠানো হয়। এছাড়াও কবির হোসেন, মাফুজার রহমান, রোকসানা বেগম, আলতাফ হোসেন, গোলাম কিবরিয়া, মকবুল হোসেন, আবু বক্কর সিদ্দিকের এরিয়া বিল আতœসাত করেন প্রধান শিক্ষক নজিবুর রহমান। এ ধরনের দূর্নীতির অভিযোগের শেষ নেই। এভাবে অনিয়ম ও দূর্নীতি করে গত ৩৪ বছরে নজিবুর রহমান বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রকল্পে আড়াই কাঠার প্লট রয়েছে, মাতুয়াইলে ৫ কাটার উপর বিলাস বহুল বাড়িসহ একাধিক স্থানে গাড়ি-বাড়ি রয়েছে। চনপাড়া পূর্ণবাসন কেন্দ্রসহ আশ-পাশের এলাকায় লাখ লাখ টাকা সুদের উপর টাকা ছেড়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছেন। এভাবে তিনি ব্যাংক ব্যালেন্সসহ কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন বলেও চাউড় উঠেছে। নবকিশলয় হাই স্কুল এন্ড গার্লস কলেজের প্রধান শিক্ষক অভিযুক্ত নজিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দীক নুরে আলম বলেন, শিক্ষক নজিবুর রহমানের ব্যপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত হয়েছে। এ ব্যপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ই ব্যবস্থা গ্রহন করবে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা ইসলাম বলেন, বিষয় গুলো জেনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ