পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। তবে অগ্রগতির সাথে বৈশ্বিক বাজারে ব্র্যান্ডিংয়ে দেশ পিছিয়ে রযেছে। তিনি বলেন, আমরা ব্র্যান্ডিংয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছি। কিছুদিন আগে আমরা আমেরিকাতে চারদিনের একটা রোড শো করেছি, সেখানেও প্রবাসীসহ অন্যরা বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিংয়ে পিছিয়ে থাকার কথা বলেছেন।
রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের (আইএফসি) সহযোগিতায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২১’ এর প্রাকপ্রস্তুতি শীর্ষ সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্ভাবনা তুলে ধরে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে আগামী নভেম্বরে বসছে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন। আগামী ২৮ ও ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডার এই আয়োজনের সহযোগী হিসাবে থাকছে বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন আইএফসি। এর আগে সর্বশেষ বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৬ সালে তখনকার বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের অধীনে। ওই বছরই বিনিয়োগ বোর্ড ও বেসরকারীকরণ কমিশনকে একীভূত করে গঠিত হয় বিডা। বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠিত হওয়ার পর এই প্রথম দেশের মাটিতে এ ধরনের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। ২০২০ সালে এ সামিট হওয়ার কথা থাকলেও মহামারীর কারণে তা পিছিয়ে যায়। আয়োজকরা জানিয়েছেন, সম্মেলনের কিছু অংশ শারীরিক উপস্থিতিতেই হবে। বাকিটা হবে ‘ভার্চুয়ালি’। তবে মহামারী পরিস্থিতির উন্নতি হলে রাজধানীর হোটেল র্যাডিসন ব্লুতে অনুষ্ঠেয় এ আয়োজনের পরিকল্পনায় পরিবর্তন আসতে পারে।
লোগো উন্মোচন অনুষ্ঠানে সালমান এফ রহমান বলেন, সম্প্রতি বিদেশের মাটিতে রোড শো ও অন্যান্য বিনিয়োগ বিষয়ক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে যেটা বুঝতে পেরেছি, বাংলাদেশের অর্থনীতি যতটা এগিয়েছে, এখানে বিনিয়োগ পরিবেশের যতটা উন্নতি হয়েছে, সেই তুলনায় প্রচার হয়নি। এই সামিটের প্রথম উদ্দেশ্য থাকবে বিনিয়োগকারীদের মাঝে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের সক্ষমতা তুলে ধরা।
তিনি বলেন, এই সম্মেলনের দ্বিতীয় উদ্দেশ্য থাকবে বিদেশি, দেশি, প্রবাসী কিংবা দেশ-বিদেশি যৌথ বিনিয়োগ নিয়ে আসা। বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে ব্যবসা বাণিজ্যের যে রকম অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে সুযোগগুলো আমরা নিতে পারিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। সম্মেলনে কয়েকটি প্ল্যানারি সেশনের পাশাপাশি খাতভিত্তিক কারিগরি অধিবেশন হবে। সেখানে তথ্য প্রযুক্তি, তৈরি পোশাক, ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড ইলেক্ট্রিক শিল্প, কৃষি, চামড়া, ওষুধ শিল্প, স্বাস্থ্য, পরিবহনসহ মোট ১২টি খাত নিয়ে আলোচনা হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, এখন আমাদের এগিয়ে যাওয়ার সময়, গত ১২ বছরে আমাদের আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন বিস্ময়কর, এখন বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশকে তুলে ধরার সময়, আমাদের ইপিজেডগুলো বিশ্বমানের বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত। এসময়ে তিনি বিনিয়োগ সম্মেলনের মাধ্যমে অধিকতর বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিনিয়োগ বিকাশের জন্য, আমরা বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশ্বমানের বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ তৈরি ও সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করেছি, যার ফলে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে অপার সম্ভাবনাময় লাভজনক বিনিয়োগের দেশ। ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার্স অফ কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই)- এর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আসন্ন বিনিয়োগ সম্মেলনের মধ্যমে যৌথ ও বিদেশী বিনিয়োগ বহু অংশে বৃদ্ধি পাবে। যার ফলে একই সাথে দেশী বিনিয়োগকারীরাও লাভবান হবেন।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আইএফসি এ আয়োজনের অর্থায়ন করবে। বিডা সেখানে এক কোটি টাকার মত খরচ করবে বলে প্রাথমিকভাবে আমরা চিন্তা করছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দ্রুতবর্ধনশীল উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশ। বাংলাদেশের এই দ্রুত বর্ধনশীল এবং স্থিতিশীল অর্থনীতিতে অফুরন্ত বিনিয়োগের সুযোগ প্রদর্শিত করতেই বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২১ আয়োজন করা হচ্ছে। করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে সামিটটি শারীরিক ও ভার্চুয়াল দুই মাধ্যমেই অনুষ্ঠিত হবে যা কার্যকর জনসংযোগ, মতবিনিময় এবং অংশীদারিত্বের সুযোগ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে উচ্চ বিকাশমান খাতগুলোতে বিনিয়োগ আকর্ষণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। সামিটে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় এবং বিদেশি বিনিয়োগকারী, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থা, দেশি-বিদেশি কূটনৈতিক মিশন, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ, বিদেশি এবং স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। সামিটে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, প্লেনারি অধিবেশন, খাতভিত্তিক কারিগরি অধিবেশন এবং সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। প্রতিযোগিতামূলক বিনিয়োগ পরিবেশ শীর্ষক একটি প্লেনারি অধিবেশন আয়োজন করা হবে। খাতভিত্তিক কারিগরি অধিবেশনগুলো (১২টি) হলোÑ তথ্য প্রযুক্তি ও ৪র্থ শিল্প বিপ্লব, তৈরি পোষাক শিল্প, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদন শিল্প, কৃষি, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ঔষধ শিল্প ও স্বাস্থ্য, পরিবহণ ও লজিস্টিকস, বিদ্যুৎ/জ্বালানি/অবকাঠামো খাত, পুঁজিবাজার, আর্থিক খাত এবং ব্লু ইকোনমি। এছাড়াও দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সংযোগ ঘটিয়ে দেয়ার জন্য বিটুবি যোগাযোগের ব্যবস্থা রাখা হবে।
পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটির সিইও সুলতানা আফরোজ, বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালে আইএফসির ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ম্যানেজার নুজহাত আনোয়ার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।